Friday, July 14, 2023

44>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(2খন্ড)ok কৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি।(২ খন্ড)

 44>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(2খন্ড)ok কৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি।(২ খন্ড)   (1 to 31)

★★★  অন্যান্য গান  ★★★


●1>আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে

●2>আমার মন-ভ্রমরা

●3>আমার মায়ের নামটি দয়াময়ী

●4>আমার সর্ব অঙ্গে

●5>আমার সাধ না মিটিল

●6>আমায় একটু জায়গা দাও

●7>আমায় দে মা পাগল ক’রে

●8>আমায় পার কর হে

●9>আমি মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

●10>আমি সব ছেড়ে মা

 ●11>আর কত ঘুরাবি শ্যামা

●12>আর কবে দেখা দিবি মা

●13>আয় মা সাধন-সমরে

●14>ইচ্ছাময়ী তারা

●15>এ মায়া প্রপঞ্চময়

●16>একতারাতে বেঁধে দিলে

●17>একবার ব্রজে চলো

●18>একবার বিরাজো গো মা

●19>ওদিকে নিমাই চলে

●20>ওদের মতো বলব না মা

●21>কতদিনে হবে

●22>কানু কহে, রাই.

●23>কালী ব’লে ডাকব না আর

●24>কালী বলো তারা বলো

●25>কী দিয়ে করি গো পূজা

●26>কোথা ভবতারা

●27>কোন রূপে মা

●28>গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি

●29>গুরুদেব দয়া করো

●30>গোবিন্দ গোকুলানন্দ

●31>জয় গুরু নিত্যানন্দ


==================

★★★  অন্যান্য গান  ★★★

 

●1>আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে

দে মা চৈতন্যময়ী,

তোর ভাব-সাগরে ভেসে আমি

হব মা তোর পদাশ্রয়ী।


অজ্ঞান মোর স্বভাব থেকে,

তোর ভাবে তুই না মা ডেকে-

অজ্ঞান মোর স্বভাব থেকে,

তোর ভাবে তুই না মা ডেকে।

জ্ঞানচক্ষু মেলে দেখি,

জ্ঞানচক্ষু মেলে দেখি –

কেমন তুই জ্ঞানদাময়ী।

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে,

দে মা চৈতন্যময়ী।


তোর ভাবের খেলা দিয়ে,

দে আমার যা কিছু সব অভাব মিটিয়ে,

কুতূহল মোর এ জীবনে,

নিয়ে নে মা তোর ও চরণে-

কুতূহল মোর এ জীবনে,

নিয়ে নে মা তোর ও চরণে।

মহানন্দে যাই চলে মা,

মহানন্দে যাই চলে মা –

হয়ে সর্ব-রিপুজয়ী।

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে,

দে মা চৈতন্যময়ী,

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে,

দে মা চৈতন্যময়ী।


 ===================

●2>আমার মন-ভ্রমরা

আমার মন-ভ্রমরা বেড়ায় মেতে

কালী নামের কমল ছুঁয়ে,

কালী-কালী জপ ক’রে মোর

মনের কালি যাবে ধুয়ে।


কালী আমার নামেই কালো

ত্রিজগতে বিলায় আলো,

আমার ভক্তিজবা আপনি ফুটে

রাঙা পায়ে পড়লো নুয়ে,

কালী-কালী জপ ক’রে মোর

মনের কালি যাবে ধুয়ে।


এ সংসারে ভাবনা আমার

সোঁপেছি ওই পদে শ্যামা,

যেমন মায়ের মুখে তাকায় শিশু

আনন্দে মা’র কোলে শুয়ে,

কালী-কালী জপ ক’রে মোর

মনের কালি যাবে ধুয়ে।

=====================

 

