Sunday, July 30, 2023

46>গৌতম বুদ্ধের চতুরার্য সত্য::--

 গৌতম বুদ্ধের চতুরার্য সত্য::--


বৌদ্ধ চিন্তার মৌলিক কাঠামো


চতুরার্য সত্য

 (সংস্কৃত: चत्वारि आर्यसत्यानि/চত্বারি আর্যসত্যানি)


 গৌতম বুদ্ধ দ্বারা প্রচারিত চারটি শ্রেষ্ঠ সত্য এবং তার প্রধান জ্ঞান দর্শন। এই চারটি সত্য  হল 

★1>দুঃখ, 

★2>দুঃখ সমুদয়, 

★3>দুঃখ নিরোধ ও 

★4>দুঃখ নিরোধ মার্গ।



চতুরার্য সত্য তত্ত্বে দুঃখ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। 



★1>দুঃখ (বৌদ্ধ ধর্ম)::--

চতুরার্য সত্যের প্রথম সত্য হল দুঃখ। গৌতম বুদ্ধের মতে পঞ্চ উপাদান যখন ব্যক্তির তৃষ্ণার বিষয় হয়ে তার নিকটে প্রকট হয়, তখন তাকে উপাদান স্কন্ধ বলে। 

এই পঞ্চ উপাদান স্কন্ধকে তিনি দুঃখ বলেছেন। এই পঞ্চ উপাদান হল

 ●রূপ, ●বেদনা, ●সংজ্ঞা, ●সংস্কার ও ●বিজ্ঞান। 

●ক্ষিতি, ●অপ্, ●তেজ, ●মরুৎ এই চার মহা উপাদান হল রূপ উপাদান। বস্তু ও তার বিচার সম্বন্ধে অনুভব হল বেদনা উপাদান। বেদনার পর যে পূর্ব সংস্কার দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুকে চেনা যায় তা হল সংজ্ঞা উপাদান। রূপ, বেদনা ও সংজ্ঞা দ্বারা চিন্তায় প্রকৃত ব্যক্তি ও বস্তুকে চিনতে সাহায্য করে সংস্কার উপাদান এবং চেতনা বা মনকে বলে বিজ্ঞান।


দুঃখকে মূলতঃ তিনভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা:

■ দুঃখ দুঃখ - ●জন্ম, ●জরা, ●ব্যাধি এবং

           ●মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত দৈহিক ও  

             মানসক কষ্ট,

■ বিপরিণাম দুঃখ - পরিবর্তনশীল 

              বিষয়কে স্থির রাখার দুশ্চিন্তা,

■ সংস্কার দুঃখ - মানসিক চাহিদা 

              পরিপূরণের অভাববোধ।



বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখ জীবনের নিরাশাবাদী তত্ত্বকে দর্শায় না, বরং মানবজাতির প্রতিটি সদস্যকে জীবনের কোন না কোন মুহুর্তে জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যুর যন্ত্রণার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবেই, মানব অবস্থার এই প্রায়োগিক ও বাস্তব পরীক্ষাকে নির্দেশ করে। 


গৌতম বুদ্ধের মতে জীবনে সুখ ও দুঃখ দুই অবস্থান করে, কিন্তু তা সদা পরিবর্তনশীল। 

সুখ ও দুঃখ কোনটিই বেশিদিন স্থায়ী নয়। সেই কারণে পরিবর্তনশীল সমাজে চাহিদার পূরণ সম্ভব হয় না।

___________=========__________


★2>দুঃখ সমুদয়::---


 দুঃখ সমুদয়

চতুরার্য সত্যের দ্বিতীয় সত্য হল দুঃখ সমুদয় বা দুঃখের কারণ। গৌতম বুদ্ধ দুঃখের হেতু বা কারণ হিসেবে তৃষ্ণা বা আসক্তিকে উল্লেখ করেছেন।

 অবিদ্যার কারণে বিশ্বের সকল প্রকারের ইন্দ্রিয়প্রিয় বস্তু বা বিষয়ের ওপর চিন্তা ও সম্বন্ধ স্থাপনে তৃষ্ণার জন্ম দেয়।


এই তৃষ্ণা তিন প্রকার:

সম্ভোগতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা,বৈভবতৃষ্ণা।


সম্ভোগতৃষ্ণা : যে বস্তু পার্থিব আনন্দ প্রদান করে, তার ওপর তৃষ্ণা।


ভবতৃষ্ণা : পার্থিব সম্মান ও প্রভাব বিস্তারের ওপর তৃষ্ণা।


বৈভবতৃষ্ণা : দুঃখ কষ্টের প্রতি বিতৃষ্ণা

চতুরার্য সত্যের অর্থ ও তাত্পর্য্যকে না জানা ও নিজেকে ও বাস্তবকে না বোঝাকে অবিদ্যা বলা হয়ে থাকে। অবিদ্যার কারণে ক্লেশের উদ্ভব হয়ে থাকে।

 এই সূত্রে দুঃখের মূল কারণ রূপে ত্রিবিষের উল্লেখ করা যায়।

 এই তিনটি বিষ হল- অবিদ্যা বা মোহ, রাগ এবং দ্বেষ।

__________=========________


★3>দুঃখ নিরোধ::--


 নিরোধ::--

গৌতম বুদ্ধের সকল দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু। তৃষ্ণাকে দৃঢ় ভাবে সংযত করে ও ক্রমশ পরিত্যাগ করে বিনাশ করাকে গৌতম বুদ্ধ দুঃখ নিরোধ বলেছেন। 


প্রিয় বিষয়ে তত্ত্ব নির্ণয়ে সংশয় থেকে যখন তৃষ্ণা বিমুখ হয়, তখন তৃষ্ণা নাশ সম্ভব এবং তার ফলে বিষয় সংগ্রহের প্রবণতা নষ্ট হয়। 

 উপাদানের নিরোধে ভবলোকের নিরোধ হয়। ফলে বার্ধক্য, মৃত্যু, শোক, ক্রন্দন, ক্লেশ ও জটিলতা দূরীভূত হয়ে দুঃখের নিরোধ হয়।

_____________==========_________


★4>দুঃখ নিরোধ মার্গ::---


(অষ্টাঙ্গিক মার্গের প্রতীক ধর্ম চক্র):


অষ্টাঙ্গিক মার্গ--

যেখানে চতুরার্য সত্যের প্রথম তিনটি সত্য দুঃখের বৈশিষ্ট্য ও কারণকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, সেখানে এর চতুর্থ সত্য দুঃখ নিবারণের ব্যবহারিক উপায় দর্শায়।


 গৌতম বুদ্ধ দ্বারা বর্ণিত দুঃখ-নিরোধ মার্গ বা দুঃখ নিরসনের উপায়কে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়। এর আটটি উপদেশকে 

তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

●সম্যক প্রজ্ঞা, 

●সম্যক শীল ও 

●সম্যক সমাধি 


●সম্যক প্রজ্ঞা দুই প্রকার- *সম্যক দৃষ্টি ও *সম্যক সঙ্কল্প। 

কায়িক, বাচনিক ও মানসিক কর্মের সঠিক জ্ঞানকে সম্যক দৃষ্টি বলে। অহিংসা, চুরি না করা, অব্যভিচার ও সত্যভাষণ হল কায়িক সুকর্ম, নিন্দা না করা, মধুর ভাষণ ও লোভহীনতা হল বাচনিক সুকর্ম এবং মিথ্যা ধারণা না করা ও প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়া হল মানসিক সুকর্ম। 


●সম্যক শীল তিন প্রকার- সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম ও সম্যক জীবিকা। 


মিথ্যা কথা, পরনিন্দা, কটুবাক্য ও অতিকথন ত্যাগ করে সত্যভাষণ ও মধুর বচনকে সম্যক বাক্য বলে। 


অহিংসা, চুরি না করা, অব্যভিচারকে সম্যক কর্ম বলে। 


এবং অসৎ পন্থা ত্যাগকে সম্যক জীবিকা বলে। 


গৌতম বুদ্ধ অস্ত্র ব্যবসা, প্রাণী ব্যবসা, মাংস বিক্রয় এবং মদ ও বিষের বাণিজ্যকে মিথ্যা জীবিকা বলে উল্লেখ করেছেন। 


●সম্যক সমাধি তিন প্রকার- •সম্যক প্রযত্ন, •সম্যক স্মৃতি ও •সম্যক সমাধি। 


ব্যায়াম, ইন্দ্রিয় সংযম, কুচিন্তা ত্যাগ এবং সৎ চিন্তার চেষ্টা ও তাকে স্থায়ী করার চেষ্টাকে সম্যক প্রযত্ন বলে। 


কায়া, বেদনা, চিত্ত ও মনের ধর্মের সঠিক স্থিতিসমূহ ও তাদের ক্ষণবিধ্বংসী চরিত্রকে সদা স্মরণে রাখাকে সম্যক স্মৃতি 

বলে।


এবং চিত্তের একাগ্রতাকে সম্যক সমাধি বলে। 


৻৻★এই আটটি মার্গ একত্রে দুঃখের অবসান ঘটায়। 

 এই মার্গগুলি আটটি বিভিন্ন দশা নয়, বরং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল পরস্পর সংযুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ পথের সৃষ্টি করে। 



★★বারো অন্তর্দৃষ্টি::--


বুদ্ধের প্রথম বার্তা, দ্বিতীয় শতাব্দী (কুষাণ যুগ)

ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র অনুসারে চতুরার্য সত্যকে ঠিক মতো বুঝতে প্রতিটি সত্যের জন্য তিনটি করে ধাপে মোট বারোটি অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন।  বৌদ্ধধর্মে এই তিনটি ধাপ সম্বন্ধে বলা হলেও কয়েকজন মহাযান পণ্ডিতের রচনাতেও এর উল্লেখ আছে। এই তিনটি ধাপ হল:


●সচ্চ নান - সত্য সম্বন্ধে জানা

●কিচ্চ নান - সত্য সম্বন্ধে কি করতে হবে তা জানা

●কত নান - যা করতে হবে তা সম্পন্ন করা।


■ প্রথম সত্যের তিনটি অন্তর্দৃষ্টি

*দুঃখ আছে

*দুঃখকে উপলব্ধি করতে হবে।

*দুঃখকে উপলব্ধি করা হল।


■ দ্বিতীয় সত্যের তিনটি অন্তর্দৃষ্টি

*দুঃখের কারণ আছে যা তৃষ্ণার সাথে সম্পর্কযুক্ত 

*তৃষ্ণাকে দূর করতে হবে 

*তৃষ্ণাকে দূর করা হল।


■ তৃতীয় সত্যের তিনটি অন্তর্দৃষ্টি

*দুঃখের নিবৃত্তি আছে

*দুঃখের নিবৃত্তি হয় তা উপলব্ধি করতে হবে।

*দুঃখের নিবৃত্তি হয় তা উপলব্ধি করা হল।


■ চতুর্থ সত্যের তিনটি অন্তর্দৃষ্টি

*দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে।

*দুঃখ নিবৃত্তির উপায় জানতে হবে,

*দুঃখ নিবৃত্তির উপায় উপলব্ধি করা হল।




★★বুদ্ধের দর্শন::---


চতুরার্য সত্যকে বুদ্ধের প্রধান শিক্ষা বলে ধরা হয়। এই শিক্ষা সমস্ত বৌদ্ধ চিন্তাধারার মূল কাঠামো ও

 মিলনক্ষেত্ররূপে বিবেচিত হয়। 

গৌতম বুদ্ধের মতে, যেভাবে কোন হাতির পদচিহ্নে যে কোন পশুর পদচিহ্ন স্থান পেয়ে যায়, ঠিক তেমন করে এই বুদ্ধের সমস্ত শিক্ষা এই চার সত্যে স্থান পায়।


সারা জীবন ধরে গৌতম বুদ্ধ চার সত্যের শিক্ষাকে বারবার পরিবর্ধন করে তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন। 

গৌতম বুদ্ধ নিজের জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে চতুরার্য সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন। বৌদ্ধ পণ্ডিত রুপার্ট গেথিন ও থানিসসারো ভিক্ষু এই ধারণার উল্লেখ করেছেন। 


■■■  বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ::----


গৌতম বুদ্ধ সারা জীবন ধরে চতুরার্য সত্যকে প্রচার করায় বহু বৌদ্ধ সূত্রে এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র অনুসারে সম্বোধিলাভের পর গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রথম চতুরার্য সত্যের শিক্ষা দান করেন। এই সূত্রে চারটি মূল শ্লোকে চারটি তথ্যকে উপস্থাপিত করা হয়েছে।


 গ্রন্থানুসারে বারো নিদানের ওপর নির্ভর করে দুঃখের কারণ ও নিরোধ হয়ে থাকে।


এছাড়াও  বুদ্ধের জীবনের অন্তিম পর্যায়ে রচিত মহাপরিনিব্বাণ সুত্তে চতুরার্য সত্য সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে।

        (সংগৃহীত)

==========================

"""""""""""""



Friday, July 14, 2023

45>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(1খন্ড)okকৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি।(১খন্ড)(1to22 + 4)

 45>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(1খন্ড)okকৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি।(১খন্ড)(1to22 + 4)


★★1>গিরীশ চন্দ্র ঘোষের গান ★★

●1>আমার ধর্মকর্ম

●2>আমি প্রেমের ভিখারী

●3>আমি বৃন্দাবনে

●4>আর ঘুমায়ো না মন

●5>উদার অম্বর

●6>কাতরে ডাকি হে

●7>কি ছার আর

●8>কেশব কুরু করুণা

●9>জয় শিবশঙ্কর

●10>জুড়াইতে চাই

●11>তুমি তো মা ছিলে ভুলে

●12>দুর্গে দীনদুঃখহারিণী

●13>দেখা দে মা

●14>ধেয়ে ধেয়ে ধেয়ে

●15>ফিরে চাও প্রেমিক সন্ন্যাসী

●16>যাই গো, ওই বাজায় বাঁশি

●17>যোগাসনে মহাধ্যানে

●18>রাঙাজবা কে দিলো

●19>রাম-রহিম না জুদা করো

●20>শিব যদি মা

●21>হরি মন মজায়ে

●22>হামা দে পালায়।


★★★ চন্ডীদাসের গান ★★★


●1>কুল গেল কলঙ্ক হলো

●2>ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না বঁধু

●3>মথুরা-প্রত্যাগত শ্রীকৃষ্ণ

●4>রাধার কি হলো অন্তরে ব্যথা


======================

★1>গিরীশ চন্দ্র ঘোষের গান

 

●1>আমার ধর্মকর্ম

আমার ধর্মকর্ম সকলি গেল

শ্যামাপূজা মম হলো না,

মননিবারিতে নারি কোনমতে

ছি ছি ছি, যেন বলো না।


কুসুম-অঞ্জলি দিতে শ্রীচরণে

ত্রিভঙ্গ-মাধব পারে সখীমনে,

পীতবসনে হেরি গো নয়নে

ভাবিতে দিই গো বাসনা।


ভাবি বনমালী কালিয় শিখরে

হেরি বনমালী বাঁশরিয়া ধরে,

ত্রিনয়না ধ্যানে বঙ্কিম নয়নে

হেরি হই সই বিমন,

একি লো, একি লো ছলনা

মরি নিদয় হরললনা।

===============

 

●2>আমি প্রেমের ভিখারী


আমি প্রেমের ভিখারী,

কে প্রেম বিলায় এ নদীয়ায়।


কে প্রেমের মাতাল

প্রেম ঢেলে দেয়,

যে যত চায় তত পায়।


প্রাণে-প্রাণে শুনে কথা

তাই তো আমি এলেম হেথা,

আমি দেশে-দেশে বেড়াই ভেসে

থেকে গেছি প্রেমের গাঁয়।


 ==================

●3>আমি বৃন্দাবনে

আমি বৃন্দাবনে বনে-বনে

ধেনু চরাব,

আমি খেলব কত ছুটোছুটি

বাঁশি বাজাব।


খেলতে বড়ো ভালোবাসি

ছুটে ছুটে তাইতো আসি,

আমার মনের মতো খেলার সাথী

কত জন পাব।


খেলব জীবন-মরণ খেলা

আলো-কালোর দেখব মেলা,

আবার কান্না-হাসির মন্দ-ভালো

পায়ে লুটাব।


 =================

●4>আর ঘুমায়ো না মন

আর ঘুমায়ো না মন

মায়াঘোরে কতদিন,

রবে অচেতন।


কে তুমি, কী হেতু এলে

আপনারে ভুলে গেলে,

চাহ রে নয়ন মেলে

ত্যাজ গো সব।


রয়েছ অনিত্য ধ্যানে

নিত্যানন্দ হেরো প্রাণে,

তমোপরি হরি হেরো

অরুণ তপন।


 =============

●5>উদার অম্বর

উদার অম্বর শুন্য সাগর

শুন্যে মিলাও প্রাণ,

শুন্যে শুন্যে ফোটে কত শত ভুবন,

তারকা-চন্দ্রমা, কত শত তপন

শুন্যে ফোটে অভিমান।


অহম, অহম গীতি শুন্যে বিভাসিত

শুন্যে বিকশিত মনোবুদ্ধিচিত,

মদমাৎসর্য ভোক্তাভোজ

শুন্য সকলি ভান।


 ==================

●6>কাতরে ডাকি হে

কাতরে ডাকি হে, এসো

আঁখিবারি ঢালি রাঙাপদে,

ভুলিয়াছি কমলচরণ

মত্ত মহামোহমদে।


বিষয়সাধনা বিষয়কামনা

হারায়েছি হায় বিষয়সম্পদে,

রাখো নাথ, রাখো দাসে

রাখো রাখো এ বিপদে।


হেরি লক্ষ্যহীন ঘুরি দিন-দিন

তৃণ পাকে-পাকে যেন মহাহ্রদে,

বিষাদে ব্যাকুল কভু

কভু মাটিছাড়া মদে,

হৃদয়শ্যামল কুঞ্চিতকোমল

বিকাশ হৃদি-কোকনদে।


 =================

●7>কি ছার আর

কি ছার আর কেন মায়া,

কাঞ্চন-কায়া তো রবে না।


দিন যাবে দিন রবে না তো

কি হবে তোর তবে?

