Sunday, October 17, 2021

21>||★★ 'মা'এর কোনো জাত ধর্মে নেই, থাকে না।

 


★★21>মা'এর কোনো জাত ধর্মে নেই, থাকে না।

                   স্বামী বিবেকানন্দ।

১৮৯৮ সাল!!

চিকাগো থেকে ফেরার পর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। স্বামীজী বসে আছেন বেলুড় মঠের গঙ্গার তীরে। শীতের বিকালের শেষ রোদ গঙ্গার ঢেউয়ের বিভঙ্গে লুকোচুরি খেলছে তখন। 

স্বামীজীর পাশেই বসে আছেন, তাঁর বিদেশীনী শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা। 

নৈস্বর্গীক নিস্তব্ধতা ভেঙে, জলদগম্ভীর কন্ঠে স্বামীজী বলে উঠলেনঃ - 

নাঃ সিস্টার!! এই ভাবে বসে বসে সময় নষ্ট করা ঠিক হচ্ছেনা!!


সিস্টারঃ - বলুন স্বামীজী কি করতে হবে??

স্বামীজীঃ - সারা পৃথিবী কে আমি ভারতীয় দর্শন তো বোঝালাম। কিন্তু আমি নিজে কি আজও ভারত মা কে জানা চেনার চেষ্টা করেছি?? ভাবছি পায়ে হেঁটে আমি ভারত মা কে দর্শন করবো। তুমি কি পারবে আমার সঙ্গে যেতে??

সিস্টারঃ - এ তো আমার পরম সৌভাগ্য স্বামীজী!! এই দেশটাকে আমি আমার নিজের দেশ ভেবে সব ছেড়ে চলে এসেছি। এই দেশকে চেনা জানার সৌভাগ্য আমি অর্জন করতে চাই। যত কষ্টই হোক, আমি আপনার সঙ্গে যাব স্বামীজী!!

যেমন ভাবনা, তেমন কাজ!!

দক্ষিণের কন্যাকুমারী থেকে শুরু হলো পায়ে হেঁটে ভারত দর্শন। গন্তব্য উত্তরের কাশ্মীর উপত্যকা। 

টানা প্রায় ৬ মাস পথ চলে, অক্টোবরে স্বামীজী পৌঁছালেন কাশ্মীর। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর তখন প্রায় চলছেনা, একটু বিশ্রাম চাইছে। উপত্যকার একটা ফাঁকা মাঠের পাশে একটা পাথরের খন্ডের উপর বসে ক্ষণিক বিশ্রাম নিচ্ছেন স্বামীজী। সামনের মাঠে খেলা করছে কয়েকটি স্থানীয় শিশু কিশোর। 

একটি বছর পাঁচেকের শিশুকন্যাও তাদের মধ্যে রয়েছে। ঐ কন্যাটির দিকে একদৃষ্টে দেখছেন স্বামীজী। 

কন্যাটির মা, তাঁর মেয়েকে ডেকে, একটি পাত্র করে কিছু খাবার দিয়ে গেলেন। মেয়েটিও খাবারটি সবে মুখে তুলতে যাবে!!এমন সময়ে, আরও দূর থেকে, আরও ছোট একটি ছেলে চিৎকার করে নিজেদের ভাষায় কিছু একটা বলতে বলতে মেয়েটির কাছে ছুটে এলো। মেয়েটি নিজের মুখের খাবারটা রেখে দিলো আবার পাত্রের মধ্যে। খাবার সমেত পাত্রটি এগিয়ে দিলো ঐ ছেলেটির দিকে। 

স্বামীজীও উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন!! চিৎকার করে বললেন - সিস্টার আমি পেয়ে গেছি!!

সিস্টারঃ - কি পেলেন স্বামীজী??

স্বামীজীঃ - মা দূর্গাকে পেয়ে গেছি!! ভারত মা কে খুঁজে পেয়েছি!!

স্বামীজীঃ - ঐ দ্যাখো সিস্টার!! যে মেয়েটা নিজের মুখের খাবার, হাসতে হাসতে ভাইয়ের মুখে তুলে দিতে পারে, যুগ যুগ ধরে সেই তো আমার মা দূর্গা!! সেই তো আমার ভারত মাতা!!

স্বামীজীঃ - সিস্টার!! তুমি পূজার উপকরণ সাজিয়ে ফেল। আগামীকাল দূর্গাপূজার অষ্টমীতে এই মেয়েটিকেই আমি ক্ষির ভবানী মন্দিরে, দূর্গার আসনে বসিয়ে কুমারীপূজা করবো। আমি যাচ্ছি মেয়েটির বাবার সঙ্গে কথা বলতে। 

হঠাৎ স্বামীজীর রাস্তা আটকে দাঁড়ালেন কিছু কুসংষ্কারাচ্ছন্ন কাশ্মীরী পন্ডিত!!

স্বামীজী!! আপনি দাঁড়ান!!

পন্ডিতরাঃ - স্বামীজী!! আপনি না জেনে বুঝেই ভুল করতে যাচ্ছেন!! ঐ মেয়েটিকে আপনি কখনোই দূর্গা রূপে পূজা করতে পারেন না!! ওর জন্ম মুসলমান ঘরে!! ওর বাবা একজন মুসলমান শীকারা চালক!! ও মুসলমানের মেয়ে!!

স্বামীজীর কান দুটো লাল হয়ে গেছে!!

চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠেছে!!

গম্ভীর গলায় স্বামীজী বললেনঃ -

আপনারা আপনাদের মা দূর্গাকে হিন্দু আর মুসলমানের পোষাক দিয়ে চেনেন!! 

আমি আমার মা দূর্গাকে অন্তরাত্মা দিয়ে চিনি!!

ঐ মেয়েটির শরীরে হিন্দুর পোষাক থাক বা মুসলমানের পোষাক, ওই আমার মা দূর্গা!!

আগামীকাল ওকেই আমি দূর্গার আসনে বসিয়ে পূজা করবো!!


পরেরদিন সকাল!!

দূর্গাপূজার অষ্টমী!!

ক্ষির ভবানী মন্দিরে ঘন্টা বাজছে, শাঁখ বাজছে!!

মুসলমানের মেয়ে, বসে আছে দূর্গা সেজে!!

পূজা করছেন, হিন্দুর সন্তান স্বামী বিবেকানন্দ!!

পূজার উপকরণ সাজিয়ে দিচ্ছেন, খ্রীষ্টান ঘরে জন্ম নেওয়া ভগিনী নিবেদিতা!!


এই হলো মহামানবের দূর্গা পূজা। এই হলো মানবিকতার দূর্গা পূজা।

মা আমাদের সবার। জাত ধর্মে নির্বিশেষে সবার। মা র কোনো জাত ধর্মে নেই, থাকে না।

      ( সংগ্রহ)

=======================

No comments:

Post a Comment