Saturday, October 30, 2021

27>|| ঈশ্বরের সঙ্গে একলা থাক ||

27>|| ঈশ্বরের সঙ্গে একলা থাক ||

               স্বামী যতীশ্বরানন্দ

সাধুসঙ্গের সুযোগ না হলে কি করা যাবে?"

★ইষ্ট দেবতার, তাঁর শুদ্ধ সাকার রূপের ধ‍্যান কর, তাঁরই সঙ্গ কর। ইষ্টের সঙ্গে কথা বলতে শেখ।"

★যখনই তুমি সাধুসঙ্গের প্রয়োজন বোধ করবে ঈশ্বরের চিন্তা কর; তাঁর নাম জপ কর। তিনিই আমাদের পেছনে সর্বশক্তির ধারক হয়ে রয়েছেন, তাঁকে বাদ দিলে আমাদের কোন অস্তিত্বই থাকে না। তিনি আমাদের আত্মার আত্মা। এই অন্তরাত্মার সঙ্গে সংযোগসাধনের চেষ্টা কর।

★একলা থাকার এক সহজাত ভীতি সকলের মধ্যেই যেন আছে বলে মনে হয়। কোন রকম একটা সঙ্গী তাদের সর্বদা দরকার। 

★কিন্তু যারা অন্তর থেকে নিজ ব‍্যক্তিত্বকে একটি পূর্ণ রূপ দিতে সমর্থ হয়েছে তাদের আর বাহ‍্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয় না।

★একলাই শান্তিতে থাক। কেবল একলা থাকলেই তুমি ভগবৎ সঙ্গ আরো স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারবে। ঈশ্বরের সঙ্গে একলা থাক। অন্তরের দেবতার সঙ্গই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট।"

             ------ স্বামী যতীশ্বরানন্দ ------

*** জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ জয় মা জগৎজনণী জয় স্বামীজি মহারাজ ।লহ প্রনাম ।শুভ রাত্রি ।ভালো থাকবেন সকলে ।।***

                (সংগ্রহীত)

                 আদ্যনাথ

=====================

Wednesday, October 27, 2021

26 >|| ফলের প্রাপ্তি=জপ-ধ্যান করে

 26>|| ফলের প্রাপ্তি=জপ-ধ্যান করে

অমৃতকথা কথামৃত থেকে।

অমৃতকথা স্বামী ভূতেশানন্দ

   প্রশ্নঃ   জপ-ধ্যান করে যদি তার ফল আমরা ভগবানকে অর্পণ করি , তাহলে আমাদের সেই ফলের প্রাপ্তি কি করে হবে মহারাজ ? 

      উত্তরঃ  হবে না । বিশ্বাস রাখতে হবে । ঠাকুরের গল্প -- লঙ্কা থেকে একজন সমুদ্রের উপর হেঁটে আসছে , বিভীষণ কাগজে কি লিখে দিয়েছেন--- তাই নিয়ে । বেশ আসছে , হঠাৎ মনে হলো এর ভিতরে কি লেখা আছে দেখি তো ! খুলে দেখে তাতে কেবল ' রাম ' নাম লেখা আছে । তার মনে হলো --- এই ! মনে একটু সন্দেহ হতেই ডুবে গেল ; যতক্ষণ বিশ্বাস ছিল সমুদ্রের উপর দিয়ে সে বেশ হেঁটে আসছিল ।

====================

যাত্রাওয়ালা ও সংসারে সাধনা — ঈশ্বরদর্শনের (আত্মদর্শনের) উপায়

শ্রীরামকৃষ্ণ (বিদ্যা অভিনেতার প্রতি) — আত্মদর্শনের উপায় ব্যাকুলতা। কায়মনোবাক্যে তাঁকে পাবার চেষ্টা। যখন অনেক পিত্ত জমে তখন ন্যাবা লাগে; সকল জিনিস হলদে দেখায়। হলদে ছাড়া কোন রঙ দেখা যায় না।

“তোমাদের যাত্রাওয়ালাদের ভিতর যারা কেবল মেয়ে সাজে তাদের প্রকৃতি ভাব হয়ে যায়। মেয়েকে চিন্তা করে মেয়ের মতো হাবভাব সব হয়। সেইরূপ ঈশ্বরকে রাতদিন চিন্তা করলে তাঁরই সত্তা পেয়ে যায়।"