আজ পোহালো কাল কি হবে

দিন পাবি তুই কবে?


সাধ কখনো মেটে না ভাই

সাধে পড়ুক বাজ,

বেলাবেলি চল রে চলি

সারি আপন কাজ।


কেউ কারো নয়, দেখ না চেয়ে

কবে ফুটবে আঁখি,

আপন রতন বেছে নে চল

হরি বলে ডাকি।


 ==================

●8>কেশব কুরু করুণা

কেশব কুরু করুণা দীনে

কুঞ্জ-কাননচারী,

মাধব মনমোহন

মোহন মুরলীধারী।


ব্রজকিশোর কালিয়হর

কাতরভয়ভঞ্জন,

নয়ন বাঁকা বাঁকা-শিখিপাখা

রাধিকা হৃদিরঞ্জন।


গোবর্ধনধারণ বনকুসুমভূষণ

দামোদর কংসদর্পহারী,

শ্যামরাস রাসবিহারী

হরিবোল,হরিবোল,হরিবোল।


 =================

●9>জয় শিবশঙ্কর

জয় শিবশঙ্কর হর ত্রিপুরারি

পাশি-পশুপতি পিনাকধারী,

শিরে জটাজুট, কণ্ঠে কালকূট

সাধক জনগণ মানসবিহারী।


ত্রিলোকপালক ত্রিলোকনাশক

পরাৎপর প্রভু মোক্ষবিধায়ক,

করুণানয়নে হেরো ভকতজনে

লয়েছি শরণ চরণে তোমারি।


 ================___

●10>জুড়াইতে চাই

জুড়াইতে চাই কোথায় জুড়াই,

কোথা হ’তে আসি কোথা ভেসে যাই।


ফিরে ফিরে আসি, কত কাঁদি হাঁসি

কোথা যাই সদা ভাবি গো তাই,

কি খেলাই আমি খেলি বা কেন

জাগিয়ে ঘুমাই কুহকে যেন,

এ কেমন ভোর, হবে না কি মোর

অধীর অধীর যেমতি সমীর

অবিরাম ভক্তি নিয়ত ধাই।


আমি জানি না কে বা এসেছি কোথায়

কেন বা এসেছি কে বা নিয়ে যায়,

যাই ভেসে ভেসে কত দেশে দেশে

চারিদিকে গোল ওঠে নানা রোল,

কত আসে যায় কাঁদে হাসে গায়

এই আছে আর তখনি নাই।


কি কাজে এসেছি কি কাজে বা গেল

কে জানে কেমন কি খেলা হলো,

প্রবাহের বারি বহিতে কি পারি

যাই যাই কোথা কূল কি নাই।


করো হে চেতন যে আছো চেতন

কতদিনে আর ভাঙিবে স্বপন,

কে আছো চেতন ঘুমায়ও না আর

দারুণ এ ঘোর নিবিড় আঁধার,

করো তমোনাশ, হও হে প্রকাশ

তমা বিনা আর নাহিকো উপায়

তব পদে তাই শরণ চাই।


 

=================


●11>তুমি তো মা ছিলে ভুলে

তুমি তো মা ছিলে ভুলে

আমি পাগল নিয়ে সারা হই,

হাসে কাঁদে সদাই ভোলা

জানে না সে আমা বই।


ভাঙ খেয়ে মা সদাই আছে

থাকতে হয় মা কাছে কাছে,

ভাল মন্দ হয় গো পাছে

সদাই মনে ভাবি ওই।


দিতে হয় মা মুখে তুলে

নয়তো খেতে যায় গো ভুলে,

ক্ষেপার দশা ভাবতে গেলে

আমাতে আর আমি নই।


ভুলিয়ে যখন এলাম ছলে

(ওমা) ভেসে গেল নয়ন জলে,

একলা পাছে যায় গো চলে

আপন-হারা এমন কই।


 ==================

●12>দুর্গে দীনদুঃখহারিণী

জাগো মাগো,

দুর্গে দীনদুঃখহারিণী

শিবরাণী ভবভয়হারিণী,

জাগো মাগো হৃদয়ে

জয়তে জাগো জননী।


ওপারে দূরে বিপদসাগরে

দুর্গা, দুর্গা নাম বলো অভিরাম,

দয়াময়ী হরকরণী, হরভরণী।


রঞ্জিত-রাঙা চরণকমলে

মধুসাগর সতত উথালে,

প্রাণ সদা প্রিয় কুতুহলে

দূরে জাগে দুখরজনী।


 ==============

●13>দেখা দে মা

দেখা দে মা, দেখা দে,

দেখা দে মা, ও মা উমা

এই ছিলি কোথায় লুকালি,

মা ব’লে এসো মা উমা

মুছে ফেলি মনের কালি।


মা আমার ছিল না তেমন

স্বপ্নে কেন দেখলেম এমন,

চায় যেন গো কেমন-কেমন

কেন মা হয়েছে কালী।


হীরে মণি ভয় বাসি

উমা আমার শ্মশানবাসী,

উন্মাদিনী একি হাসি

দেখলাম যেন ছারকপালী।


কেন গো মা দিক-বসনা

কেন উমা শবাসনা,

ছিল না তো ত্রিনয়না

ছিল না তো মুণ্ডমালী।


 ================

●14>ধেয়ে ধেয়ে ধেয়ে

ধেয়ে ধেয়ে ধেয়ে

নাচে কালো মেয়ে,

খেলে বিজলী লয়ে।


রাঙাচরণ রাজে গো, রাজে

ভ্রমর গুঞ্জরে, মধুর মঞ্জীর বাজে।


কালোরূপে শতরবিচ্ছটা

দোলে এলোকেশ নবঘনঘটা,

কি বা মৃদুহাসি ঊষামলিন লাজে

শ্যামা বনফুলহারে সাজে।


 ================

●15>ফিরে চাও প্রেমিক সন্ন্যাসী

ফিরে চাও প্রেমিক সন্ন্যাসী

ঘুচাও ব্যথা কও না কথা,

কার প্রেমে হে উদাসী।


রয়েছ মত্ত ধ্যানে

তত্ত্ব তোমার কে জানে,

অনুরাগী শুধাই যোগী

প্রাণ দিলে কি লও হে আসি।


 ==================


●16>যাই গো, ওই বাজায় বাঁশি

যাই গো, ওই বাজায় বাঁশি

প্রাণ কেমন করে,

একলা এসে কদমতলায়

দাঁড়িয়ে আছে মোর তরে।


যত বাঁশরি বাজায়

তত পথপানে চাই,

পাগল বাঁশি ডাকে, ওগো রাই

না গেলে সে কেঁদে-কেঁদে,

চলে যাবে মানভরে।


 ================

●17>যোগাসনে মহাধ্যানে

যোগাসনে মহাধ্যানে মগ্ন যোগীবর

অনন্ত তুষারে যেন অনন্ত শিখর।


প্রলয় নীরব মাঝে একাকী পুরুষ রাজে

ভয়ে অগ্নিভস্ম মেখে থাকে কলেবর।


শিশু শশী নাহি আর, অন্ধকার নিরাকার

এক নাহি দুই আর, প্রকৃতি নিথর।


কালোবদ্ধ বর্তমানে গোমকেশ গোমপানে

নিত্যসত্য পূর্ণজ্ঞানে পূর্ণ মহেশ্বর।


 ==============

●18>রাঙাজবা কে দিলো

রাঙাজবা কে দিলো তোর পায়

মুঠো মুঠো,

দে না মা সাধ হয়েছে

পরিয়ে দে না মাথায় দুটো।


মা ব’লে মা ডাকবো তোরে

হাততালি দে নাচবো ঘুরে,

দেখে তুই হাসবি কত

আবার বেঁধে দিবি মাথায় ঝুঁটো।


 =================

●19>রাম-রহিম না জুদা করো

রাম-রহিম না জুদা করো

দিল কো সাচ্চা রাখো জী,

হাঁ জী, হাঁ জী করতে রহো

দুনিয়াদারি দেখো জী।


যব যায়সা, তব তায়সা হোয়ে

সদা মগন মে রহেনা জী,

মাট্টি মে ইয়ে বদন বনি হায়

ইয়াদ হরদম রাখনা জী,

কেয়া জানে কব দম ছুটেগা

উসকা নাহি ঠিকানা জী।


দুশমন তেরা সাথ ফিরতা

দেখো ভাই জো সাকো জী,

দুশমন সে বাঁচানেওয়ালে

উন বিন হায় নাহি কোই জী।


 =================

●20>শিব যদি মা

শিব যদি মা তোমার স্বামী

লুটায় কেন পদতলে,

বুক পেতে দেয় ভয়ে-ভয়ে

চায় মা তোর মুখমণ্ডলে।


চরণদুটি মনোরমা

তাই বুকে কি নেছে, শ্যামা,

তোর আবার কি স্বামী উমা

মা তুমি, মা, সবাই বলে।


ধরা কাঁপে পদভরে

বাজে না কি বুকে ধ’রে,

নইলে বলো কেমন ক’রে

শিব ধরেছে হৃদকমলে।


 ==================


●21>হরি মন মজায়ে

হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়

ভবে আমি একা, দাও হে দেখা,

প্রাণসখা রাখো পায়।


কালোশশী বাজালে বাঁশি

ছিলেম গৃহবাসী করলে উদাসী,

কুল ছেড়ে আজ অকূলে ভাসি

আমার হৃদবিহারী কোথায় হরি,

পিপাসী মন তোমায় চায়।


 =================

●22>হামা দে পালায়

হামা দে পালায়, পাছু ফিরে চায়

রাণী পাছে তোলে কোলে,

রাণী কুতূহলে, ‘ধরো-ধরো’ বলে

হামা টেনে তত গোপাল চলে।


পড়ে-পড়ে যায়, ধূলা লাগে গায়

আবার ওঠে, আবার পালায়,

মোছায়ে আঁচলে, রাণী করে কোলে

ব্রজের খেলায় পাষাণ গলায়।

=========================

===================

★★★ চন্ডীদাসের গান ★★★

 

●1>কুল গেল কলঙ্ক হলো

কুল গেল কলঙ্ক হলো

ঘর গেল দূরে,

দিবানিশি মন মোর

কানুর লাগি ঘুরে।


ঘরে যদি থাকি, সদাই চমকি

গুমরি-গুমরি মরি,

আমার নাহি হেন জন

করেনি বারণ,

যেমত চোরের লাগি।

আমার কেহ নাই

ব্যথার ব্যথী কেহ নাই,

আমি চোরের নারীর মতো

পুঞ্জক ধূলায় কাঁদি।


জ্বালা কহিব কত

কত ওঠে তাপ,

বচন না সরে মুখে

বুকে খেলে সাপ।

জ্বলে যে মরিব

বিচ্ছেদ-নাগিনীর বিষে,

সজনী, আমি বড়ো সাধ ক’রে

প্রেমের পুতুল,

আমার গোপন হিয়ায়

লুকায়ে রেখেছি।

সখী রে, তার মাঝে ছিল

বেদনা-নাগিনী,

দংশালো এখন জ্বলি,

জ্বলে মরি, মরি গো।


কত গুরুজনা গঞ্জয়ে নানা

তাহা কথা কারে কই,

আমার মরণ সমান করে অপমান

বঁধুয়ার লাগে সই।

আমি সয়ে থাকি

আমার জীবন মরণ পরাণ বঁধুর,

ভবযন্ত্রণা-মোচন কারণ

মুখ চেয়ে তবু সয়ে থাকি।


আমি কাহারে কহিব,

কে বা নিবারিবে

কে জানে মনের দুখ,

আর চণ্ডীদাস কহে

করো হে ঘোষণা,

তুমি তবে তো পাইবে সুখ।


 ===========_==____

●2>ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না বঁধু

ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না বঁধু, ওইখানে থাকো,

মুকুর লইয়া চাঁদ মুখখানি দেখো।


নয়নের কাজর বয়ানে লেগেছে

কালোর উপরে কালো,

প্রভাতে উঠিয়ে ও মুখ দেখিনু

বঁধু, দিন যাবে আজ ভালো।


অধরের তাম্বুল পরাণে লেগেছে

ঘুমে ঢুলু-ঢুলু আঁখি,

আমা পানে চাও, ফিরিয়া দাঁড়াও

বঁধু, নয়ন ভরিয়া দেখি।


বঁধু, চাঁচর কেশের চিকন চূড়া

সে কেন বুকের মাঝে,

সিন্দুরের দাগ, বঁধু হে

আছে সর্বগায়ে, মোরা হ’লে ম’রি লাজে।


নীলকমল বামরু হয়েছে,

মলিন হয়েছে দেহ,

কোন রসবতী পেয়ে সুধানিধি

নিঙাড়িল অতিস্নেহ।


কুটিল নয়নে কহিছে সুন্দরী

অধিক করিয়া করা,

কহে চন্ডীদাস আপন স্বভাব

বঁধু,ছাড়িতে না পারে চোরা।


 =================

●3>মথুরা-প্রত্যাগত শ্রীকৃষ্ণ

মথুরা-প্রত্যাগত শ্রীকৃষ্ণ দরশনে

শ্যাম সোহাগিনী রাই,

বড়ো অভিমান ভরে বলে গো

বড়ো অভিমান ভরে বলে –

কি আর বলিব তোরে রে বঁধুয়া,

কি আর বলিব তোরে?

অতি অলপ বয়সে পিরীতি শিখায়া

রহিতে না দিলি ঘরে।

আমায় ঘরে রইতে দিলো না গো,

আমায় ঘরের বাহির করে দিলো

ঘরে রইতে দিলো না গো,

কালা তোমার বাঁশির টানে

ঘরে রইতে দিলো না গো,

কালা রহিতে না দিলি ঘরে।


সদা বাঘিনীর ঘরে বসত হামারি

না ছোড়ি দীর্ঘশ্বাস,

আমি কালার বিরহে জলদি না হেরি

না পরি নীলের বাস।

আমি পরে থাকি সাদাখানি

পাছে লোকমাঝে হয় জানাজানি,

তাই, পরে থাকি সাদাখানি,

তবু লোকে করে কানাকানি

তারা কেন করে কানাকানি,

বলি, তারা কি সব কানা কানী?

যারা করে কানাকানি,

বলি, তারাই কানা তারাই কানী

যারা করে কানাকানি,

তারা দেখে কি নীলের বাস।


সখী রে, আমি নীলের বসন পরি না

আমি মেঘের দিকে তাকাই না,

সখী রে আমার,

তবু লোকে কেন কানাকানি করে?