●3>আমার মায়ের নামটি দয়াময়ী

আমার মায়ের নামটি দয়াময়ী

ভোলানাথ বাবার নাম,

যেখানে মা কোল পেতেছে

সে আমার কৈলাসধাম।


কাজ কি আমার তীর্থে গিয়ে

ঘুরব কেন গয়া-কাশী,

আমার হৃদিপদ্মে আলো ক’রে

দাঁড়িয়ে আছেন এলোকেশী,

পদতলে ভক্তিভ্রমর

নাম জপিছে অবিরাম।


মন্ত্র-তন্ত্র জানি নে যে

শাস্ত্র পাঠে নেই কো রুচি,

সদানন্দে বিভোর হয়ে

মায়ে-পোয়ে সুখে আছি,

আকুল হয়ে ডাকলে ‘পরে

মা কখনো হয় কি বাম।


 ======================

●4>আমার সর্ব অঙ্গে

মা গো –

আমার সর্ব অঙ্গে লিখে দিও

কালী কালী নাম,

কালী ছাড়া মোর জীবনের

কি আর আছে দাম।


যে দিন আমি জন্মেছিলাম

মা মা বলে ডেকেছিলাম,

আবার অন্তিমকালে কালী ব’লে

যাব ছেড়ে এই ধরাধাম।


কিছু তো নেই আমার ব’লে

সবই দিলাম চরণতলে,

এবার ওপারে যাবার বাসনা, মা-

পুরাও তুমি সেই মনস্কাম,

কালী ছাড়া মোর জীবনের

কি আর আছে দাম,

কালী কালী নাম –

আমার সর্ব অঙ্গে লিখে দিও

কালী কালী নাম।


 =====================

●5>আমার সাধ না মিটিল

আমার সাধ না মিটিল

আশা না পুরিল

সকলই ফুরায়ে যায় মা,

জনমের শোধ ডাকি গো মা তোরে

কোলে তুলে নিতে আয় মা।


পৃথিবীর কেউ ভালো তো বাসে না

এ পৃথিবী ভালো বাসিতে জানে না,

যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি

সেথা যেতে প্রাণ চায় মা।


বড়ো দাগা পেয়ে বাসনা ত্যেজেছি

বড়ো জ্বালা সয়ে কামনা ভুলেছি,

অনেক কেঁদেছি কাঁদিতে পারি না

বুক ফেটে ভেঙে যায় মা।


 ====================

●6>আমায় একটু জায়গা দাও

আমায় একটু জায়গা দাও,

মায়ের মন্দিরে বসি,

আমি অনাহুত একজন

অনেক দোষেতে দোষী।


আমি সবার পিছনে থাকবো

শুধু মনে মনে মাকে ডাকবো,

কারো কাজে বাধা হ’লে

আমায় সাজা দিও যত খুশী।


ভেবো না হঠাৎ সামনে গিয়ে

মায়ের চরণ ছুঁয়ে দেবো,

দূর থেকে শুধু চোখের জলেতে

মা’র রাঙা পা ধুয়ে দেব।


শুধু আরতি যখন করবে

মা’র পূজা-দীপ তুলে ধরবে,

আমাকে দেখতে দিও

আমার মায়ের একটু হাঁসি।


 ===================

●7>আমায় দে মা পাগল ক’রে

আমায় দে মা পাগল ক’রে

আমার কাজ নাই মা জ্ঞানবিচারে।


তোমার প্রেমের সুরা, পানে কর মাতোয়ারা

ও মা, ভক্ত-চিত্ত-হরা ডুবাও প্রেমসাগরে।


তোমার এই পাগলাগারদে

কেহ হাসে, কেহ কাঁদে,

কেহ নাচে আনন্দভরে।


ঈশা-মুশা-শ্রীচৈতণ্য প্রেমভরে অচৈতন্য,

হায় কবে হব মা ধন্য মিশে তার ভিতরে।


স্বর্গেতে পাগলের মেলা

যেমন গুরু তেমনি চেলা,

প্রেমের খেলা কে বুঝতে পারে।


তুমি প্রেমে উন্মাদিণী, উমা পাগলের শিরোমণি,

প্রেমধনে কর মা ধনী কাঙাল প্রেম-দাসেরে।


 ===================


●8>আমায় পার কর হে

আমায় পার কর হে মাঝি মশয়

আমি যাত্রা করে বসে আছি (মাঝি হে )

খেয়া-ঘাটে অনেক-ক্ষণ হয়।।


দিব আমি খেয়ার কড়ি

কাঙাল বলে না কর ভয় (মাঝি হে )

যদি আসবার সময় পেয়ে থাকো

দিব কড়ি যাবার সময়।।


বেলা গেল সন্ধ্যা হল

দক্ষিণে মেঘ তুফানের ভয় (মাঝি হে)