“মনকে যে রঙে ছোপাবে সেই রঙ হয়ে যায়। মন ধোপাঘরের কাপড়।”

বিদ্যা — তবে একবার ধোপাবাড়ি দিতে হবে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — হ্যাঁ, আগে চিত্তশুদ্ধি; তারপর মনকে যদি ঈশ্বরচিন্তাতে পেলে রাখ তবে সেই রঙই হবে। আবার যদি সংসার করা, যাত্রাওয়ালার কাজ করা — এতে ফেলে রাখো, তাহলে সেই রকমই হয়ে যাবে।

—ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত থেকে।

==========================

শ্রীমাসারদা দেবী র আহার প্রসঙ্গে মা আম বেশি মিষ্ট অপেক্ষা অম্লমধুর --- টক টক, মিষ্টি মিষ্টি----আমই বেশি ভালোবাসিতেন।

 তিনি বোম্বাইয়ের আলফানসো, পেয়ারাফুলি ও ছোট ল্যাংড়া আম ভালোবাসিতেন, তবে ভক্তির সহিত কেউ খুব টক আম দিলে পরম প্রিয় বোধে আহার করিতেন ।

শাকের মধ্যে ছোলা শাক, মূলোশাক, আমরুল শাক ভালোবাসিতেন।

ফুটকড়াই, মুড়ি, বেগুনি, ফুলুরি, ঝালবড়া, আলুরচপ এই সব তেলেভাজা জিনিস খুব পছন্দ করিতেন।

মুগের নাড়ু, ঝুরিভাজা ইত্যাদিও তাঁহার প্রিয় ছিল।

রাতাবি সন্দেশ এবং রাঙা আলুর রসপুলি পিঠও ভালোবাসিতেন।

কলাইএর পাতলা ডাল ও পোস্ত বড়াও মায়ের খুব প্রিয় ছিল।

পান খাইতেন ও গুল মা দাঁতে দিতেন ।

সূত্র শ্রীশ্রীমায়ের কথা

অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে ।

জ্ঞানবৈরাগ্যাসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি চ পার্বতী ।। 

জয় মা...

আমাদের মা ই স্বয়ং অন্নপূর্ণা

“এক জেলে রাত্রে এক বাগানে জাল ফেলে মাছ চুরি করছিল। গৃহস্থ জানতে পেরে, তাকে লোকজন দিয়ে ঘিরে ফেললে। মশাল-টশাল নিয়ে চোরকে খুঁজতে এল। এদিকে জেলেটা খানিকটা ছাই মেখে, একটা গাছতলায় সাধু হয়ে বসে আছে। ওরা অনেক খুঁজে দেখে, জেলে-টেলে কেউ নেই, কেবল গাছতলায় একটি সাধু ভস্মমাখা ধ্যানস্থ। পরদিন পাড়ায় খবর হল, একজন ভারী সাধু ওদের বাগানে এসেছে। এই যত লোক ফল ফুল সন্দেশ মিষ্টান্ন দিয়ে সাধুকে প্রণাম করতে এল। অনেক টাকা-পয়সাও সাধুর সামনে পড়তে লাগল। জেলেটা ভাবল কি অশ্চর্য! আমি সত্যকার সাধু নই, তবু আমার উপর লোকের এত ভক্তি। তবে সত্যকার সাধু হলে নিশ্চয়ই ভগবানকে পাব, সন্দেহ নাই।"

“কপট সাধনাতেই এতদূর চৈতন্য হল। সত্য সাধন হলে তো কথাই নাই। কোন্‌টা সৎ কোন্‌টা অসৎ বুঝতে পারবে। ঈশ্বরই সত্য, সংসার অনিত্য।”

একজন ভক্ত ভাবিতেছেন, সংসার অনিত্য? জেলেটা তো সংসারত্যাগ করে গেল। তবে যারা সংসারে আছে, তাদের কি হবে? তাদের কি ত্যাগ করতে হবে? শ্রীরামকৃষ্ণ অহেতুক কৃপাসিন্ধু — অমনি বলিতেছেন, “যদি কেরানিকে জেলে দেয়, সে জেল খাটে বটে, কিন্তু যখন জেল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়, তখন সে কি রাস্তায় এসে ধেই ধেই করে নেচে বেড়াবে? সে আবার কেরানিগিরি জুটিয়ে লেয়, সেই আগেকার কাজই করে। গুরুর কৃপায় জ্ঞানলাভের পরেও সংসারে জীবনন্মুক্ত হয়ে থাকা যায়।”