তাই স্থির করেছি,

আমি কামনাসাগরে কামনা করিব

সাধিব মনেরই সাধা,

আমি মরিয়া হইব শ্রীনন্দের নন্দন

তোমাকে সাজাব রাধা।

তখন বুঝবে বঁধু,

রাধা হয়ে বুঝবে বঁধু

এই নারী হওয়ার কেমন জ্বালা,

রাধা হয়ে বুঝবে বঁধু।


পিরীতি করিয়ে ছাড়িয়ে যাইব

রহিব কদম্বমূলে,

আমি ত্রিভঙ্গ হইয়ে বাঁশরি বাজাব

যখন যাইবি জলে।

আমি নাম ধরিয়ে ডাকবো তোমার

এই ঘাটে এসো রাধা বলে,

নাম ধরিয়ে ডাকবো তোমার

এই বাঁশরিতে ধ্বনি তুলে,

নাম ধরিয়ে ডাকবো তোমার

এই মন-কদম্বের ডালে বসে,

নাম ধরিয়ে ডাকবো তোমার।


মুরলী শুনিয়ে মোহিত হইবি

সরল কুলের বালা,

দ্বিজ চন্ডীদাস ভনে তখনই বুঝিবি

পিরীতি কেমন জ্বালা।

জনম যাবে,

তোমার কাঁদতে কাঁদতে জনম যাবে

বলি এই তো কাঁদার প্রথম শুরু,

কাঁদতে কাঁদতে জনম যাবে।

বলি পিরীত করার এমনি রীতি

কাঁদতে কাঁদতে জনম যাবে,

এই ব্রজের ধূলায় গড়া দিয়ে

কাঁদতে কাঁদতে জনম যাবে,

জয় রাধে, দয়া করো ব’লে

তোমার কাঁদতে কাঁদতে জনম যাবে।


 ==================

●4>রাধার কি হলো অন্তরে ব্যথা

রাধার কি হলো অন্তরে ব্যথা

বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে,

না শুনে কাহারো কথা।

রাই-হৃদে এত কিসের ব্যথা

থাকে বিরলে, শোনে না কথা,

শুকায়ে গেলো কনকলতা।


সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘপানে

না চলে নয়নতারা।

বুঝি লেগেছে চোখে মেঘের কাজল

কখন আঁখি হয় বা সজল,

নামবে বুঝি মেঘের বাদল।


বিরতি আহা রে রাঙাবাস পরে

আ মোর যাই,

আহা রে আহা রে

রতি নাই আহা রে,

দুখ কব কাহারে

যেমতি যোগিনী পারা।


এলাইয়া বেণী ফুলের গাঁথনি

দেখ হে খসায়ে চুলি,

হসিত বয়ানে চাহে মেঘপানে

কি কহে দুহাত তুলি।

হয়েছে একাকার

হাসিসাথে জোছনার

চাঁদ গেছে বদন তার।


একদিঠ করি ময়ূর-ময়ূরী

কণ্ঠ করে নিরীক্ষণে,

চন্ডীদাস কয় নবপরিচয়

কালিয়া বঁধুর সনে।

রাধার নূতন দেখা কালিয়া সনে

তাই যত অঘটন দেহে মনে,

নিজ পরিণাম নাহি গনে।


 ●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■


44>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(2খন্ড)ok কৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি।(২ খন্ড)

 44>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(2খন্ড)ok কৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি।(২ খন্ড)   (1 to 31)

★★★  অন্যান্য গান  ★★★


●1>আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে

●2>আমার মন-ভ্রমরা

●3>আমার মায়ের নামটি দয়াময়ী

●4>আমার সর্ব অঙ্গে

●5>আমার সাধ না মিটিল

●6>আমায় একটু জায়গা দাও

●7>আমায় দে মা পাগল ক’রে

●8>আমায় পার কর হে

●9>আমি মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

●10>আমি সব ছেড়ে মা

 ●11>আর কত ঘুরাবি শ্যামা

●12>আর কবে দেখা দিবি মা

●13>আয় মা সাধন-সমরে

●14>ইচ্ছাময়ী তারা

●15>এ মায়া প্রপঞ্চময়

●16>একতারাতে বেঁধে দিলে

●17>একবার ব্রজে চলো

●18>একবার বিরাজো গো মা

●19>ওদিকে নিমাই চলে

●20>ওদের মতো বলব না মা

●21>কতদিনে হবে

●22>কানু কহে, রাই.

●23>কালী ব’লে ডাকব না আর

●24>কালী বলো তারা বলো

●25>কী দিয়ে করি গো পূজা

●26>কোথা ভবতারা

●27>কোন রূপে মা

●28>গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি

●29>গুরুদেব দয়া করো

●30>গোবিন্দ গোকুলানন্দ

●31>জয় গুরু নিত্যানন্দ


==================

★★★  অন্যান্য গান  ★★★

 

●1>আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে

দে মা চৈতন্যময়ী,

তোর ভাব-সাগরে ভেসে আমি

হব মা তোর পদাশ্রয়ী।


অজ্ঞান মোর স্বভাব থেকে,

তোর ভাবে তুই না মা ডেকে-

অজ্ঞান মোর স্বভাব থেকে,

তোর ভাবে তুই না মা ডেকে।

জ্ঞানচক্ষু মেলে দেখি,

জ্ঞানচক্ষু মেলে দেখি –

কেমন তুই জ্ঞানদাময়ী।

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে,

দে মা চৈতন্যময়ী।


তোর ভাবের খেলা দিয়ে,

দে আমার যা কিছু সব অভাব মিটিয়ে,

কুতূহল মোর এ জীবনে,

নিয়ে নে মা তোর ও চরণে-

কুতূহল মোর এ জীবনে,

নিয়ে নে মা তোর ও চরণে।

মহানন্দে যাই চলে মা,

মহানন্দে যাই চলে মা –

হয়ে সর্ব-রিপুজয়ী।

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে,

দে মা চৈতন্যময়ী,

আমার চেতনা চৈতন্য ক’রে,

দে মা চৈতন্যময়ী।


 ===================

●2>আমার মন-ভ্রমরা

আমার মন-ভ্রমরা বেড়ায় মেতে

কালী নামের কমল ছুঁয়ে,

কালী-কালী জপ ক’রে মোর

মনের কালি যাবে ধুয়ে।


কালী আমার নামেই কালো

ত্রিজগতে বিলায় আলো,

আমার ভক্তিজবা আপনি ফুটে

রাঙা পায়ে পড়লো নুয়ে,

কালী-কালী জপ ক’রে মোর

মনের কালি যাবে ধুয়ে।


এ সংসারে ভাবনা আমার

সোঁপেছি ওই পদে শ্যামা,

যেমন মায়ের মুখে তাকায় শিশু

আনন্দে মা’র কোলে শুয়ে,

কালী-কালী জপ ক’রে মোর

মনের কালি যাবে ধুয়ে।

=====================

 

●3>আমার মায়ের নামটি দয়াময়ী

আমার মায়ের নামটি দয়াময়ী

ভোলানাথ বাবার নাম,

যেখানে মা কোল পেতেছে

সে আমার কৈলাসধাম।


কাজ কি আমার তীর্থে গিয়ে

ঘুরব কেন গয়া-কাশী,

আমার হৃদিপদ্মে আলো ক’রে

দাঁড়িয়ে আছেন এলোকেশী,

পদতলে ভক্তিভ্রমর

নাম জপিছে অবিরাম।


মন্ত্র-তন্ত্র জানি নে যে

শাস্ত্র পাঠে নেই কো রুচি,

সদানন্দে বিভোর হয়ে

মায়ে-পোয়ে সুখে আছি,

আকুল হয়ে ডাকলে ‘পরে

মা কখনো হয় কি বাম।


 ======================

●4>আমার সর্ব অঙ্গে

মা গো –

আমার সর্ব অঙ্গে লিখে দিও

কালী কালী নাম,

কালী ছাড়া মোর জীবনের

কি আর আছে দাম।


যে দিন আমি জন্মেছিলাম

মা মা বলে ডেকেছিলাম,

আবার অন্তিমকালে কালী ব’লে

যাব ছেড়ে এই ধরাধাম।


কিছু তো নেই আমার ব’লে

সবই দিলাম চরণতলে,

এবার ওপারে যাবার বাসনা, মা-

পুরাও তুমি সেই মনস্কাম,

কালী ছাড়া মোর জীবনের

কি আর আছে দাম,

কালী কালী নাম –

আমার সর্ব অঙ্গে লিখে দিও

কালী কালী নাম।


 =====================

●5>আমার সাধ না মিটিল

আমার সাধ না মিটিল

আশা না পুরিল

সকলই ফুরায়ে যায় মা,

জনমের শোধ ডাকি গো মা তোরে

কোলে তুলে নিতে আয় মা।


পৃথিবীর কেউ ভালো তো বাসে না

এ পৃথিবী ভালো বাসিতে জানে না,

যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি

সেথা যেতে প্রাণ চায় মা।


বড়ো দাগা পেয়ে বাসনা ত্যেজেছি

বড়ো জ্বালা সয়ে কামনা ভুলেছি,

অনেক কেঁদেছি কাঁদিতে পারি না

বুক ফেটে ভেঙে যায় মা।


 ====================

●6>আমায় একটু জায়গা দাও

আমায় একটু জায়গা দাও,

মায়ের মন্দিরে বসি,

আমি অনাহুত একজন

অনেক দোষেতে দোষী।


আমি সবার পিছনে থাকবো

শুধু মনে মনে মাকে ডাকবো,

কারো কাজে বাধা হ’লে

আমায় সাজা দিও যত খুশী।


ভেবো না হঠাৎ সামনে গিয়ে

মায়ের চরণ ছুঁয়ে দেবো,

দূর থেকে শুধু চোখের জলেতে

মা’র রাঙা পা ধুয়ে দেব।


শুধু আরতি যখন করবে

মা’র পূজা-দীপ তুলে ধরবে,

আমাকে দেখতে দিও

আমার মায়ের একটু হাঁসি।


 ===================

●7>আমায় দে মা পাগল ক’রে

আমায় দে মা পাগল ক’রে

আমার কাজ নাই মা জ্ঞানবিচারে।


তোমার প্রেমের সুরা, পানে কর মাতোয়ারা

ও মা, ভক্ত-চিত্ত-হরা ডুবাও প্রেমসাগরে।


তোমার এই পাগলাগারদে

কেহ হাসে, কেহ কাঁদে,

কেহ নাচে আনন্দভরে।


ঈশা-মুশা-শ্রীচৈতণ্য প্রেমভরে অচৈতন্য,

হায় কবে হব মা ধন্য মিশে তার ভিতরে।


স্বর্গেতে পাগলের মেলা

যেমন গুরু তেমনি চেলা,

প্রেমের খেলা কে বুঝতে পারে।


তুমি প্রেমে উন্মাদিণী, উমা পাগলের শিরোমণি,

প্রেমধনে কর মা ধনী কাঙাল প্রেম-দাসেরে।


 ===================


●8>আমায় পার কর হে

আমায় পার কর হে মাঝি মশয়

আমি যাত্রা করে বসে আছি (মাঝি হে )

খেয়া-ঘাটে অনেক-ক্ষণ হয়।।


দিব আমি খেয়ার কড়ি

কাঙাল বলে না কর ভয় (মাঝি হে )

যদি আসবার সময় পেয়ে থাকো

দিব কড়ি যাবার সময়।।


বেলা গেল সন্ধ্যা হল

দক্ষিণে মেঘ তুফানের ভয় (মাঝি হে)

আমায় পার করে দাও (মাঝি রে) দক্ষিণে কূল

করি তোমায় কাতর বিনয়।।


 =====================

●9>আমি মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

আমি মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই জানিনে মা

শুধু যা জেনেছি সেটুক হলো এই,

তোরে ডাকার মত ডাকতে যদি পারি

তবে আসবিনে তোর এমন সাধ্যি নেই।


যদি তোর ও মন্দিরের দ্বারে

তোমার লাগি কাঁদি অঝোর ধারে,

যদি নয়ন হতে লুপ্ত ভুবন হয়, সেই সে অশ্রুতে

তবু আমার কাছে আসবিনে, তোর এমন সাধ্যি নেই।


জানি আমার অনেক আছে দোষ

তবু মাগো তোমায় ভালবাসি,

আমি নয়ন মুদেও দেখতে সদাই পাই,

তোমারি ওই ভূবনমোহন হাসি।


আমি যা করি মা সবই তোমার কাজ,

আমার-আমার বলতে লাগে লাজ,

যদি সকল ছেড়ে ঠাঁই চেয়েছি চরণ তলাতে

তবে চির-জীবন রইবে দূরে, ও মা তোর এমন সাধ্য নেই।

====================

 

●10>আমি সব ছেড়ে মা

আমি সব ছেড়ে মা ধরব তোমার

রাঙা চরণ দুটি,

এই তো আমার ব্রত।

আমি আর নই তো রাজী শুন্য হাতে

ঘুরতে অবিরত।


আমি যা পেয়েছি জীবন ভরে

ফুটলো না তায় হৃদয় ভরে,

এখন এমন কিছু চাই মা যাহা

চিরদিনের মত।


আমি কুহক মোহে ভুলে ভুলে

দাগ কেটেছি জলে,

পান করেছি বিষয়-মধু

শুধু শান্তি পাব বলে।


আজ জীবনভরা ভুলের ডালি

তোমার পায়ে দিলাম ঢালি,

এখন তোমার কৃপায় অমৃত হোক

ব্যথার গরল যত।

=========================

 