আমায় পার করে দাও (মাঝি রে) দক্ষিণে কূল

করি তোমায় কাতর বিনয়।।


 =====================

●9>আমি মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

আমি মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

শুধু যা জেনেছি সেটুক হলো এই,

তোরে ডাকার মত ডাকতে যদি পারি

তবে আসবিনে তোর এমন সাধ্যি নেই।


যদি তোর ও মন্দিরের দ্বারে

তোমার লাগি কাঁদি অঝোর ধারে,

যদি নয়ন হতে লুপ্ত ভুবন হয়, সেই সে অশ্রুতে

তবু আমার কাছে আসবিনে, তোর এমন সাধ্যি নেই।


জানি আমার অনেক আছে দোষ

তবু মাগো তোমায় ভালবাসি,

আমি নয়ন মুদেও দেখতে সদাই পাই,

তোমারি ওই ভূবনমোহন হাসি।


আমি যা করি মা সবই তোমার কাজ,

আমার-আমার বলতে লাগে লাজ,

যদি সকল ছেড়ে ঠাঁই চেয়েছি চরণ তলাতে

তবে চির-জীবন রইবে দূরে, ও মা তোর এমন সাধ্য নেই।

====================

 

●10>আমি সব ছেড়ে মা

আমি সব ছেড়ে মা ধরব তোমার

রাঙা চরণ দুটি,

এই তো আমার ব্রত।

আমি আর নই তো রাজী শুন্য হাতে

ঘুরতে অবিরত।


আমি যা পেয়েছি জীবন ভরে

ফুটলো না তায় হৃদয় ভরে,

এখন এমন কিছু চাই মা যাহা

চিরদিনের মত।


আমি কুহক মোহে ভুলে ভুলে

দাগ কেটেছি জলে,

পান করেছি বিষয়-মধু

শুধু শান্তি পাব বলে।


আজ জীবনভরা ভুলের ডালি

তোমার পায়ে দিলাম ঢালি,

এখন তোমার কৃপায় অমৃত হোক

ব্যথার গরল যত।

=========================

 