●11>আর কত ঘুরাবি শ্যামা

আর কত ঘুরাবি শ্যামা

এবার আমায় কর না পার,

তরঙ্গে পড়েছি মাগো

জানিনে মা আমি সাঁতার।


একে দেহ জীর্ণ তরী

তাতে পাপে হলো ভারী,

কি ধরি, কি করি, মাগো

ভব-জলধি অপার।


ভেবেছিলেম যাব কাশী

হয়ে রব কাশীবাসি,

কামসিন্ধুর নীরে আসি

বসিলাম মা ফিরে আবার।

একূল-অকূল হারা আমি

মাঝে মাগো মাঝি তুমি,

কালীর ভরসা কেবল

কালী তুমি কর্ণধার।


 =======================

●12>আর কবে দেখা দিবি মা

আর কবে দেখা দিবি মা

হর-মনোরমা।


ফুরালো মা ভবের খেলা

যায় মা গো এই বেলা,

দিন দিন তনু ক্ষীণ

ক্রমে আঁখি জ্যোতিহীন,

এখনো না এলে ‘পরে

আর কি চিনিব শ্যামা।


 ==================

●13>আয় মা সাধন-সমরে

আয় মা সাধন-সমরে

দেখব মা হারে কি পুত্র হারে।


আরোহণ করিয়ে কালী সাধনরথে

ভজন পূজন দুটি অশ্ব জুড়ে তাতে,

দিয়ে জ্ঞানধনুকে টান

ভক্তিব্রহ্মবাণ বসেছি ধ’রে।


মা দেখব তোমায় রণে

শঙ্কা কি মরণে,

ডঙ্কা মেরে লব মুক্তিধন

তাতে রসনা ঝঙ্কারে,

কালীনাম হুঙ্কারে

কার সাধ্য আমার রণে রণ।


বারে বারে রণে তুমি দৈত্যজয়ী

এবার আমার রণে এস ব্রহ্মময়ী,

ভক্ত রসিকচন্দ্র বলে –

তোমারই বলে মা জিনিব সমরে।


 ===================

●14>ইচ্ছাময়ী তারা

ইচ্ছাময়ী তারা, তোর

ইচ্ছা কে বুঝিতে পারে।


একবার মুখে দুর্গা ব’লে

কালকেতু তোর চরণ পেলে,

কেউ বা যোগসমাধি ফলে

পায় না দেখা যুগান্তরে।


শ্রীমন্তে কমল বনে

দেখা দিয়ে দাও শ্মশানে,

আবার দয়া করে পরক্ষণে

চরণে রেখেছ তারে।


তোমার ইচ্ছা জগৎকল্প

আমার ইচ্ছা অতি অল্প,

শ্রীচরণে দিব কল্প

জীবনের শেষবাসরে।


 ====================

●15>এ মায়া প্রপঞ্চময়

এ মায়া প্রপঞ্চময়,

ভব-রঙ্গমঞ্চ মাঝে

রঙ্গের নট নটবর হরি,

যারে যা সাজান

সে তাই সাজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


মাতৃসাজে সেজেছিস মা

করিতে স্নেহের অভিনয়,

কর্মক্ষেত্রে কর্মসূত্রে

আমি তোর সেজেছি তনয়।

এই নাটকের এই অঙ্কে

স্থান পেয়েছি মা তোর অঙ্কে,

হয়ত যাব পর অঙ্কে,

পর-অঙ্কে পুত্র সেজে

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


কর্মক্ষেত্রে জীবমাত্রে

মায়াসূত্রে সবাই গাথাঁ

কেহ পুত্র, কেহ মিত্র,

কেহ ভার্যা, কেহ ভ্রাতা।

কেউ সেজে এসেছেন পিতা

কেহ স্নেহময়ী মাতা,

কত রঙ্গের অভিনেতা

আসেন কত সাজে সেজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


যার যখন হতেছে সাঙ্গ

এ রঙ্গভূমির অভিনয়,

কাকস্য পরিবেদনা

তখন সে আর কারো নয়।

কোথা রয় প্রেয়সীর প্রণয়

পুত্র-কন্যার কাতর বিনয়,

শোনে না সে কারো অনুনয়

চলে যায় সাজশয্যা ত্যেজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


না হইলে করমশেষ

কত যাব মা কত আসব,

সঙ সেজে সংসার মাঝে

কত হাসব কত কাঁদব।

ভূষণ বলে যবে আসব

মায়ামোহ তবে নাশব,

মহাযোগে তবে বসব

মিশব হরির পদরজে,

এ মায়া প্রপঞ্চময়।


 ======================

●16>একতারাতে বেঁধে দিলে

একতারাতে বেঁধে দিলে দোতারারই সুর,

একই দেহে রাম আর কৃষ্ণ সুমধুর।


সরযু নদীতে নেমে দেহ শীতল হয়,

আবার বৃন্দাবনের কুঞ্জ ছুঁয়ে প্রেমযমুনা বয়।

শান্তি বারি দু’টির বুকে ক্লান্তি করে দূর,

একই দেহে রাম আর কৃষ্ণ সুমধুর।


জীবে-শিবে এক ক’রে ঘুচালে বিভেদ

সরল কথায় সৃষ্টি ক’রে গেলে পঞ্চবেদ,

অবতার বরিষ্ঠায় তোমারে প্রণাম

একই দেহে কৃষ্ণ তুমি, একই দেহে রাম।

সরল কথা শুনে তোমার ভ্রান্তি হলো দূর

একই দেহে রাম আর কৃষ্ণ সুমধুর।


 =================

●17>একবার ব্রজে চলো

একবার ব্রজে চলো ব্রজেশ্বর

দিনেক দুয়ের মতো,

তোমার মন থাকে তো, থাকবে সেথা

নইলে আসিবে দ্রুত।


আমরা ধ’রে রাখিবো না হে,

প্রেম ধরা-বাঁধায় রয় না বঁধু

কেউ তো ধরে রাখিবো না হে।


যদি বলো নাথ চলিতে চরণ

ধূলায় ধূসর হবে,

না হয়, ব্রজগোপিনীর নয়নজলে

চরণ প্রক্ষালিবে।


চরণ ধোয়াইয়ে দিব

কৃষ্ণ ব’লে কেঁদে কেঁদে,

নয়নজলে চরণকমল ধোয়াইয়ে দিব।


যদি বলো নাথ তপন তাপে

বদন শুকাইবে,

না হয়, শীতল-বংশী-বটের ছায়ায়

ক্ষণিক প্রাণ জুড়াবে।


আজও তেমন ছায়া বিলায়

জুড়াতে শরণাগতে,

ও সে, স্বভাব ভুলে হয় নি বিরূপ।


না হয়, শ্রীদাম সুদাম দাম গো সুদাম

আলিঙ্গন করিবে,

আর মা যশোদা পিত্যানন্দের

চরণধূলি লবে।


তারা আশাপথপানে চেয়ে আছে

ব্রজের দুলাল ফিরবে ব্রজে,

এই আশে তারা চেয়ে আছে।


 ====================

●18>একবার বিরাজো গো মা

একবার বিরাজো গো মা

হৃদি কমলাসনে,

তোমার ভুবন ভরা রূপটি একবার

দেখে লই মা নয়নে।


তুমি অন্নপূর্ণা মা, শ্মশানের শ্যামা

কৈলাসেতে উমা, তুমি বৈকুণ্ঠে রামা,

ধরো বিরিঞ্চি-শিব-বিষ্ণু রূপ

সৃজন-লয় পালনে।


তুমি পুরুষ কি নারী বুঝিতে নারি,

স্বয়ং না বুঝালে তা কি বুঝিতে পারি?

তুমি আধা-রাধা আধা-কৃষ্ণ

সাজিলে বৃন্দাবনে।


তুমি জগতের মাতা, যোগীজনানুগতা

অনুগত জনে কৃপা কল্পলতা,

তোমায় মা বলে ডাকিলে নাকি

কোলে নাও ভকতজনে।


দুঃখ-দৈনহারিনী, চৈতন্যকারিনী

অন্য কিছু চাই না বিনা চরণ দুখানি,

আমি প্রেম-সরোজে সাজাবো পদ

বাসনা মনে-মনে।


পরিব্রাজক-ভিখারী সাধ মনেতে ভারি

মধু হাসিমাখা মা’র মুখ খানি হেরি,

বসে মায়ের কোলে, মা-মা বলে

মাতিব যোগধ্যানে।


 ======================

●19>ওদিকে নিমাই চলে

আহা, ওদিকে নিমাই চলে

মুখে হরি, হরি বলে,

নাম শুনে পাষাণও যে গলে।

ভবরসে আঁখিতারা

উছলিছে প্রেমধারা,

দশদিশি সে হেরে শ্যামলে।


শ্যাম তৃণ হেরি,

শ্যাম ভাবি গোরা

চরণ ফেলিতে নারে।

আর নীলমণি হেরি,

গগনের নীলে

ঝরে আঁখিনীরধারে।

বলে চরণে কেন,

বঁধু হে, তুমি চরণে পড়িয়া কেন,

ওগো মান-অভিমান

নাই কো আমার,

তবু হে বন্ধু চরণে কেন।

ওগো, আমি যে তোমার প্রেমরাধা,

বঁধু গোকুলে যে প্রেম

হলো না কো সাধা,

নদীয়ায় হবে সাধা।


আহা নিজের ছায়ারে

শ্যাম ভাবি গোরা

ধূলায় মূর্তি করে।

ভাবে ধূলার পরশে

শ্যাম পরশন,

সুখে গড়াগড়ি করে।

বলে এই তো ভালো,

কেঁদে বলে, বঁধু এই তো ভালো

তোমার পরশ মিলায় হরষ

সুধা ঢালো,

বঁধু এই তো ভালো।


আহা, তমালে হেরি শ্যামল

ভাবি বাঁধে সে বাহুপাশে,

বলে মথুরায় যেতে দেব না

হরি কাঁদিয়া সে যে হাসে।

মিলন হবে,

এই নদীয়ায় মিলন হবে।

সে যে কেঁদে বলে

হরি বল রে,

ওরে, পাপী-তাপী শোকে-দুঃখে তোরা

হরি বল, হরি বল, রে।

আজি প্রেমের নিঝর

পরাণে বহুক,

নয়নে ঝরুক জল রে।


আহা, পুরবাসী-পুরনারী

নাম শুনে হায়,

বলে, গোরারূপে শ্যাম এলো

প্রেম নদীয়ায়।

তোরা হরি বল, হরি বল,

জীবের জীবন সে যে

হরি বল, হরি বল,

আহা, পারের তরণী সে যে

হরি বল, হরি বল।


 ====================

●20>ওদের মতো বলব না মা

ওদের মতো বলব না মা

আমায় তুমি করো পার,

ভবের সকল কাজেই যদি

মানতে হয় মা আমায় হার।


ভক্তি রূপের সিঁধকাঠিতে

তোর বিভব যারা চুরি করে,

কার্যসিদ্ধি করতে তারাই

তোর দুটি পা স্মরণ করে,

আমি তোর জিনিসে চোর হয়ে মা

ও মা, চাইব না দান তোর দয়ার।


লজ্জাহীনা এমনি মা তুই

স্বামীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকিস,

পুত্র গর্বে গরবিনী

ছেলে কেটে রক্ত মাখিস।


আমার মুন্ড মা তোর মালায় রবে

দুহাত হবে কোটিবার,

সেই মুখেতেই বলব ‘মা’ ‘মা’,

সেই হাতে তুই অর্ঘ্য চাস,

আমি খেয়ায় কড়ি দিয়ে মা গো

হব না মা আর ডুবে পার।

======================


●21>কতদিনে হবে

কতদিনে হবে সে প্রেম সঞ্চার

হয়ে পূর্ণকাম বলবো হরিনাম

নয়নে বহিবে প্রেম-অশ্রুধার।


কবে হবে আমার শুদ্ধ প্রাণমন

কবে যাব’ আমি প্রেমের বৃন্দাবন,

সংসার-বন্ধন হইবে মোচন

জ্ঞানাঞ্জনে যাবে লোচন-আধার।


কবে পরশমণি করি পরশন

লৌহময় দেহ হইবে কাঞ্চন,

হরিময় বিশ্ব করিব দর্শন

লুটাইব ভক্তিপথে অনিবার।


কবে যাবে আমার ধরম করম

কবে যাবে জাতি-কূলের ভরম,

কবে যাবে ভয় ভাবনা শরম

হরি হরি অভিমান লোকাচার।


মাখি সর্ব-অঙ্গে ভক্ত-পদধূলি

কাঁধে লয়ে চির-বৈরাগ্যের ঝুলি,

পিব প্রেমবারি দুই হাতে তুলি

অঞ্জলি-অঞ্জলি প্রেম যমুনার।


প্রেমে পাগল হয়ে হাঁসিব কাঁদিব

সচ্চিদানন্দ-সাগরে ভাসিব,

আপনি মাতিয়ে সকলে মাতাব

হরিপদে নিত্য করিব বিহার।


 =====================

●22>কানু কহে, রাই

কানু কহে, রাই কহিতে ডরাই –

ধবলী চরাই মুই।

আমি তোমার প্রেমের কি বা জানি?

আমি রাখাল বই তো নই,

আমি রাখাল বই তো –

ধেনু রাখার রাখাল বই নই তো রাই।

আমি রাখাল বই তো নই।


আমি রাখালিয়া মতি,

না জানি পিরিতি –

রাধে, প্রেমের পসরা তুই।

রাধে, তুমি মহাজন

প্রেমের তুমি মহাজন,

যে কর ভর্ৎসন

সুধাসম মোহে লাগে ।

রাধে তুমি আমার প্রেমের গুরু।

প্রেম করা শেখায়েছ তাই

তুমি আমার প্রেমের গুরু।


মোর নাগরালী বাধালি

রাধে গরবিনী

ওহে প্রেমময়ী রাই,

কিশোরী পিরিতি রভস রাগে

প্রেম শুধিব শুধিব মনেতে করিলাম

বন্দী হইলাম ঋণে ।

তোমার প্রেম-ঋণ আমি শুধিতে নারিলাম ।

এজনমের মত বিকায়ে রইলাম।


কান্ত কহে, কানু গৌরাঙ্গ হলে খালাস পাইবে ঋণে

যেদিন কালো ছেড়ে গৌর হবে

তুমি খালাস পাবে যেদিন নদে গিয়ে উদয় হবে

সেদিন খালাস পাইবে ঋণে।


 ====================

●23>কালী ব’লে ডাকব না আর

কালী ব’লে ডাকব না আর

ডাকব এবার কালা ব’লে,

ডেকে ডেকে হলাম সারা

সারা জনম ম’লাম জ্বলে।


তুই যদি মা হানলি হেলা

তোর তরে কেন অশ্রু ফেলা,

কাঁদব এবার কালার তরে

পূজব আমি নয়নজলে।


তোর কাছে আর আসব না মা

শ্যামের ঘরে যাব শ্যামা,

কালার ঘরে যাবো শ্যামা।


গোকুলেতে রইব পড়ে,

অভয়চরণ স্মরণ করে

কালা যদি করে হেলা,

যাব আমি রসাতলে।


 =================

●24>কালী বলো তারা বলো

কালী বলো তারা বলো মন রে আমার,

হাসিমাখা বদনে ছলোছলো নয়নে,

আনন্দ কাননে, মন ঘোরো অনিবার।


গতি নাই গতি নাই কালী নাম ছাড়া,

ও মন আমার,

কণ্ঠ ভরিয়া গাও হয়ে আত্মহারা।

ওই দেখো তোমার বন্ধু তরিতেছে ভবসিন্ধু,

একবিন্দু আশা তুমি করিও না আর।


কেউ তো কারো নয় – একথাটি সত্য,

বুঝেও তো বোঝো না মন তুমি যে ওই নিত্য,

ওই দেখো শ্মশানে কি বা নিশিদিনে,

পুড়িতেছে মানবের যত অহংকার।


আর কতদিন তুমি রবে ধরাধামে,

মরণ তোমার সত্য মজ কালীনামে,

ভবা পাগলা কহে প্রাণ থাকিতে দেহে

কালীনামে ভরিয়া দাও বিষয় সংসার।


 ====================৻==

●25>কী দিয়ে করি গো পূজা

কী দিয়ে করি গো পূজা

কি আছে আমার,

যা কিছু আছে গো আমার

সবই যে তোমার।


তোমারে হৃদয়ে মাগো

করি তোমার ধ্যান,

তোমারি রসনা লয়ে

করি তোমার নাম,

তোমার এ নয়ন ভরে

দেখি আমি তোমারে,

তোমারি কন্ঠেতে মা

গাই তোমার গান।


মিনতি ভকতি স্তুতি

সবই গো মা তুমি,

আমি তো আমার যাহা

সবই গো মা তুমি,

বল মা কি দিয়ে তবে

পূজিব তোমায় শিবে,

তুমি গো তোমার পূজা

করো মা এবার।


 ====================

●26>কোথা ভবতারা

কোথা ভবতারা দুর্গতি-হরা,

কতদিনে তোর করুণা হবে?

কবে দেখা দিবি, কোলে তুলে নিবি,

সকল যাতনা জুড়াবি?


মায়ার সংসারে কর্ম কোলাহলে

শ্রীপদ দুখানি রয়েছি গো ভুলে,

বিবেক-বৈরাগ্য তুমি নাহি দিলে

মোহ-ভ্রান্তি কিসে ছুটিবে?


আয়ু-সূর্য মোর বসিতেছে পাটে

কোথা ব্রহ্মময়ী, এসো তুমি ছুটে,

তনয়ে তারো মা এব সংকটে

তুমি বিনে কে আর তরিবে?


 ===================


●27>কোন রূপে মা

কোন রূপে মা দিবি দেখা

বল সারদা শ্যামাসুতা,

বিন্দুবাসিনী মা দেবী

সরলা বিমলা স্নিগ্ধা,

দেবজনে দেবেশ্বরী

রামকৃষ্ণে হৃদয়যুক্তা।


জয়ন্তী মঙ্গলাকালী

ব্যাপ্ত-চরাচরেশ্বরী,

ক্ষান্তিশান্তি প্রদায়িনী

সর্ববিদ্যা জ্ঞানেশ্বরী।


সৃষ্টিস্থিতি প্রকটিনী

প্রলয়ে প্রলয়েশ্বরী,

ধনদাত্রী প্রেমদাত্রী

সকল হৃদয়েশ্বরী।


চক্রিণী কুটিনী তুই মা

সর্বজীবে জীবেশ্বরী,

দুর্গশিবা ক্ষমধাত্রী

ক্লান্তি-শ্রান্তি দুঃখহারিণী।


ছিন্নমস্তা বগলা মা

বিশ্বরূপা গয়েশ্বরী,

কৌমারী শঙ্খীনী উমা

শ্যামাকালী বিশ্বেশ্বরী।


জ্যোতিদ্যুতি আলোকছায়া

তুই মা মায়া, তুই মা লীলা,

চিত্তসত্য শুদ্ধিমুক্তি

তুই মা ধ্যানে যোগেশ্বরী।


শান্তানিদ্রাঘোরা দেবী

শঙ্করী মা ঢাকেশ্বরী,

সঙ্কটমোচিনী মা তুই

জয় বিশ্বপ্রসবিনী।


জন্মমৃত্যুজরাতীতা

খ্যাতি-ভ্রান্তি-বিকারচ্যুতা,

ছিন্নমস্তা চণ্ডী তুই মা

অমঙ্গলে মঙ্গলেশ্বরী।


অশুচি মা হীনদীন

রক্ষ ক্রোড়ে সকল ক্ষীণ,

দুর্বলে অধমে কৃপা

করো মা গো চিরন্তনী।


জয় লক্ষ্মী জয় দুর্গা

জয় দাত্রী গিরিসুতা,

ক্ষেমঙ্করী সারদেশ্বরী

গুরুর গুরু তুই সারদা।


সারদা সারদা জয় মা।


 ===================

●28>গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি

গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি

কাশী কাঞ্চি কে বা যায়,

কালী কালী কালী ব’লে

অজপা যদি ফুরায়।


ত্রিসন্ধ্যা যে বলে কালী

পূজা-সন্ধ্যা সে কি চায়,

সন্ধ্যা তার সন্ধানে ফেরে

কভু সন্ধি নাহি পায়।


কালী নামে এত গুণ

কে বা জানতে পারে তায়,

দেবাদিদেব মহাদেব যার

পঞ্চমুখে গুণ গায়।

জপ-যজ্ঞ-পূজা-হোম

আর কিছু না মনে লয়,

মদনের যাগযজ্ঞ

ব্রহ্মময়ীর রাঙা পায়।


 ==================

●29>গুরুদেব দয়া করো

অখণ্ড মণ্ডলাকারম্

ব্যাপ্তম্ যেন চরাচর,

তৎ পদম্ দর্শিতম্ যেন

তস্মই শ্রী গুরুবে নমোহ।


ভব-সাগর-তারণ-কারণ হে

রবি-নন্দন-বন্ধন-খণ্ডন হে,

শরণাগত কিঙ্কর ভীত মনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


হৃদিকন্দর-তামস-ভাস্কর হে

তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে,

পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


মন-বারণ-শাসন-অঙ্কুশ হে

নরত্রাণ তরে হরি চাক্ষুষ হে,

গুণগান-পরায়ণ দেবগণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


কুলকুণ্ডলিনী-ঘুম-ভঞ্জক হে

হৃদি-গ্রন্থি-বিদারণ-কারক হে,

মম মানস চঞ্চল রাত্রদিনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


রিপু-সূদন-মঙ্গল-নায়ক হে

সুখ-শান্তি-বরাভয়-দায়ক হে,

ত্রয়তাপ হরে তব নাম গুণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


অভিমান-প্রভাব-বিমর্ধক হে

গতিহীন জনে তুমি রক্ষক হে,

চিত-শঙ্কিত-বঞ্চিত-ভক্তিধনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


তব নাম সদা শুভ-সাধক হে

পতিতাধম-মানব-পাবক হে,

মহিমা তব গোচর শুদ্ধ মনে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


জয় সদ্‌গুরু ঈশ্বর-প্রাপক হে

ভব-রোগ-বিকার-বিনাশক হে,

মন যেন রহে তব শ্রীচরণে

গুরুদেব দয়া করো দীনজনে।


 =====================

●30>গোবিন্দ গোকুলানন্দ

গোবিন্দ গোকুলানন্দ, নবঘনশ্যাম তুমি

তুমি নবঘনশ্যাম, গোপী-নয়নাভিরাম

বৃন্দাবন-বনচারী ঘনশ্যাম।


আশা বংশী বটমূলে

বাজাও মুরলী রাধা ব’লে,

যেন মায়ার কুঠারে কাটিয়া ফেলে

আমার প্রেম-তরুলতাখানা,

তুমি দাও প্রভু বেড়া, কর মনঘেরা

যেন পাপ-তাপ-শোক তার না, লাগে না।


কেশী কংস নিধনকারী

যুগে-যুগে অবতারো হরি,

তব চরণ-লহরে বহে যমুনা বারি

মোর মন-যমুনাকে বহাও শ্যাম,

আনন্দ নবঘনশ্যাম।


তুমি গোকুলানন্দ হে শ্রীগোবিন্দ

তুমি আনন্দ-নবঘনশ্যাম,

তুমি গোপী-প্রাণধন, ব্রজের জীবন

তুমি ব্রজগোপীর নয়নাভিরাম,

তুমি শ্রীরাধার নয়নাভিরাম

আনন্দ নবঘনশ্যাম।


 =====================

●31>জয় গুরু নিত্যানন্দ

জয় গুরু নিত্যানন্দ

গৌর হরি হরিবোল,

নিতাই আমার পরম দয়াল

গুরুরূপে কলির জীবকে দিলেন কোল।


প্রেমানন্দে বাহুতুলে

একবার ডাকো তাঁরে,

প্রেমানন্দে বাহুতুলে

গৌর হরি হরিবোল।


প্রভাতে ওই নব রবি

থাকো গৌর প্রেমের ছবি,

আনন্দে উচ্ছল হবি

হৃদয় হবে আনন্দভোর।


নিতাই যদি দয়া করে

গৌর রবে না দূরে,

নিতাইয়ের দয়া হ’লে

গৌর তোরে দেবেন কোল।


আনন্দে বলো গৌর হরি

নিতাইয়ের চরণ ধরি,

নিতাইচাঁদ দয়াল বড়ো

গৌর তোরে দেবেন কোল।


একবার হরিবোল

জয় গুরু নিত্যানন্দ,

গৌর হরি হরিবোল।


 

●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

■■■■■■■■■■■■■■■■■■



43>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(3খন্ড)ok কৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি। = (৩খন্ড)(1 to 50)

 


43>কিছু শ্যমাসঙ্গীত,(3খন্ড)ok কৃষ্ণগান, ভক্তি গীতি। = (৩খন্ড)(1 to 50)

★★★ জয় জয় গোবিন্দ ★★★(3খন্ড)

★1>(শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম)

★2>জাগো হে এই নগরবাসী

★3>জেনেছি জেনেছি তারা

★4>ডুব-ডুব-ডুব

★5>তোর কোলে লুকায়ে থাকি

★6>তোর পদতলে আছি পড়ে

★7>তোর মতো মা এত আপন

★8>ত্রিনয়নী দুর্গা,

★9>দেখা দে মা

★10>দীনবন্ধু কৃপাসিন্ধু

★11>দুরিতবারিনী

★12>দোষ কারো নয়

★13>নয়ন তুলে দেখ মা শ্যামা

★14>নয়নাভিরাম

★15>নেচে নেচে আয় মা শ্যামা

★16>পাখি তুই ঠিক বসে থাক

★17>পূজিব তোমারে শ্যামা

★18>প্রেম ভরে মন রে গাহ

★19>ফিরে যা কমলাকান্ত

★20>ভয়ঙ্করী তোরে কালী

★21>বড় ধুম লেগেছে

★22>বড়ো হতে চাই না

★23>বারে বারে যে দুখ

★24>বিফলে দিন যায়

★25>ভজ গৌরাঙ্গ

★26>ভজ রাধাকৃষ্ণ গোপালকৃষ্ণ

★27>ভেবে দেখ মন

★28>মন চল নিজ নিকেতনে

★29>মনের বাসনা শ্যামা

★30>মরিব মরিব সখী

★31>মা আছেন আর আমি আছি

★32>মা মা বলে ডাকি

★33>মাগো আনন্দময়ী

★34>মাধব হে

★35>মায়ের পায়ের জবা হয়ে

★36>যখন দুচোখ ভ’রে

★37>মুরলী বাজে

★38>যতনে হৃদয়ে রেখো

★39>যদি ডাকার মতো পারিতাম ডাকতে

★40>যে কটা দিন।

★41>রঙ দিও না শ্যাম

★42>রাই জাগো গো

★43>শ্যামা নামের লাগল আগুন

★44>শ্যামা মন-ছাঁচে তোমাকে ফেলে

★45>শিব, শিব, মহাশিব

★46>সকলি তোমারি ইচ্ছা

 ★47>সখাসঙ্গে খেলা করে

★48>সখী লোকে বলে কালো

★49>সময় তো থাকবে না

★50>হরি হে।


===================

■■■ জয় জয় গোবিন্দ ■■■(3খন্ড)

★1>(শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম)

জয় জয় গোবিন্দ গোপাল গদাধর

কৃষ্ণচন্দ্র করো কৃপা করুণাসাগর,

জয় রাধে গোবিন্দ গোপাল বনমালী

শ্রীরাধার প্রাণধন মুকুন্দ মুরারী,

হরিনাম বিনে রে ভাই, গোবিন্দনাম বিনে

বিফলে মনুষ্যজন্ম যায় দিনে দিনে।


শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন

যশোদা রাখিল নাম যদু বাছাধন,

উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর গোপাল

ব্রজবালক নাম রাখে ঠাকুর রাখাল,

সুবল রাখিল নাম ঠাকুর কানাই

শ্রীদাম রাখিল নাম রাখাল রাজা ভাই,

ননীচোরা নাম রাখে যতেক গোপিনী

কালাসোনা নাম রাখে রাধা বিনোদিনী,

কুব্জা রাখিল নাম পতিতপাবনহরি

চন্দ্রাবলী নাম রাখে মোহন বংশীধারী,

অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া

কৃষ্ণনাম রাখে গর্গ ধ্যানেতে জানিয়া,

কণ্বমুনি নাম রাখে দেব চক্রপাণি

বনমালী নাম রাখে বনের হরিণী,

গজহস্তী নাম রাখে শ্রীমধুসূদন

আজমিনা নাম রাখে দেব নারায়ণ।


পুরন্দর নাম রাখে দেব শ্রীগোবিন্দ

দ্রৌপদী রাখিল নাম দেব দীনবন্ধু,

সুদাম রাখিল নাম দারিদ্রভঞ্জন

ব্রজবাসী নাম রাখে ব্রজের জীবর,

দর্পহরি নাম রাখে অর্জুন সুধীর

পশুপতি নাম রাখে গরুড় মহাবীর,

যুধিষ্ঠির নাম রাখে দেব রূরবর

বিদুর রাখিল নাম কাঙালের ঠাকুর,

বাসুকী রাখিল নাম দেব সৃষ্টিস্থিতি

ধ্রুবলোকে নাম রাখে ধ্রুবের সারথি,

নারদ রাখিল নাম ভক্ত-প্রাণধন

বিশ্বদেব নাম রাখেন লক্ষ্মীনারায়ণ,

সত্যভামা নাম রাখে সত্যের সারথি

জাম্ববতী নাম রাখে দেব যোদ্ধাপতি,

বিশ্বামিত্র নাম রাখে সংসারের সার

অহল্যা রাখিল নাম পাষাণ-উদ্ধার।


ভৃগুমুনি নাম রাখে জগতের হরি

পঞ্চমুখে রাম নাম গান ত্রিপুরারি,

কুঞ্জকেশী নাম রাখে বলি সদাচারী

প্রহ্লাদ রাখিল নাম নৃসিংহমুরারী,

বশিষ্ঠ রাখিল নাম মুনি মনোহর

বিশ্বাবসু নাম রাখে নব জলধর,

সম্বতর্ক নাম রাখে গোবর্ধনাধারী

প্রাণপতি নাম রাখে যত ব্রজনারী,

অদিতি রাখিল নাম অরাতিসূদন

গদাধর নাম রাখে যমল-অর্জুন,

মহাযোদ্ধা নাম রাখে ভীম মহাবল

দয়ানিধি নাম রাখে দারিদ্রসকল,

বৃন্দাবনচন্দ্র নাম রাখে বৃন্দাদ্যুতি

বীরজা রাখিল নাম যমুনার পতি,

বাণীপতি নাম রাখে গুরু বৃহস্পতি

লক্ষ্মীপতি নাম রাখে সুমন্ত সারথি।


সন্দীপনি নাম রাখে দেব অন্তর্যামী

পরাশর নাম রাখে ত্রিলোকের স্বামী,

পদ্মযোনি নাম রাখে অনাদির আদি

নটিনারায়ণ নাম রাখে সম্পতি,

হরেকৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম

ললিতা রাখিল নাম দুর্বাদলশ্যাম,

বিশাখা রাখিল নাম অনঙ্গমোহন

সুচিত্রা রাখিল নাম শ্রীবংশীবদন,

আয়ান রাখিল নাম ক্রোধনিবারণ

চণ্ডাকেশী নাম রাখে কৃতান্তশাসন,

জ্যোতিষ্ক রাখিল নাম নীলকান্তমণি

গোপীকান্ত নাম রাখে সুদাম-ভরণী,

ভক্তগণ নাম রাখে দেব জগন্নাথ

দুর্বাশা রাখিল নাম অনাথের নাথ,

রাসেশ্বর নাম রাখে যতেক মালিনী

সর্বযজ্ঞেশ্বর নাম রাখেন শিবানী।


উদ্ধব রাখিল নাম মিত্রহিতকারী

অক্রূর রাখিল নাম ভবভয়হারী,

গুঞ্জমালী নাম রাখে নীলপীতবাস

সর্ববিদ্যা নাম রাখে দ্বৈপায়ণ ব্যাস,

অষ্টসখী নাম রাখে ব্রজের ঈশ্বর

সুরলোকে নাম রাখে অখিলের সার,

বৃষভানু নাম রাখে পরম ঈশ্বর

স্বর্গবাসী নাম রাখে দেব পরাৎপর,

পুলন রাখিল নাম অনাথের সখা

রসসিন্ধু নাম রাখে সখী চিত্রলেখা,

চিত্রলোক নাম রাখে অরাতিদমন

পুলস্ত্য রাখিল নাম নয়নরঞ্জন,

কাশ্যপ রাখিল নাম রাস-রাসেশ্বর

ভাণ্ডারিক নাম রাখে পূর্ণ শশধর,

সুমালী রাখিল নাম পুরুষপ্রধান

পুরঞ্জন নাম রাখে ভক্তগনপ্রাণ।


রজকিনী নাম রাখে নন্দের দুলাল

আহ্লাদিনী নাম রাখে ব্রজের গোপাল,

দৈবকী রাখিল নাম নয়নের মণি

জ্যোতিষ্ময় নাম রাখে যাজ্ঞবল্ক মুনি,

অত্রিমণি নাম রাখে কোটি চন্দ্রেশ্বর

গৌতম রাখিল নাম দেব বিশ্বম্ভর,

মরীচি রাখিল নাম অচিন্ত্য-অচ্যুত

জ্ঞানাতীত নাম রাখে সনকাদি সুর,

রুদ্রগণ নাম রাখে দেব চক্রপাণি

বসুগণ নাম রাখে ঠাকুর দয়াল,

সিদ্ধগণ নাম রাখে পুতনা-নাশন

সিদ্ধার্থ রাখিল নাম কপিল কপোধন,

ভাগরী রাখিল নাম অগতির গতি

মৎস্যগন্ধা নাম রাখে ত্রিলোকের পতি,

শুক্রাচার্য নাম রাখে অখিলবান্ধব

বিষ্ণুলোকে নাম রাখে দেব শ্রীমাধব।


যদুগণ নাম রাখে যদুকুলপতি

অশ্বিনীকুমার নাম রাখে সৃষ্টিস্থিতি,

অর্জমা রাখিল নাম কালনিবারণ

সত্যবতী নাম রাখে অজ্ঞাননাশন,

পদ্মাক্ষ রাখিল নাম ভ্রমর-ভ্রমরী

ত্রিভঙ্গ রাখিল নাম যত সহচরী,

বঙ্কচন্দ্র নাম রাখে শ্রীরূপমঞ্জরী

মাধুরী রাখিল নাম গোপী-মনহরী

মঞ্জুমালী নাম রাখে অভীষ্টপূরাণ

কুটিলা রাখিল নাম মদনমোহন,

মঞ্জরী রাখিল নাম কর্মবন্ধনাশ

ব্রজবন্ধু নাম রাখে পূর্ণ-অভিলাষ,

হরেকৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম

রাখাল রাজা নাম রাখে ভক্ত শ্রীরাম।


 ==================

★2>জাগো হে এই নগরবাসী

জাগো হে এই নগরবাসী,

মুখে জয় রাধা, শ্রীরাধা বইলা

পোহাইল নিশি।


পূবেতে বন্দনা করি

পূবের দিবাকর,

একদিকে উদয় ভানু

চৌদিকে প্রকাশ।


উত্তরে বন্দনা করি

কৈলাসশিখর,

তার পাছে বন্দনা করি

শিব আর পার্বতী।


দক্ষিণে বন্দনা করি

কালিদয় সাগর,

পাখি হইয়া উড়ে পড়ে

নাহি বালুচর।


পশ্চিমে বন্দনা করি

ঠাকুর জগন্নাথ,

তার পাছে বন্দনা করি

শ্রী গুরুর চরণ।


 ==================

★3>জেনেছি জেনেছি তারা

জেনেছি জেনেছি তারা

তুমি জান ভোজের বাজি,

যে তোমায় যেভাবে ডাকে

তাতে তুমি হও মা রাজি।


মগে বলে ফারা তারা

গড বলে ফিরিঙ্গি যারা,

খোদা বলে ডাকে তোমায়

মোঘল পাঠান সৈয়দ কাজি।


শাক্তে বলে তুমি শক্তি

শিবে তুমি শৈবে আরতি,

শরীর বলে সূর্য্য তুমি

বৈরাগী কয় রাধিকাজী।


গাণপত্য বলে গণেশ

যক্ষ বলে তুমি ধনেশ,

শিল্পী বলে বিশ্বকর্মা

বদর বলে নায়ের মাঝি।


শ্রী রামদুলাল বলে

বাজি নয় এ যেন ফলে,

এক ব্রহ্ম দ্বিধা ভেবে

মন আমার হয়েছে পাজি।


 ==================

★4>ডুব-ডুব-ডুব

ডুব-ডুব-ডুব ডুব সাগরে আমার মন,

তলাতল পাতাল খুঁজলে,

পাবি রে প্রেম রতন ধন।


খোঁজ-খোঁজ-খোঁজ খুঁজলে পাবি

হৃদয়-মাঝে বৃন্দাবন,

দীপ-দীপ-দীপ জ্ঞানের বাতি

জ্বলবে হৃদে অনুক্ষণ।


ড্যাং ড্যাং ড্যাং ড্যাঙায় ডিঙে

চালায় বল সে কোন জন?