●11>আর কত ঘুরাবি শ্যামা

আর কত ঘুরাবি শ্যামা

এবার আমায় কর না পার,

তরঙ্গে পড়েছি মাগো

জানিনে মা আমি সাঁতার।


একে দেহ জীর্ণ তরী

তাতে পাপে হলো ভারী,

কি ধরি, কি করি, মাগো

ভব-জলধি অপার।


ভেবেছিলেম যাব কাশী

হয়ে রব কাশীবাসি,

কামসিন্ধুর নীরে আসি

বসিলাম মা ফিরে আবার।

একূল-অকূল হারা আমি

মাঝে মাগো মাঝি তুমি,

কালীর ভরসা কেবল

কালী তুমি কর্ণধার।


 =======================

●12>আর কবে দেখা দিবি মা

আর কবে দেখা দিবি মা

হর-মনোরমা।


ফুরালো মা ভবের খেলা

যায় মা গো এই বেলা,

দিন দিন তনু ক্ষীণ

ক্রমে আঁখি জ্যোতিহীন,

এখনো না এলে ‘পরে

আর কি চিনিব শ্যামা।


 ==================

●13>আয় মা সাধন-সমরে

আয় মা সাধন-সমরে

দেখব মা হারে কি পুত্র হারে।


আরোহণ করিয়ে কালী সাধনরথে

ভজন পূজন দুটি অশ্ব জুড়ে তাতে,

দিয়ে জ্ঞানধনুকে টান

ভক্তিব্রহ্মবাণ বসেছি ধ’রে।


মা দেখব তোমায় রণে

শঙ্কা কি মরণে,

ডঙ্কা মেরে লব মুক্তিধন

তাতে রসনা ঝঙ্কারে,

কালীনাম হুঙ্কারে

কার সাধ্য আমার রণে রণ।


বারে বারে রণে তুমি দৈত্যজয়ী

এবার আমার রণে এস ব্রহ্মময়ী,

ভক্ত রসিকচন্দ্র বলে –

তোমারই বলে মা জিনিব সমরে।


 ===================

●14>ইচ্ছাময়ী তারা

ইচ্ছাময়ী তারা, তোর

ইচ্ছা কে বুঝিতে পারে।


একবার মুখে দুর্গা ব’লে

কালকেতু তোর চরণ পেলে,

কেউ বা যোগসমাধি ফলে

পায় না দেখা যুগান্তরে।


শ্রীমন্তে কমল বনে

দেখা দিয়ে দাও শ্মশানে,

আবার দয়া করে পরক্ষণে

চরণে রেখেছ তারে।


তোমার ইচ্ছা জগৎকল্প

আমার ইচ্ছা অতি অল্প,

শ্রীচরণে দিব কল্প

জীবনের শেষবাসরে।


 ====================

●15>এ মায়া প্রপঞ্চময়

এ মায়া প্রপঞ্চময়,

ভব-রঙ্গমঞ্চ মাঝে

রঙ্গের নট নটবর হরি,

যারে যা সাজান

সে তাই সাজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


মাতৃসাজে সেজেছিস মা

করিতে স্নেহের অভিনয়,

কর্মক্ষেত্রে কর্মসূত্রে

আমি তোর সেজেছি তনয়।

এই নাটকের এই অঙ্কে

স্থান পেয়েছি মা তোর অঙ্কে,

হয়ত যাব পর অঙ্কে,

পর-অঙ্কে পুত্র সেজে

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


কর্মক্ষেত্রে জীবমাত্রে

মায়াসূত্রে সবাই গাথাঁ

কেহ পুত্র, কেহ মিত্র,

কেহ ভার্যা, কেহ ভ্রাতা।

কেউ সেজে এসেছেন পিতা

কেহ স্নেহময়ী মাতা,

কত রঙ্গের অভিনেতা

আসেন কত সাজে সেজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