কুবীর বলে শোন শোন শোন,

ভাব গুরুর শ্রীচরণ।


 ====================

★5>তোর কোলে লুকায়ে থাকি

তোর কোলে লুকায়ে থাকি

চেয়ে চেয়ে মুখপানে

মা মা বলে ডাকি,

তোর কোলে লুকায়ে থাকি।


ডুবে চিদানন্দরসে

মহাযোগে নিদ্রাবশে,

দেখি রূপ অনিমেষে

নয়নে নয়ন রাখি,

তোর কোলে লুকায়ে থাকি।


দেখে শুনে ভয় করে

প্রাণ কেঁদে ওঠে ডরে,

মাগো রাখো

আমায় বুকে ধরে,

স্নেহে অঞ্চলে ঢাকি,

তোর কোলে লুকায়ে থাকি।


 =====================

★6>তোর পদতলে আছি পড়ে

তোর পদতলে আছি পড়ে

ডাকছি দিবারাত্রি ধরে,

কাঁদছি কেবল মা,মা বলে

ও মা তারা ত্রিনয়নী।


কত দুঃখ আছে ভালে

পাপী-তাপী কত তারালে,

জীবনভরে দুঃখ দিলে

এখনো কি মা শান্তি পেলি।


আশা ভরসা সবই তো মা

তোমার তো মা আছে জানা,

পুরাও না মা মনবাসনা

ধরি মা তোর চরণখানি।


 ===================

★7>তোর মতো মা এত আপন

তোর মতো মা এত আপন

কে আর শ্যামা আমার আছে,

তুই যদি মা মুখ ফিরাবি

যাব তবে কাহার কাছে।


যত ধূলা আমার গায়ে

সেসব মাগো দে মুছায়ে,

কোলে নে মা হাত বাড়ায়ে

রেখে দে তোর বুকের মাঝে।


সুখে-দুঃখে দিনে-রাতে

মা তুই আমার থাকিস সাথে,

স্নেহশীতল কোল দে আমার

তপ্ত পরাণ কেবল যাচে।


যদি যেতে চাই মা দূরে

বাঁধিস আমায় স্নেহের ডোরে,

তোর সোহাগে, তোর প্রেমে মা

তোর জীবনেই থাকব বেঁচে।


 =====================


★8>ত্রিনয়নী দুর্গা,

মা তোর রূপের সীমা পাইনা খুঁজে, ত্রিনয়নী দুর্গা,

চন্দ্র তপন লুটায় মা তোর (মা), চরণতলে দশভুজে।

বন্দনা গায় সরস্বতী, লক্ষ্মী সাজায় সন্ধ্যারতি,

কার্ত্তিকেয় সিদ্ধিদাতা সিদ্ধ যে মা তোমায় পূজে।।


ত্রিকাল যে মা থমকে দাঁড়ায়, রুদ্রাণী তোর চণ্ডীরূপে,

জড়ের বুকে চেতন জাগে (মা), যুগান্তরের অন্ধকূপে।

হিমগিরির সিংহ তোমার, বাহন যে গো শক্তি পূজার,

মরণভয়ে অসুর কাঁপে, পায়ের তলায় চক্ষু বুজে।।


 ====================

★9>দেখা দে মা

বিপদ-ভাবনা রবে না মা

দেখা দে মা শ্মশান কালী।


আমার হৃদয়-জবা দেবো তুলি

মাগো তোমার চরণে অঞ্জলি।


মাগো, তুমি সীতা তুমি সাবিত্রী

তুমি মা জগতপালী।


এলোকেশী মুক্তি দিতে

এসেছে মাগো শিবতত্ত্ব জানাইতে,

বলি, ধ্বংস কর তোর প্রেম-অসিতে,

এই অসীম সরকারের অ-শিব গুলি।

======================

 

★10>দীনবন্ধু কৃপাসিন্ধু

দীনবন্ধু কৃপাসিন্ধু কৃপাবিন্দু বিতর,

মম হৃদি-বৃন্দাবনে কমল-আসনে

প্রাণমন সনে বিহর।


নয়ন মুদি বা চাহিয়া থাকি

অথবা যেদিকে ফিরাই আঁখি,

ভিতরে বাহিরে যেন হে নিরখি

তব রূপ মনোহর।


এই করো হরি দীন-দয়াময়

তুমি আমি যেন দুটি নাহি রয়,

জলের তরঙ্গ জলে করো লয়

চিদঘন শ্যামসুন্দর।


ওই পদে পরিব্রাজকের গতি

যেন ভাগীরথীর সাগর-সংহতি,

জীব শিব দোঁহে অভেদ মুরতি

জীব নদী তুমি সাগর।


 ===================


★11>দুরিতবারিনী


দুরিতবারিনী ও মা হররানী

ডাকিছে কাতরে এ দীন সন্তান,

করিয়া যতন কমল আসন

পেতেছি হৃদয়ে কর অধিষ্ঠান।


শিখাইয়া দাও তুমি মা ভবানী

কেমনে পুজিব চরণ দু’খানি,

ভজন পুজন কিছুই না জানি

তাই ভাবি কিসে পাব পদে স্থান।


ভরসা কেবল করুণা তোমার

তাই এ সন্তান ডাকে বারেবার,

নাশ মা তাহার অজ্ঞান আঁধার

তনয়ে তোমার দাও দিব্যজ্ঞান।


যেন নাহি ভুলি চরণ দু’খানি

এই মতি দাও তনয়ে জননী,

অকূল পাথার কিসে হই পার

ভব দুঃখ যেন হয় অবসান।


 ================


★12>দোষ কারো নয়

দোষ কারো নয় গো মা,

আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা।


আমার ধর্মাধর্ম হল কোদন্ডস্বরুপ,

পূণ্যক্ষেত্রমাঝে কাটিলাম কূপ-

সে কূপে বেড়িল কালরূপ জল,

কালো মনোরমা, মা।


আমার কি হবে তারিণী, ত্রিগুণধারিণী,

বিগুণ করেছে স্বগুণে,

কিসে এ-বারি নিবারি ভেবে দাশরথির

অনিবার বারি নয়নে।


আমার ছিল বারি কক্ষে, ক্রমে এল বক্ষে,

জীবনে জীবন মা কেমনে হয় রক্ষে,

আছি তোর অপিক্ষে দে মা মূক্তি ভিক্ষে,

কটাক্ষেতে করে পার, মা।

====================


★13>নয়ন তুলে দেখ মা শ্যামা

নয়ন তুলে দেখ মা শ্যামা

একি মা, এ তোর মায়ার খেলা,

মেঘে মেঘে জড়িয়ে আমায়

কাটিয়ে দিলি সারাবেলা।


সন্ধ্যা নিলো ধরাতে ঠাঁই

এখন দেখি পথ নাহি পাই,

তীরে বসে ভাবছি শুধু

পাবো কি মোর পারের ভেলা।


সঞ্চয় মোর যা ছিল মা

পথে গেছে খরচ হয়ে,

দিন কেটেছে মত্ত হয়ে

শুধুই ভুলের বোঝা বয়ে।


বাঁধলি যদি সাগরকূলে

কোন দোষে বল গেলি ভুলে,

কোন পরাণে পাষাণ হয়ে

করিস মোরে অবহেলা।


 ====================

★14>নয়নাভিরাম

নয়নাভিরাম মোর নয়নাভিরাম

এসো রামকৃষ্ণ মোর নয়নাভিরাম,

এসো যশোদা দুলাল তুমি রঘুপতি রাম

এসো নয়নাভিরাম মোর নয়নাভিরাম।


দক্ষিণেশ্বরে তব লীলা কি বা মনোহর

কভু শ্যামা রূপ ধরো, কভু সাজ শংকর,

শ্রীরাধার ভাবে প্রভু কাঁদে তব অন্তর

ধূলায়ে লুটায়ে বলো কোথা নবঘনশ্যাম।


পঞ্চবটীর তীরে জাহ্নবী কিনারায়

যেচে প্রেম বিলাইতে ডাকে ওরে আয় আয়,

ভকত কুসুম যতো আনিলে আপন সাথ

নন্দন কাননে সুন্দর পারিজাত,

সে কুসুমে ভরি সাজি, আপনি পূজারী সাজি

করিলে আপন পূজা, ধরি মুখে নিজ নাম।


 =====================

★15>নেচে নেচে আয় মা শ্যামা

নেচে নেচে আয় মা শ্যামা

আমি মা তোর সঙ্গে যাব,

তোর রাঙা পায়ের সোনার নূপুর

বাজলে ‘পরে শুনতে পাব।


নামটি তোমার অভয়াকালী

ভয় দেখায়ে আর কি করবি,

কালের মুখে দিয়ে কালি

কালে কালী কাল কাটাবো।


ভয় যদি পাই অন্ধকারে

ডাকব শ্যামা মা, মা বলে,

মায়ের কাছে চলে যাব

মা ডাক দিয়ে প্রাণ জুড়াব।


 ==================

★16>পাখি তুই ঠিক বসে থাক

পাখি তুই ঠিক বসে থাক রে

রামকৃষ্ণ নামের মাস্তুলে,

তোর বৃথাই ওড়া নড়া-চড়া

খোঁজ পাবি না অকূলে।


তুই যেদিক যাবি দেখতে পাবি

জলে জলাকার,

নাই যে অন্ত দিক-দিগন্ত

অপার পাথার।

তোর ধরবে ডানা ঘোর যাতনা

পড়বি মহা মুশকিলে


অনন্ত অন-অন্ত যে তার

অন্ত কে করে,

প্রধান গ্রন্থ বেদ-বেদান্ত

গেলো চুপ মেরে,

পুরাণেরা দিশাহারা

সার হলো নাম শেষ কালে।


এ দিকে অবিদ্যা-মায়া

পিশাচী করাল,

মন পাপী রে –

বাকি আছে রূপ রসেরই

মনমোহিনী জাল।

তুই পড়বি ফাঁদে, মরবি কেঁদে,

প্রাণ হারাবি বেহালে।


 ===================

★17>পূজিব তোমারে শ্যামা

পূজিব তোমারে শ্যামা

মানস কুসুমতলে,

সাড়া কি দেবে না শ্যামা

এদিনের নয়নজলে।


ডাকি যদি মা ব’লে, মা

আঁখিতারা পড়ে গ’লে,

মা, তবু কি নীরবে রবে

অবহেলে যাবে চলে।

=====================

 

★18>প্রেম ভরে মন রে গাহ

প্রেম ভরে মন রে গাহ রামকৃষ্ণ নাম

শ্রী রামকৃষ্ণ নাম, শ্রী রামকৃষ্ণ নাম,

শ্রী রামকৃষ্ণ নাম।


অন্তরে যতনে রাখো মন রে গাহ নাম,

দীন কাঙালের ধন রামকৃষ্ণ নাম।


একই বৃন্তে ফুটিলরে রাধাকৃষ্ণশ্যাম

শিবকালী ব্রহ্মাবিষ্ণু শ্যামা সীতারাম।


নাম ব্রহ্ম একই জেনে মন রে গাহ নাম

জনম মরণ সাথী, রামকৃষ্ণ নাম।


 ====================

★19>ফিরে যা কমলাকান্ত

ফিরে যা কমলাকান্ত

চিন্তা কি তোর অন্তরে,

ঘরে আছে তোর মা জননী

রাখবি তারে যতন ক’রে।


আদ্যাশক্তি-স্বরূপিণী

উদরে স্থান দিলেন যিনি,

ঘরে রইল তোর মা জননী

রাখবি তারে যতন ক’রে।


আমি গিয়েছিলাম কাশী-বিশ্বশ্বরে

এই দেহ পতন করিবার তরে,

বাবা বলিলেন স্বপ্নের ঘোরে

যা রে তুই ত্রিবেণীর তীরে।

আমার অধ-অঙ্গ গঙ্গার জলে

অধ-অঙ্গ ত্রিবেণীর কূলে,

ডাকি গঙ্গা-গঙ্গা ব’লে

স্থান দিও মা চরণতলে।


নীলকণ্ঠের মন উৎকণ্ঠ

নীলকণ্ঠকে ঘিরিল কণ্টক,

কৃতান্ত ঘিরেছে তারে

দেখি তারে কেউ রাখতে পারে।


নীলকণ্ঠের মন উৎকণ্ঠ

নীলকণ্ঠকে ঘিরিল কণ্টক,

কহেন এবার শ্রীকণ্ঠ

লাগছে চিন্তা মনে রে।


 =================

★20>ভয়ঙ্করী তোরে কালী

ভয়ঙ্করী তোরে কালী

কে বলে মা তারা,

তোর অভয় চরণ ছুঁয়ে মা গো

ভয় হলো সব হারা।


রুদ্রাণী তোর নাচনকালে

প্রলয় যখন এগিয়ে চলে, মা,

হয় সেই প্রলয়ের অন্তরালে

নূতন ভুবন গড়া।


মায়ামোহে মত্ত হয়ে

জীব যদি রয় ভুলে,

মরণকালে তুই মা তারে

নিস গো কোলে তুলে।


ভবভয়ে ও শঙ্করী, মা

আমি যে মা ভয়ে মরি,

আয় মা হয়ে ভয়ঙ্করী

ভাঙতে পাষাণ কারা।

=================


★21>বড় ধুম লেগেছে

বড় ধুম লেগেছে, হৃদিকমলে,

মজা দেখিছে আমার মন পাগলে।

হতেছে পাগলের মেলা

ক্ষেপাতে ক্ষেপিতে মিলে,

আনন্দেতে সদানন্দে আনন্দময়ী পড়েছে ঢলে।

দেখে অবাক লেগেছে তাক্

ইন্দ্রিয় আর রিপুদলে,

পেয়ে সুযোগ এই গোলযোগ

জ্ঞানের কপাট গেছে খুলে।

প্রেমিক পাগল বলে সকল

তা বলে আমার মন কি টলে,

যার পিতামাতা বদ্ধ পাগল,

ভাল হয় কি তাদের ছেলে?

শোন্ মা তারা, ভূভারহরা,

এই বেলা মা রাখছি ব’লে

যখন ভাসব জলে অন্তকালে,

তনয় ব’লে করিস কোলে।


 ===================

★22>বড়ো হতে চাই না

বড়ো হতে চাই না আমি

ছোট হয়েই রব,

ধুলো-কাদা মেখে, মাগো

তোরই কোলে শোব।


লুকোচুরি খেলার সময়

জিতবি না তুই জানি,

মোর জেতাতেই তোর জয় মা

কি ক’রে তা বুঝি নি,

ঘুমের ঘোরে তোর আদরে

হৃদয় ভ’রে নেব।


ভয় করে মা আজকে যখন

লোকে বড়ো কয়,

বড়ো আমি হয় নি মাগো

তুই জানিস নিশ্চয়ই,

তোর কারণেই সাধ করে, মা

শত জন্ম লব।


 ===================

★23>বারে বারে যে দুখ

বারে বারে যে দুখ দিয়েছ, দিতেছ

তারা দুখ নয় সে দয়া তব,

তুমি চিরদুখহরা।

সন্তান মঙ্গলতরে, ওগো

জননী তাড়না করে,

আমি তাই বহিতেছি শিরে

সুখ-দুঃখেরই পসরা।


 ===================

★24>বিফলে দিন যায়

বিফলে দিন যায় রে বিনে

শ্রীহরির সাধনা বিনে,

অসার-কলুষ সংসারে

সারাৎসার-নাম শুনা বিনে।


বৃথা গুনগুন রবে

কী গুণ গাও সগৌরবে,

নির্গুণে আর কে তারিবে

গুণাতীত গুণবিনে।


 ===============

★25>ভজ গৌরাঙ্গ


ভজ গৌরাঙ্গ, কহ গৌরাঙ্গ

লহ গৌরাঙ্গের নাম রে,

যেই জনা গৌরাঙ্গ ভজে

সে হয় আমার প্রাণ রে।


গৌরাঙ্গ ভজিলে গৌরাঙ্গ জপিলে

হয় দুঃখের অবসান, রে।


গৌরাঙ্গ বলিয়া, দু-বাহু তুলিয়া

নাচিয়া-নাচিয়া বেড়াও রে।


 ======================

★26>ভজ রাধাকৃষ্ণ গোপালকৃষ্ণ

ভজ রাধাকৃষ্ণ গোপালকৃষ্ণ

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলো মুখে

হরিনামে বুক ভরে যায়

অভাব মিটায়, স্বভাব জাগায় মহাসুখে।


হরি দীনবন্ধু চির দীনবন্ধু

জীবের চির সুখেদুখে,

ভজ রে অন্ধ চরণার বিন্দু

দুঃস্থ রয় মায়াবিপাকে।


ভজ মূঢ়মতি তব চিরসাথী

যাহার করুণা লোকে-লোকে,

লীলাময় হরি, এসেছে নদীয়া তরি

রাধার পিরিতি লয়ে বুকে।

==================

★27>ভেবে দেখ মন

ভেবে দেখ মন, কেউ কারো নয়,

মিছে ভ্রম ভূমন্ডলে,

ভুল না দক্ষিণাকালী, বদ্ধ হয়ে মায়া জালে৷


যার জন্য মর ভেবে,

সে কি তোমার সঙ্গে যাবে?

সেই প্রেয়সী দেবে ছড়া,

অমঙ্গল হবে বলে।


দিন দুই-তিনের জন্য ভবে,

কত্তা বলে সবাই মানে,

সেই কত্তারে দেবে ফেলে,

কালাকালের কত্তা এলে।


 ===================

★28>মন চল নিজ নিকেতনে

মন চল নিজ নিকেতনে,

সংসার বিদেশে, বিদেশীর বেশে,

ভ্রম কেন অকারণে?

মন চলো নিজ নিকেতনে।


বিষয়-পঞ্চক আর ভূতগণ,

সব তোর পর কেহ নয় আপন-

পরপ্রেমে কেন হয়ে অচেতন,

ভুলিছ আপনজনে?


সত্যপথে মন কর আরোহণ

প্রেমের আলো জ্বালি চল অনুক্ষণ,

সঙ্গেতে সম্বল রাখ পুণ্যধন

গোপনে অতি যতনে।


লোভ-মোহ-আদি পথে দস্যুগণ,

পথিকের করে সর্বস্ব হরণ,

পরম যতনে রাখ রে প্রহরী,

শম, দম দুইজনে।


সাধুসঙ্গ নামে আছে পান্থধাম,

শ্রান্ত হলে তথায় করিবে বিশ্রাম,

পথভ্রান্ত হলে শুধাইবে পথ

সে পান্থনিবাসী গণে।


যদি দেখ পথে ভয়েরই আকার

প্রাণপণে দিও দোহাই রাজার,

সে পথে রাজার প্রবল প্রতাপ,

শমণ ডরে যার শাসনে।


 ===================

★29>মনের বাসনা শ্যামা

মনের বাসনা শ্যামা,

ওরে শবাসনা শোনো মা বলি,

আমার অন্তিমকালে জিহ্বা যেন

বলতে পারে মা কালী কালী,

হৃদয়মাঝে তখন উদয় হয়ো মা

আমায় করবে যখন অন্তর্জলি।

তখন আমি মনে মনে

তুলবো জবা বনে বনে,

মিশাইয়ে ভক্তিচন্দনে

আমি পায়ে দেবো পুষ্পাঞ্জলি।


অর্ধ-অঙ্গ গঙ্গাজলে

অর্ধ-অঙ্গ থাকবে স্থলে,

আর কেহ বা লিখিবে ভালে

কালী কালী নামাবলী,

আর কেহ বা কর্ণকুহরে

বলবে হরি উচ্চৈস্বরে,

আর কেহ বলবে হরে হরে

তার দুই করে দিয়ে তালি।


 ===================

★30>মরিব মরিব সখী

মরিব মরিব সখী, নিশ্চয় মরিব

কানু হেন গুণনিধি কারে দিয়ে যাব।

আমার সময় হয়েছে, তাই বুঝি

আর তো প্রাণে বাঁচবো না সই,

কৃষ্ণ হারা অভাগিনী

আর তো প্রাণে বাঁচবো না সই,

এখন বুঝি সময় হয়েছে।


তোমরা যতেক সখী থেকো মোর সঙ্গে,

সখী হে, সখী আমার,

মরণকালে কৃষ্ণনাম লিখে দিও অঙ্গে।

দেহভরে কৃষ্ণনাম লিখিও,

আমি পরজনমে কৃষ্ণ আবার পাব

নামের সনে প্রাণ গেলে,

দেহভরে কৃষ্ণনাম লিখিও।


ললিতা প্রাণের সখী মন্ত্র দিও কানে

মরা দেহ পোড়ে যেন কৃষ্ণনাম শুনে।

আমি মরতে পারি গো

ওগো কৃষ্ণনাম শুনি যেন,

এই বাসনা আমার মনে

ওগো কৃষ্ণনাম শুনে যেন মরতে পারি গো।


না পুড়ায়ো রাধা অঙ্গ, না ভাসায়ো জলে,

মরিলে তুলিয়া রেখো তমালেরই ডালে।

তমাল ডালে বেঁধে রেখো

কৃষ্ণ কালো, তমাল কালো,

তাইতে তমাল বাসি ভালো।


তব হুঁশ পিয়া যদি আসে বৃন্দাবনে

পরাণ পাবো গো আমি পিয়া-দরশনে।

ভন হে বিদ্যাপতি, শুন বরনারী

ধৈরজ ধরোহ চিতে নীল-অব মুরারি,

আসবে মাধব দু-একদিনে আসবে মাধব

তোমায় ছেড়ে সে রইতে নারে,

ধৈর্য ধরো ওগো রাধে।


 ===================


★31>মা আছেন আর আমি আছি

মা আছেন আর আমি আছি

ভাবনা কি আছে আমার,

মায়ের হাতে খাই, পরি

মা নিয়েছেন আমার ভার।


প’ড়ে সংসার পাকে, ঘোর বিপাকে

যখন দেখি অন্ধকার ,

সেই ঘোর আঁধারে মা আমারে

বাণী শোনায় বারে বার।


এই ছয়জনাতে একইসাথে

পথ ভুলাই যে বারেবার,

সে বিপথ হতে, ধ’রে হাতে

মা যে করিছেন উদ্ধার।


আমি ভুলেও থাকি তবুও দেখি

ভোলেন না মা একটি বার,

এমন স্নেহের আধার কে আছে আর,

মা যে আমার আমি যে মা’র।


===============

★32>মা মা বলে ডাকি

মা, মা বলে ডাকি কালী, কালী

জগন্মাতা জগজ্জন-মনমোহিনী,

মুরতি কোথায় লুকালি।


ভ্রূকুটি হেরি ভয় লাগে পরাণে, মা

নয়ন মুদিয়া আছে নেহারি নয়নে,

মা হয়ে জননী অধম সন্তানে

এ ভয় কেন বা দেখালি।


 =================__

★33>মাগো আনন্দময়ী


মাগো আনন্দময়ী, নিরানন্দ কোরো না

তোমার ওদুটি চরণ বীণে আমার মন

অন্য কিছু আর জানে না,

মাগো আনন্দময়ী, নিরানন্দ কোরো না।


ভবানী বলিয়ে ভবে যাবো চলে

মনে ছিল এই বাসনা,

অকূল পাথারে ডুবাবে আমারে

স্বপ্নেও তা তো জানিনা,

মাগো আনন্দময়ী, নিরানন্দ কোরো না।


অহর্নিশি শ্রীদুর্গা নামে ভাসি

দুঃখরাশি তবু গেলো না,

আমি যদি ম’রি ও হর-সুন্দরী

দুর্গানাম তো কেউ ল’বে না,

মাগো আনন্দময়ী, নিরানন্দ কোরো না।


 ================

★34>মাধব হে

মাধব হে,

বান্ধব হে, এসো মম অন্তরদ্বারে।


তোমার মুরলী সুর,

একবার তেমনি ক’রে

বাজাও চিরমধুর,

ওগো নব-নব রাগে

মনোবীণাতারে।


আপন বাঁধনে, হায়,

রহে যে বাঁধা, মাধব

তবুও ভুলাও তারে,

কেন মোহভারে।

আমি বাঁধা থাকলেও তুমি কেন

থাকতে দাও না,

জানি না কি অপরাধে, মাধব

দূরে সরে থাকো, মাধব হে,

শোনো না আকুল হয়ে

ডাকি বারে-বারে।


যদি না জ্বালাও প্রাণে প্রদীপখানি, মাধব,

আমার এ আঁধার ঘরে

আর কে আলো জ্বালাবে, মাধব,

আলো জ্বেলে দাও, অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে দাও

দয়া করে।


যদি না জ্বালাও প্রাণে প্রদীপখানি,

জীবনের বেলা যাবে গগন আঁধারে, হে মাধব

স্মরণ মাগি প্রভু দাও দরশন দাও,

নাও দয়া করে তোমার চরণে,

চরণে তোমার চাই বিলাতে আমারে।


 ====================

★35>মায়ের পায়ের জবা হয়ে

মায়ের পায়ের জবা হয়ে

ওঠ না ফুটে মন,

তার গন্ধ না থাক

যা আছে সে নয় রে

ভুয়ো আবরণ,

আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে

ওঠনা ফুটে মন।


জানি জুঁই মালতী হায়

কত গন্ধ যে ছড়ায়,

তবু ঘরের ফেলে পরের কাছে

নিজেরে বিলায়।

ওরে তোর মতো যে নেই কো তাদের

মায়েপোয়ে আলাপন,

মায়ের পায়ের জবা হয়ে

ওঠ না ফুটে মন।


আমার তাই তো লাগে ভয়

প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে

হই বুঝি বা ক্ষয়।

ওরে যেন ভুলিস না

তোর দয়াময়ী মা,

তার রক্তমাখা কালোরূপে

ঘোচায় কালিমা।

ও মন তাই বলি আয়

ঐ রাঙা পায় করি আত্মসমর্পণ,

মায়ের পায়ের জবা হয়ে

ওঠ না ফুটে মন।


 =================


★36>যখন দুচোখ ভ’রে

যখন দুচোখ ভ’রে নামবে আঁধার

তখন যখন যেন দেখি মাকে,

আমার সকল কথা বন্ধ হলেও

মাতৃনামটি যেন থাকে।


জন্ম-জন্ম সাধ যে আমার

মায়ের কোলে আসি আবার,

আমার কর্মফলের শেষে যেন

কোল বাড়িয়ে আবার ডাকে।


জীবন হাতে সওদা ক’রে

আমি শুধু চোখের জল কিনেছি,

আদর পেয়ে ভুলেছি তাই

মার খেয়ে যে মা চিনেছি।


আমার দেহ হবে অবশ যখন

ফেলে যাব জীর্ণ বসন,

তখন এ প্রাণ যেন ফুলের মতন

মায়ের চরণ সাজিয়ে রাখে।


 =====================

★37>মুরলী বাজে

আজি মুরলী বাজে প্রেম-বৃন্দাবনে,

নব অনুরাগিনী শ্যাম-সোহাগিনী

অভিসারে চলে রাধা কুঞ্জবনে।


মধুঋতু বসন্তে কহে ব্রজনারী

হে প্রিয়-সুন্দর হে গিরিধারী,

দাও প্রিয় দরশন অন্তরে অনুক্ষণ

রাধার জীবনসখা মধুমিলনে।


কোকিল কুহু-কুহু গাহে তরুশাখে

মিলনে চলে রাধা মুখ-শশী ঢাকে,

সুরভিত বনতলে ফুল্লকুসুমদলে

মোহিত অলিকুল গুঞ্জরণে।


 ===================

★38>যতনে হৃদয়ে রেখো

যতনে হৃদয়ে রেখো

আদরিণী শ্যামা মা কে,

মন তুই দেখ আর আমি দেখি

আর যেন কেউ নাহি দেখে।


কুরুচি কুমন্ত্রী যত

নিকট হতে দিও নাকো,

জ্ঞাননয়নকে প্রহরী রেখো

সে যেন সাবধানে থাকে।


কামাদিরে দিয়ে ফাঁকি

আয় মন বিরলে দেখি,

রসনারে সঙ্গে রাখি

সে যেন মা বলে ডাকে।


 ======================

★39>যদি ডাকার মতো পারিতাম ডাকতে

যদি ডাকার মতো পারিতাম ডাকতে,

হায় রে! তবে কি মা এমন করে,

তুমি লুকিয়ে থাকতে পারতে ?


আমি নাম জানিনে ডাক জানিনে

আবার জানিনে মা কোন কথা বলতে।

আমি ডেকে দেখা পাইনে তাইতে

আমার জনম গেল কাঁদতে।


দুখ পেলে মা তোমায় ডাকি

আবার সুখ পেলে

চুপ করে থাকি ডাকতে।

তুমি মনে বসে মন দেখো মা

আমায় দেখা দাও না তাইতে।


ডাকার মতো ডাকা শেখাও

না হয় দয়া করে দেখা দাও আমাকে।

আমি তোমার খাই মা তোমার পরি

কেবল ভুলে যাই নাম করতে।


কাঙাল যদি ছেলের মত

তোমার ছেলে হত তবে জানতে পারতে।

কাঙাল জোর করে কোল কেড়ে নিত,

নাহি সরতে বললে সরতে।


 ===================

★40>যে কটা দিন

যে কটা দিন আছ বেঁচে ওরে মন

হরিনাম নিতে যেন ভুলো না,

ভুলে কেন রইলে, দুকূল হারালে

সঙ্গে কোনোকিছু যাবে না।


মাতাপিতা পরিবার, দারাসূত সহোদর

আপন-আপন মিছে ভাবনা,

ছেলেমেয়ে সংসার, সকলই অসার

কাজেতে কেউ তো আসবে না।


একলা এসেছ একলা যেতে হবে

সঙ্গে তো কেউ যাবে না,

বাল্যকালে খেলা করে কাটালে

যৌবনে কামিনী ছাড়লে না।


বুড়ো হয়েও তবু টাকা-টাকা-টাকা

টাকা-বুলি তোমার ঘুচলো না,

তাই বলি ওরে মন, সংসার-বন্ধন

হরিনাম খড়্গে কাটো না।


 =======================


★41>রঙ দিও না শ্যাম

রঙ দিও না শ্যাম, মিনতি তোমায়,

আবির দিও না প্রভু, ধরি দুটি পায়।


লাল-রঙিন জলে, শ্যাম হে

আমার বসন ভিজায়ে গেলে,

দেখা হ’লে পরিজনে

ওগো শ্যাম দুষিবে আমায়।


মিটাইতে মন-আশ

ছুটে আশি তব পাশ,

গৃহকাজ ফেলে রেখে

আসি যমুনায়।


শ্যাম হে, ওহে নিঠুর শ্যাম

তুমি তো জানো না,

আমাদের ঘর ভালো না

যে ঘরে বসত করি,

তারা কৃষ্ণের অঙ্গের বাতাসও

নিতে চায় না,

আর তুমি যখন-তখন ডাকো,

তারপরে এই রঙ নিয়ে

কি করে যাব শ্যাম।


ওগো নাগর, তোমার বাঁশির গানে

যে রঙ লেগেছে প্রাণে,

ওগো স্মৃতি-পিচকারি মোরে

আজ সে রঙে রাঙায়।


 

================

★42>রাই জাগো গো

রাই জাগো গো,

জাগো শ্যামের মনমোহিনী বিনোদিনী রাই

জেগে দেখো আর তো নিশি নাই, গো জয় রাধে।


শ্যাম-অঙ্গে অঙ্গ দিয়া

আছো রাধে ঘুমাইয়া,

কুলকলঙ্কের ভয় কি তোমার নাই, গো জয় রাধে।


আমি তোমার সেবার দাসী

যুগল-চরণ ভালোবাসি গো,

যুগল-বিনে অন্য আশা নাই, গো জয় রাধে।


 ================

★43>শ্যামা নামের লাগল আগুন

শ্যামা নামের লাগল আগুন

আমার দেহ-ধূপকাঠিতে।

যত জ্বালি সুবাস তত

ছড়িয়ে পরে চারিভিতে, মা –

শ্যামা নামের লাগল আগুন

আমার দেহ-ধূপকাঠিতে।


ভক্তি আমার ধূপের মতো

ঊর্ধে ওঠে অবিরত, মা,

শিবলোকের দেবদেউলে

মা’র শ্রীচরণ পরশিতে, মা –

শ্যামা নামের লাগল আগুন

আমার দেহ-ধূপকাঠিতে।


অন্তরলোক শুদ্ধ হলো

পবিত্র সেই ধূপ-সুবাসে,

ওরে, মা’র হাসিমুখ চিত্তে ভাসে

চন্দ্রসম নীল আকাশে।

সবকিছু মোর পুড়ে কবে, মা –

চিরতরে ভস্ম হবে,

মা’র ললাটে আঁকবো তিলক

সেই ভস্ম বিভূতিতে, মা –

শ্যামা নামের লাগল আগুন

আমার দেহ-ধূপকাঠিতে।


 ==================


★44>শ্যামা মন-ছাঁচে তোমাকে ফেলে

শ্যামা, মন-ছাঁচে তোমাকে ফেলে

মনোময়ী মূর্তি আজ ল’ব তুলে।।


মন যে আমার খাদে ভরা

তোমার ভাবে কৈ মা গলে?