যার যখন হতেছে সাঙ্গ

এ রঙ্গভূমির অভিনয়,

কাকস্য পরিবেদনা

তখন সে আর কারো নয়।

কোথা রয় প্রেয়সীর প্রণয়

পুত্র-কন্যার কাতর বিনয়,

শোনে না সে কারো অনুনয়

চলে যায় সাজশয্যা ত্যেজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


না হইলে করমশেষ

কত যাব মা কত আসব,

সঙ সেজে সংসার মাঝে

কত হাসব কত কাঁদব।

ভূষণ বলে যবে আসব

মায়ামোহ তবে নাশব,

মহাযোগে তবে বসব

মিশব হরির পদরজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


 ======================

●16>একতারাতে বেঁধে দিলে

একতারাতে বেঁধে দিলে দোতারারই সুর,

একই দেহে রাম আর কৃষ্ণ সুমধুর।


সরযু নদীতে নেমে দেহ শীতল হয়,

আবার বৃন্দাবনের কুঞ্জ ছুঁয়ে প্রেমযমুনা বয়।

শান্তি বারি দু’টির বুকে ক্লান্তি করে দূর,

একই দেহে রাম আর কৃষ্ণ সুমধুর।


জীবে-শিবে এক ক’রে ঘুচালে বিভেদ

সরল কথায় সৃষ্টি ক’রে গেলে পঞ্চবেদ,

অবতার বরিষ্ঠায় তোমারে প্রণাম

একই দেহে কৃষ্ণ তুমি, একই দেহে রাম।

সরল কথা শুনে তোমার ভ্রান্তি হলো দূর

একই দেহে রাম আর কৃষ্ণ সুমধুর।


 =================

●17>একবার ব্রজে চলো

একবার ব্রজে চলো ব্রজেশ্বর

দিনেক দুয়ের মতো,

তোমার মন থাকে তো, থাকবে সেথা

নইলে আসিবে দ্রুত।


আমরা ধ’রে রাখিবো না হে,

প্রেম ধরা-বাঁধায় রয় না বঁধু

কেউ তো ধরে রাখিবো না হে।


যদি বলো নাথ চলিতে চরণ

ধূলায় ধূসর হবে,

না হয়, ব্রজগোপিনীর নয়নজলে

চরণ প্রক্ষালিবে।


চরণ ধোয়াইয়ে দিব

কৃষ্ণ ব’লে কেঁদে কেঁদে,

নয়নজলে চরণকমল ধোয়াইয়ে দিব।


যদি বলো নাথ তপন তাপে

বদন শুকাইবে,

না হয়, শীতল-বংশী-বটের ছায়ায়

ক্ষণিক প্রাণ জুড়াবে।


আজও তেমন ছায়া বিলায়

জুড়াতে শরণাগতে,

ও সে, স্বভাব ভুলে হয় নি বিরূপ।


না হয়, শ্রীদাম সুদাম দাম গো সুদাম

আলিঙ্গন করিবে,

আর মা যশোদা পিত্যানন্দের

চরণধূলি লবে।


তারা আশাপথপানে চেয়ে আছে

ব্রজের দুলাল ফিরবে ব্রজে,

এই আশে তারা চেয়ে আছে।


 ====================

●18>একবার বিরাজো গো মা

একবার বিরাজো গো মা

হৃদি কমলাসনে,

তোমার ভুবন ভরা রূপটি একবার

দেখে লই মা নয়নে।


তুমি অন্নপূর্ণা মা, শ্মশানের শ্যামা

কৈলাসেতে উমা, তুমি বৈকুণ্ঠে রামা,

ধরো বিরিঞ্চি-শিব-বিষ্ণু রূপ

সৃজন-লয় পালনে।


তুমি পুরুষ কি নারী বুঝিতে নারি,

স্বয়ং না বুঝালে তা কি বুঝিতে পারি?

তুমি আধা-রাধা আধা-কৃষ্ণ

সাজিলে বৃন্দাবনে।


তুমি জগতের মাতা, যোগীজনানুগতা

অনুগত জনে কৃপা কল্পলতা,

তোমায় মা বলে ডাকিলে নাকি

কোলে নাও ভকতজনে।


দুঃখ-দৈনহারিনী, চৈতন্যকারিনী

অন্য কিছু চাই না বিনা চরণ দুখানি,

আমি প্রেম-সরোজে সাজাবো পদ

বাসনা মনে-মনে।


পরিব্রাজক-ভিখারী সাধ মনেতে ভারি

মধু হাসিমাখা মা’র মুখ খানি হেরি,

বসে মায়ের কোলে, মা-মা বলে

মাতিব যোগধ্যানে।


 ======================

●19>ওদিকে নিমাই চলে

আহা, ওদিকে নিমাই চলে

মুখে হরি, হরি বলে,

নাম শুনে পাষাণও যে গলে।

ভবরসে আঁখিতারা

উছলিছে প্রেমধারা,

দশদিশি সে হেরে শ্যামলে।


শ্যাম তৃণ হেরি,

শ্যাম ভাবি গোরা

চরণ ফেলিতে নারে।

আর নীলমণি হেরি,

গগনের নীলে

ঝরে আঁখিনীরধারে।

বলে চরণে কেন,

বঁধু হে, তুমি চরণে পড়িয়া কেন,

ওগো মান-অভিমান

নাই কো আমার,

তবু হে বন্ধু চরণে কেন।

ওগো, আমি যে তোমার প্রেমরাধা,

বঁধু গোকুলে যে প্রেম

হলো না কো সাধা,

নদীয়ায় হবে সাধা।


আহা নিজের ছায়ারে

শ্যাম ভাবি গোরা

ধূলায় মূর্তি করে।

ভাবে ধূলার পরশে

শ্যাম পরশন,

সুখে গড়াগড়ি করে।

বলে এই তো ভালো,

কেঁদে বলে, বঁধু এই তো ভালো

তোমার পরশ মিলায় হরষ

সুধা ঢালো,

বঁধু এই তো ভালো।


আহা, তমালে হেরি শ্যামল

ভাবি বাঁধে সে বাহুপাশে,

বলে মথুরায় যেতে দেব না

হরি কাঁদিয়া সে যে হাসে।

মিলন হবে,

এই নদীয়ায় মিলন হবে।

সে যে কেঁদে বলে

হরি বল রে,

ওরে, পাপী-তাপী শোকে-দুঃখে তোরা

হরি বল, হরি বল, রে।

আজি প্রেমের নিঝর

পরাণে বহুক,

নয়নে ঝরুক জল রে।


আহা, পুরবাসী-পুরনারী

নাম শুনে হায়,

বলে, গোরারূপে শ্যাম এলো

প্রেম নদীয়ায়।

তোরা হরি বল, হরি বল,

জীবের জীবন সে যে

হরি বল, হরি বল,

আহা, পারের তরণী সে যে

হরি বল, হরি বল।


 ====================

●20>ওদের মতো বলব না মা

ওদের মতো বলব না মা

আমায় তুমি করো পার,

ভবের সকল কাজেই যদি

মানতে হয় মা আমায় হার।


ভক্তি রূপের সিঁধকাঠিতে

তোর বিভব যারা চুরি করে,

কার্যসিদ্ধি করতে তারাই

তোর দুটি পা স্মরণ করে,

আমি তোর জিনিসে চোর হয়ে মা

ও মা, চাইব না দান তোর দয়ার।


লজ্জাহীনা এমনি মা তুই

স্বামীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকিস,

পুত্র গর্বে গরবিনী

ছেলে কেটে রক্ত মাখিস।


আমার মুন্ড মা তোর মালায় রবে

দুহাত হবে কোটিবার,

সেই মুখেতেই বলব ‘মা’ ‘মা’,

সেই হাতে তুই অর্ঘ্য চাস,

আমি খেয়ায় কড়ি দিয়ে মা গো

হব না মা আর ডুবে পার।

======================


●21>কতদিনে হবে

কতদিনে হবে সে প্রেম সঞ্চার

হয়ে পূর্ণকাম বলবো হরিনাম

নয়নে বহিবে প্রেম-অশ্রুধার।


কবে হবে আমার শুদ্ধ প্রাণমন

কবে যাব’ আমি প্রেমের বৃন্দাবন,

সংসার-বন্ধন হইবে মোচন

জ্ঞানাঞ্জনে যাবে লোচন-আধার।


কবে পরশমণি করি পরশন

লৌহময় দেহ হইবে কাঞ্চন,

হরিময় বিশ্ব করিব দর্শন

লুটাইব ভক্তিপথে অনিবার।


কবে যাবে আমার ধরম করম

কবে যাবে জাতি-কূলের ভরম,

কবে যাবে ভয় ভাবনা শরম

হরি হরি অভিমান লোকাচার।


মাখি সর্ব-অঙ্গে ভক্ত-পদধূলি

কাঁধে লয়ে চির-বৈরাগ্যের ঝুলি,

পিব প্রেমবারি দুই হাতে তুলি

অঞ্জলি-অঞ্জলি প্রেম যমুনার।


প্রেমে পাগল হয়ে হাঁসিব কাঁদিব

সচ্চিদানন্দ-সাগরে ভাসিব,

আপনি মাতিয়ে সকলে মাতাব

হরিপদে নিত্য করিব বিহার।


 =====================

●22>কানু কহে, রাই

কানু কহে, রাই কহিতে ডরাই –

ধবলী চরাই মুই।

আমি তোমার প্রেমের কি বা জানি?