ভাবরূপিনী হও তারিণী

গলে আমার ভাব-অনলে!


দেখিব রূপ তোমার স্বরূপ

যে রূপেতে ভোলা ভোলে

পুরাও আশা কৃত্তিবাসা

দিয়ে দেখা হৃদিকমলে।।


গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা

কি হবে মা বনফুলে?

কি দিয়ে পূজিব তোমায়

ভাবছি বসে তাই বিরলে।।


আমি আমার নই জননী

আমার নাই কিছুই ভূতলে।

এ ব্রহ্মাণ্ড তোমার সৃষ্টি

দৃষ্টিহীনে আমার বলে।।


প্রেমিক বলে শোনরে যুক্তি

যথাশক্তি ভক্তিজলে

ধুয়ে দে মা’র রাঙা চরণ

মন-ফুল দে পদতলে।।


 ================

★45>শিব, শিব, মহাশিব

শিব, শিব, মহাশিব, শিব রামকৃষ্ণ নাম,

ব্রহ্মা, বিষ্ণু, সর্বদেব রামকৃষ্ণ দীপ্তনাম৷

কার্তিকেয়, গণপতি, বিশ্বকর্মা, বিশ্বমান,

যুগদেব রামকৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ ব্রহ্মনাম৷৷


ধর্মকর্ম, লক্ষ্মী, যোগী, মহাদেবী, মহেশ্বর,

মোক্ষ, ক্ষেম, সর্বদেবদেবী শ্রীযোগীশ্বর৷

দুর্গা, শিবা, সত্য, শ্রেষ্ঠ, শ্রেয়-শ্রেয়াধীশ্বর,

জ্ঞানীস্থুল, মহাশুন্য রামকৃষ্ণ বোধীশ্বর৷৷


কালাকাল, মহাকাল, কালী, শ্যামা, নিত্যকাল,

সত্যাসত্য, পরমসত্য, দেব শ্রীমহেষ্বাস৷

শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী শ্রীনারায়ণ,

আদিদেব রামকৃষ্ণ সর্বদেবাধীশ্বর৷৷


বিশ্বপতি, লক্ষ্মীপতি, প্রজাপতি, মানেশ্বর,

শীতলা, বিমলা, স্নিগ্ধা, সারদা শ্রীধীশ্বর৷

সর্বদেবদেবীরূপ, সর্বসিদ্ধিপরায়ণ,

রামকৃষ্ণ পরব্রহ্ম, নিত্যানিত্য সোমেশ্বর৷৷


রূপারূপ, সীমাসীম, লীলা-নিত্য, সুরেশ্বর,

অর্থানর্থ, মহাদেব, সত্যদেব, ভূতেশ্বর৷

নিদ্রা, লজ্জা, শ্রদ্ধা, স্তুতি, যজ্ঞ, কর্ম, বিদ্যা, মান,

নিত্য-সত্য রামকৃষ্ণ একমেবাদ্বিতীয়ম্৷৷


অবতারশ্রেষ্ঠ যোগী, নিত্য যোগ-সংস্থিত,

সর্বমোহমুক্ত, শুদ্ধ, সত্য, প্রেম, ধী-স্থিত৷

তর্ক-যুক্তি-ঊধর্ব-মুক্ত, বুদ্ধ, জিত-ইন্দ্রিয়,

কামিনী-কাঞ্চনজিত, নির্বিকার মহেশ্বর৷৷


পতিতপাবন দেব, সারদা শ্রীপ্রাণনাথ,

জগতপিতা শ্রীমান, অধমে অভয়স্থান৷

রক্ষা, দীক্ষা, সর্বদাতা, সর্বজীব অভিপ্রেত,

নির্বিকল্পে চিত্তস্থিত ব্রহ্মলোকাধিশ্বর৷৷


দরশনে নিত্যধ্যান, মননে মুক্তিলাভ,

স্মরণে জনমশুদ্ধ, নির্ভরে অমিয়লাভ৷

যুগলে অভিন্ন-হৃদি রামকৃষ্ণ-সারদা,

প্রেমযোগে, মুক্তি, মোক্ষে ধন্য শ্রীবসুন্ধরা৷


 =====================

★46>সকলি তোমারি ইচ্ছা

সকলি তোমারি ইচ্ছা,

ইচ্ছাময়ী তারা তুমি

তোমার কর্ম তুমি করো মা,

লোকে বলে করি আমি।


পঙ্কে বদ্ধ কর করি,

পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি

কারে দাও মা ব্রহ্মপদ,

কারে করো অধগামী।


আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী

আমি ঘর, তুমি ঘরণী

আমি রথ, তুমি রথী

যেমন চালাও তেমনি চলি।


 ==================

★47>সখাসঙ্গে খেলা করে

সখাসঙ্গে খেলা করে নীলকান্তমণি

আমার গোপাল গুণমণি।


মায়ে সাজায় মনের মতো

গোপালে যেমন তেমনোতো,

মা নিজেই সাজায়, নিজেই দেখে

গোপালের চাঁদবদনখানি,

লীলা করে গোপাল গুণমণি।


শিশু গোপাল শিশু কার,

সোনার নূপুর বাজে চরণে

রুনুঝুনুঝুনু তার।

ভূমি মাটি মুখে পুরি

ভোজন করে আনন্দে হরি,

যশমাতা নেয়, তারই মুখে

দেখায় চতুৰ্দশভুবন,

লীলা করে গোপালরতন।


আর, রাঙা পায়ে হাঁটি যায়

ক্ষণে গড়াগড়ি খায়,

তুলিয়া মা বদন মুছায়

দুটি নয়নধারা বয় ধারার কোনে,

লীলা করে গোপাল গুণমণি।


দেখিয়া গোপালের রূপ

গোপীদের উথলি উঠে প্রেমকূপ,

প্রেমের ধারায় ভাবে সবের নয়নে নয়নে।

বৃন্দাবনের কৃষ্ণলীলা

কামগন্ধ নাহি আইলা,

সখাসখী সঙ্গে লীলা দেখো হে নয়নে,

লীলা করে গোপাল গুণমণি।


অনামী কয় দেখ না কেনে

তা না হ’লে বা হবে কেনে,

ভক্তবাঞ্ছাপূরণকারী এলেন ধরাধামে।

দেখবি রে আয়,

গোপাল করে লীলা এই মধুর বৃন্দাবনে

সখাসঙ্গে ভাবতরঙ্গে,

খেলে গোপাল পরম রঙ্গে

ভাবতে যমুনা বয় প্রেমেরই উদার।

ওরে দেখবি তো দেখবি আয়,

গোপাল লীলা দেখবি আয়।


 ======================

★48>সখী লোকে বলে কালো

ও, সখী লোকে বলে কালো

কালো নয় সে যে,

আমারি চোখেরই আলো।


বঁধু কালো তাই, কাজল লেখায়

নয়ন করেছি কালো।

রূপ দেখবো বলে,

সেই কালো রূপ দেখবো বলে

ওগো, আমার বঁধুর সেই কালো রূপ

পরাণ ভরে দেখবো বলে,

সেই কালো রূপ ছাড়া

আমি রূপ আর দেখবো না।

কালো দেখবো বলে

নয়ন করেছি কালো।


সে যে আমার হৃদয় রাজা,

আমি প্রেমের আসনে বসাইয়ে

তারে দিব গো প্রেমের সাজা।

তারে সাজা দেবো গো,

সখী প্রেম করে তারে

সাজা দেবো গো।

সেই প্রেমের ঠাকুর,

প্রেমিক নাগর বুঝবে যবে

সাজা দেবো গো,

দিব গো প্রেমের সাজা।।


কালো কেশজালে দুলাব চামর,

জুড়াবে শ্যামল হরি

আমি নয়নে রেখেছি

প্রেমের সাগর।

চরণ ধোয়াবো ওর

চরণ ধুইয়ে দেবো,

ঐ চরণকমল ধুইয়ে দেবো।

বলবো এসো এসো বন্ধু আমার

ঐ চরণকমল ধুইয়ে দেবো,

আমার প্রেম সাগরের সলিল দিয়ে

চরণকমল ধুইয়ে দেবো,

চরণ ধোয়াবো মরি।


আমি দেহের দেউলে

আরতি করিব,

সখী দেহের দেউলে

আরতি করিব,

জ্বালায়ে প্রেমের ধূপে।

আবার বলিব হে নাথ,

বিকানু আমারে

ও চরণে চুপে চুপে।

বিকিয়ে দিলাম,

ঐ চরণে বিকিয়ে দিলাম

ওগো আমায় আমি

বিকিয়ে দিলাম।

আমার দেহের আরতি প্রণতি করি

আমায় আমি বিকিয়ে দিলাম,

ও চরণে চুপে চুপে।


 ===================

★49>সময় তো থাকবে না

সময় তো থাকবে না গো মা

কেবলমাত্র কথা রবে মা।


কথা রবে, কথা রবে মা,

জগতে কলঙ্ক রবে,

সময়তো থাকবে না গো মা

কেবল মাত্র কথা রবে মা ।


ভালো কি বা মন্দ কালী

অবশ্য এক দাঁড়াইবে,

সাগরে যার বিছানা মা

শিশিরে তার কি করিবে।


দু:খে-দু:খে জরজর,

আর কত মা দু:খ দিবে,

মা, কেবল মাত্র দুর্গা নাম

শ্যামা নামে কলঙ্ক রটিবে।


কথা রবে, কথা রবে মা,

জগতে কলঙ্ক রবে।


 

====================

★50>হরি হে

হরি হে,এই কি তুমি,

সেই আমার হৃদয়বিহারী।।

যারে পাবার আশে ঘুরে ঘুরে

ধরি ধরি আর ধরতে নারি।।


কে জানে এই আকুল প্রানে,

কে জানে এই দু’নয়নে

কে জানে এই আঁখি নীরে

আছ হে হরি।

তোমার হৃদে ধরে পরশ করে

কই কই বলে কেঁদে মরি।।


জানি কি এই মলিন পথে,

জানি কি মোর সাথে সাথে

জানি কি এই হাটে মাঠে

আছ হে হরি।

জানি কি রূপ সাগরে

অরূপ রতন

আছ নানা রূপ ধরি।


‘আমি’ ‘আমি’ করে বেড়াই,

তাই তোমারে দেখতে না পাই,

বিনে আমার ‘আমি’র মোহ

আজ সাঙ্গ করি,

আজ আমি তোমায় হলেম হারা,

আর কি তোমায় হারাতে পারি।


 

হৃদি-বৃন্দাবনে বাস

হৃদি-বৃন্দাবনে বাস

যদি করো কমলা-পতী,

ওহে ভক্তি-প্রিয় আমার

ভক্তি হবে রাধা সতী।


মুক্তি কামনা আমারি

হবে বৃন্দে গোপনারী,

দেহ হবে নন্দের পুরী

স্নেহ হবে মা যশমতী।


আমায় ধরো জনার্দন

পাপভার গোবর্ধন,

কামাদি ছয় কংস-চরে

ধ্বংস করো সম্প্রতি।


বাজায়ে কৃপা বাঁশরী

মন-ধেনুকে বশ ক’রি,

তিষ্ঠ হৃদি-গোষ্ঠে আমার

পুরাও ইষ্ট এই মিনতি।


প্রেমরূপ যমুনাকূলে

আশা-বংশী বটমূলে,

স্ব-দাস ভেবে সদয় ভাবে

সতত করো বসতি।


যদি বলো রাখাল প্রেমে

বন্দী থাকি ব্রজধামে,

জ্ঞানহীন রাখাল তোমার

দাস হবে হে দাশরথী।

=======================


42>হিন্দি ভজন (4খন্ড)ok हिन्दी

 


 42>হিন্দি ভজন (4খন্ড)ok हिन्दी


●1>ऐसी लागी लगन

 ●2>खण्डन भव

 ●3>प्रेम मुदित मन से कहो

====================

●1>ऐसी लागी लगन

है आँख वो जो श्याम का दर्शन किया करे,

है शीश जो प्रभु चरण में वंदन किया करे ।

बेकार वो मुख है जो व्यर्थ बातों में,

मुख है वो जो हरी नाम का सुमिरन किया करे ॥

हीरे मोती से नहीं शोभा है हाथ की,

है हाथ जो भगवान् का पूजन किया करे ।

मर के भी अमर नाम है उस जीव का जग में,

प्रभु प्रेम में बलिदान जो जीवन किया करे ॥


ऐसी लागी लगन, मीरा हो गयी मगन ।

वो तो गली गली हरी गुण गाने लगी ॥


महलों में पली, बन के जोगन चली ।

मीरा रानी दीवानी कहाने लगी ॥


कोई रोके नहीं, कोई टोके नहीं,

मीरा गोविन्द गोपाल गाने लगी ।

बैठी संतो के संग, रंगी मोहन के रंग,

मीरा प्रेमी प्रीतम को मनाने लगी ।

वो तो गली गली हरी गुण गाने लगी ॥


राणा ने विष दिया, मानो अमृत पिया,

मीरा सागर में सरिता समाने लगी ।

दुःख लाखों सहे, मुख से गोविन्द कहे,

मीरा गोविन्द गोपाल गाने लगी ।

वो तो गली गली हरी गुण गाने लगी ॥

===================


 ●2>खण्डन भव

 

खण्डन भव बन्धन जग वन्दन वन्दि तोमाय।

निरञ्जन नररूपधर निर्गुण गुणमय ॥

मोचन अघदूषण जगभूषण चिद्घनकाय।

ज्ञानाञ्जन विमल नयन वीक्षणे मोह याय ॥

भास्वर भाव सागर चिर उन्मद प्रेम पाथार ।

भक्तार्जन युगलचरण तारण भव पार ॥

 

जृंभित युग ईश्वर जगदीश्वर योगसहाय ।

निरोधन समाहित मन निरखि तव कृपाय ॥

भञ्जन_दुःखगञ्जन करुणाघन कर्मकठोर ।

प्राणार्पण जगत_तारण कृन्तन कलिडोर ॥

वञ्चन कामकाञ्चन अतिनिन्दित इन्द्रिय राग ।

त्यागीश्वर हे नरवर देह पदे अनुराग ॥

निर्भय गतसंशय दृढनिश्चयमानसवान ।

निष्कारण भकत_शरण त्यजि जातिकुलमान ॥

सम्पद तव श्रीपद भव गोष्पद वारि यथाय ।

प्रेमार्पण समदरशन जगजन दुःख याय ॥

नमो नमो प्रभु वाक्यमनातीत

मनोवचनैकाधार

ज्योतिर ज्योति उजल हृदिकन्दर

तुमि तमोभञ्जनहार ॥

धे धे धे लंग रंग भंग बाजे अंग संग मृदंग

गाइछे छन्द भकतवृन्द आरति तोमार ॥

जय जय आरति तोमार

हर हर आरति तोमार

शिव शिव आरति तोमार ॥

 =====================


●3>प्रेम मुदित मन से कहो

प्रेम मुदित मन से कहो राम राम राम,

राम राम राम, श्री राम राम राम |

पाप कटें दुःख मिटें लेत राम नाम |

भव समुद्र सुखद नाव एक राम नाम ||

परम शांति सुख निधान नित्य राम नाम |

निराधार को आधार एक राम नाम ||

संत हृदय सदा बसत एक राम नाम |

परम गोप्य परम इष्ट मंत्र राम नाम ||

महादेव सतत जपत दिव्य राम नाम |

राम राम राम श्री राम राम राम ||

मात पिता बंधु सखा सब ही राम नाम |

भक्त जनन जीवन धन एक राम नाम ||

=====================