আমি রাখাল বই তো নই,

আমি রাখাল বই তো –

ধেনু রাখার রাখাল বই নই তো রাই।

আমি রাখাল বই তো নই।


আমি রাখালিয়া মতি,

না জানি পিরিতি –

রাধে, প্রেমের পসরা তুই।

রাধে, তুমি মহাজন

প্রেমের তুমি মহাজন,

যে কর ভর্ৎসন

সুধাসম মোহে লাগে ।

রাধে তুমি আমার প্রেমের গুরু।

প্রেম করা শেখায়েছ তাই

তুমি আমার প্রেমের গুরু।


মোর নাগরালী বাধালি

রাধে গরবিনী

ওহে প্রেমময়ী রাই,

কিশোরী পিরিতি রভস রাগে

প্রেম শুধিব শুধিব মনেতে করিলাম

বন্দী হইলাম ঋণে ।

তোমার প্রেম-ঋণ আমি শুধিতে নারিলাম ।

এজনমের মত বিকায়ে রইলাম।


কান্ত কহে, কানু গৌরাঙ্গ হলে খালাস পাইবে ঋণে

যেদিন কালো ছেড়ে গৌর হবে

তুমি খালাস পাবে যেদিন নদে গিয়ে উদয় হবে

সেদিন খালাস পাইবে ঋণে।


 ====================

●23>কালী ব’লে ডাকব না আর

কালী ব’লে ডাকব না আর

ডাকব এবার কালা ব’লে,

ডেকে ডেকে হলাম সারা

সারা জনম ম’লাম জ্বলে।


তুই যদি মা হানলি হেলা

তোর তরে কেন অশ্রু ফেলা,

কাঁদব এবার কালার তরে

পূজব আমি নয়নজলে।


তোর কাছে আর আসব না মা

শ্যামের ঘরে যাব শ্যামা,

কালার ঘরে যাবো শ্যামা।


গোকুলেতে রইব পড়ে,

অভয়চরণ স্মরণ করে

কালা যদি করে হেলা,

যাব আমি রসাতলে।


 =================

●24>কালী বলো তারা বলো

কালী বলো তারা বলো মন রে আমার,

হাসিমাখা বদনে ছলোছলো নয়নে,

আনন্দ কাননে, মন ঘোরো অনিবার।


গতি নাই গতি নাই কালী নাম ছাড়া,

ও মন আমার,

কণ্ঠ ভরিয়া গাও হয়ে আত্মহারা।

ওই দেখো তোমার বন্ধু তরিতেছে ভবসিন্ধু,

একবিন্দু আশা তুমি করিও না আর।


কেউ তো কারো নয় – একথাটি সত্য,

বুঝেও তো বোঝো না মন তুমি যে ওই নিত্য,

ওই দেখো শ্মশানে কি বা নিশিদিনে,

পুড়িতেছে মানবের যত অহংকার।


আর কতদিন তুমি রবে ধরাধামে,

মরণ তোমার সত্য মজ কালীনামে,

ভবা পাগলা কহে প্রাণ থাকিতে দেহে

কালীনামে ভরিয়া দাও বিষয় সংসার।


 ====================৻==

●25>কী দিয়ে করি গো পূজা

কী দিয়ে করি গো পূজা

কি আছে আমার,

যা কিছু আছে গো আমার

সবই যে তোমার।


তোমারে হৃদয়ে মাগো

করি তোমার ধ্যান,

তোমারি রসনা লয়ে

করি তোমার নাম,

তোমার এ নয়ন ভরে

দেখি আমি তোমারে,

তোমারি কন্ঠেতে মা

গাই তোমার গান।


মিনতি ভকতি স্তুতি

সবই গো মা তুমি,

আমি তো আমার যাহা

সবই গো মা তুমি,

বল মা কি দিয়ে তবে

পূজিব তোমায় শিবে,

তুমি গো তোমার পূজা

করো মা এবার।


 ====================

●26>কোথা ভবতারা

কোথা ভবতারা দুর্গতি-হরা,

কতদিনে তোর করুণা হবে?

কবে দেখা দিবি, কোলে তুলে নিবি,

সকল যাতনা জুড়াবি?


মায়ার সংসারে কর্ম কোলাহলে

শ্রীপদ দুখানি রয়েছি গো ভুলে,

বিবেক-বৈরাগ্য তুমি নাহি দিলে

মোহ-ভ্রান্তি কিসে ছুটিবে?


আয়ু-সূর্য মোর বসিতেছে পাটে

কোথা ব্রহ্মময়ী, এসো তুমি ছুটে,

তনয়ে তারো মা এব সংকটে

তুমি বিনে কে আর তরিবে?


 ===================


●27>কোন রূপে মা

কোন রূপে মা দিবি দেখা

বল সারদা শ্যামাসুতা,

বিন্দুবাসিনী মা দেবী

সরলা বিমলা স্নিগ্ধা,

দেবজনে দেবেশ্বরী

রামকৃষ্ণে হৃদয়যুক্তা।


জয়ন্তী মঙ্গলাকালী

ব্যাপ্ত-চরাচরেশ্বরী,

ক্ষান্তিশান্তি প্রদায়িনী

সর্ববিদ্যা জ্ঞানেশ্বরী।


সৃষ্টিস্থিতি প্রকটিনী

প্রলয়ে প্রলয়েশ্বরী,

ধনদাত্রী প্রেমদাত্রী

সকল হৃদয়েশ্বরী।


চক্রিণী কুটিনী তুই মা

সর্বজীবে জীবেশ্বরী,

দুর্গশিবা ক্ষমধাত্রী

ক্লান্তি-শ্রান্তি দুঃখহারিণী।


ছিন্নমস্তা বগলা মা

বিশ্বরূপা গয়েশ্বরী,

কৌমারী শঙ্খীনী উমা

শ্যামাকালী বিশ্বেশ্বরী।


জ্যোতিদ্যুতি আলোকছায়া

তুই মা মায়া, তুই মা লীলা,

চিত্তসত্য শুদ্ধিমুক্তি

তুই মা ধ্যানে যোগেশ্বরী।


শান্তানিদ্রাঘোরা দেবী

শঙ্করী মা ঢাকেশ্বরী,

সঙ্কটমোচিনী মা তুই

জয় বিশ্বপ্রসবিনী।


জন্মমৃত্যুজরাতীতা

খ্যাতি-ভ্রান্তি-বিকারচ্যুতা,

ছিন্নমস্তা চণ্ডী তুই মা

অমঙ্গলে মঙ্গলেশ্বরী।


অশুচি মা হীনদীন

রক্ষ ক্রোড়ে সকল ক্ষীণ,

দুর্বলে অধমে কৃপা

করো মা গো চিরন্তনী।


জয় লক্ষ্মী জয় দুর্গা

জয় দাত্রী গিরিসুতা,

ক্ষেমঙ্করী সারদেশ্বরী

গুরুর গুরু তুই সারদা।


সারদা সারদা জয় মা।


 ===================

●28>গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি

গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি

কাশী কাঞ্চি কে বা যায়,

কালী কালী কালী ব’লে

অজপা যদি ফুরায়।


ত্রিসন্ধ্যা যে বলে কালী

পূজা-সন্ধ্যা সে কি চায়,

সন্ধ্যা তার সন্ধানে ফেরে

কভু সন্ধি নাহি পায়।


কালী নামে এত গুণ

কে বা জানতে পারে তায়,

দেবাদিদেব মহাদেব যার

পঞ্চমুখে গুণ গায়।

জপ-যজ্ঞ-পূজা-হোম

আর কিছু না মনে লয়,

মদনের যাগযজ্ঞ

ব্রহ্মময়ীর রাঙা পায়।


 ==================

●29>গুরুদেব দয়া করো

অখণ্ড মণ্ডলাকারম্

ব্যাপ্তম্ যেন চরাচর,

তৎ পদম্ দর্শিতম্ যেন

তস্মই শ্রী গুরুবে নমোহ।


ভব-সাগর-তারণ-কারণ হে

রবি-নন্দন-বন্ধন-খণ্ডন হে,

শরণাগত কিঙ্কর ভীত মনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


হৃদিকন্দর-তামস-ভাস্কর হে

তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে,

পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


মন-বারণ-শাসন-অঙ্কুশ হে

নরত্রাণ তরে হরি চাক্ষুষ হে,

গুণগান-পরায়ণ দেবগণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


কুলকুণ্ডলিনী-ঘুম-ভঞ্জক হে

হৃদি-গ্রন্থি-বিদারণ-কারক হে,

মম মানস চঞ্চল রাত্রদিনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


রিপু-সূদন-মঙ্গল-নায়ক হে

সুখ-শান্তি-বরাভয়-দায়ক হে,

ত্রয়তাপ হরে তব নাম গুণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


অভিমান-প্রভাব-বিমর্ধক হে

গতিহীন জনে তুমি রক্ষক হে,

চিত-শঙ্কিত-বঞ্চিত-ভক্তিধনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


তব নাম সদা শুভ-সাধক হে

পতিতাধম-মানব-পাবক হে,

মহিমা তব গোচর শুদ্ধ মনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


জয় সদ্‌গুরু ঈশ্বর-প্রাপক হে

ভব-রোগ-বিকার-বিনাশক হে,

মন যেন রহে তব শ্রীচরণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


 =====================

●30>গোবিন্দ গোকুলানন্দ

গোবিন্দ গোকুলানন্দ, নবঘনশ্যাম তুমি

তুমি নবঘনশ্যাম, গোপী-নয়নাভিরাম

বৃন্দাবন-বনচারী ঘনশ্যাম।


আশা বংশী বটমূলে

বাজাও মুরলী রাধা ব’লে,

যেন মায়ার কুঠারে কাটিয়া ফেলে

আমার প্রেম-তরুলতাখানা,

তুমি দাও প্রভু বেড়া, কর মনঘেরা

যেন পাপ-তাপ-শোক তার না, লাগে না।


কেশী কংস নিধনকারী

যুগে-যুগে অবতারো হরি,

তব চরণ-লহরে বহে যমুনা বারি

মোর মন-যমুনাকে বহাও শ্যাম,

আনন্দ নবঘনশ্যাম।


তুমি গোকুলানন্দ হে শ্রীগোবিন্দ

তুমি আনন্দ-নবঘনশ্যাম,

তুমি গোপী-প্রাণধন, ব্রজের জীবন

তুমি ব্রজগোপীর নয়নাভিরাম,

তুমি শ্রীরাধার নয়নাভিরাম

আনন্দ নবঘনশ্যাম।


 =====================

●31>জয় গুরু নিত্যানন্দ

জয় গুরু নিত্যানন্দ

গৌর হরি হরিবোল,

নিতাই আমার পরম দয়াল

গুরুরূপে কলির জীবকে দিলেন কোল।


প্রেমানন্দে বাহুতুলে

একবার ডাকো তাঁরে,

প্রেমানন্দে বাহুতুলে

গৌর হরি হরিবোল।


প্রভাতে ওই নব রবি

থাকো গৌর প্রেমের ছবি,

আনন্দে উচ্ছল হবি

হৃদয় হবে আনন্দভোর।


নিতাই যদি দয়া করে

গৌর রবে না দূরে,

নিতাইয়ের দয়া হ’লে

গৌর তোরে দেবেন কোল।


আনন্দে বলো গৌর হরি

নিতাইয়ের চরণ ধরি,

নিতাইচাঁদ দয়াল বড়ো

গৌর তোরে দেবেন কোল।


একবার হরিবোল

জয় গুরু নিত্যানন্দ,

গৌর হরি হরিবোল।


 

●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

■■■■■■■■■■■■■■■■■■



No comments:

Post a Comment