এই বলিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সংসারী লোকদের অভয় দিলেন।

প্রকৃত ভক্ত হলে ভগবান  তাঁর  আচার রীতি   দেখেন না। তিনি দেখেন ভক্ত তাঁর জন্য কতটা ভাবেন! মনের ভক্তি, ব্যাকুলতাই হলো আসল-------   

দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার ঠাকুরকে খুব ভক্তি করতেন। তাই প্রায়শ দক্ষিনেশ্বর  আসতেন। একবার দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার  আদালতের নথিপত্র, দলিল ইত্যাদি সমেত দক্ষিনেশ্বরে ঠাকুরের  সাথে দেখা করতে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কারন এই বিষয় সম্পত্তির কালিমা লিপ্ত কাগজ তিনি  ঠাকুরের সামনে আনতে চান নি।  ঠাকুর কিন্তু  তাঁকে দেখতে পেয়ে ভেতরে ডেকে পাঠালেন। তিনি প্রবল আপত্তি জানলে বললেন----" তোমাদের ওতে দোষ  হবে না, তুমি ভেতরে এস।"

 আবার তিনি একদিন অশুচি বস্ত্রে হঠাত দক্ষিনেশ্বর   আসেন। সেদিন তিনি ঠিক করেন ঠাকুরকে স্পর্শ করবেন না। সেদিনও কিন্তু তাঁকে দেখে ঠাকুর বললেন ------"এস, আমার কাছে এসে বসো।"

   আবার একদিন তিনি ঠাকুরের জন্য  পরম যত্ন করে গরম মিহিদানা   নিয়ে আসছিলেন। এদিকে আসার সময় তাঁর পাশে অন্য ধর্মের , বড়ো বড়ো দাড়ি  ওয়ালা  এক ব্যক্তি বসেছিলেন। তিনি দেবেন্দ্রর  সাথে খুব গল্প করতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে  দেবেন্দ্র লক্ষ্য করলেন তাঁর মুখ  থেকে সমানে  থু থু নির্গত হয়ে মিহিদানার প্যাকেটে পড়ছে। খুব মনটা খারাপ হয়ে গেল তাঁর। ঠাকুরের জন্য হাতে করে নিয়ে এলেন, আর তা অপবিত্র হয়ে গেল!  কি আর করবেন! এইসব সাত পাঁচ  ভাবতে লাগলেন।

   দক্ষিনেশ্বর  পৌঁছে তিনি প্যাকেটটি এক কোণে  রেখে দিলেন। এদিকে অবাক কান্ড! কিছুক্ষণ পরেই  ঠাকুরের খুব  খিদে পেয়ে উঠল। খাবারের খোঁজে তিনি নিজের ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে আসতেই সেই প্যাকেটটি ঠাকুর দেখতে পেলেন। দেখেই প্যাকেট খুলে একেবারে বালকের মত  সেই গরম মিহিদানা পরম তৃপ্তি করে খেতে শুরু করলেন ।

 ধন্য ভক্তি দেবেন্দ্র বাবুর। তিনি কৃপা পেয়েছিলেন ঠাকুরের। তাই তো ঠাকুর কোনো  দোষ  ধরেন নি। প্রণাম নাও ঠাকুর। কৃপা কর সকলকে

==========================


      

25>|| পূজো , জপ , একাদশী নিয়ে মা কিছু উপদেশ

 

25>||পূজো , জপ , একাদশী নিয়ে  মা কিছু উপদেশ



পূজো , জপ , একাদশী নিয়ে  মা কিছু উপদেশ দিয়েছেন। কিছু না খেয়ে পূজো করার পক্ষপাতী মা একেবারেই ছিলেন না। কারন মা জানতেন খাবার খেলে তবেই শরীর শক্তি পাবে। তাতে পূজো জপ অনেক ভালো হবে। কোনকিছু  খাওয়া ত্যাগ  করতে ঠাকুর মা কেউই বলেন নি। ঠাকুরও বলতেন কিছু খেয়ে পূজো করবে। খালি পেটে থাকবে না। স্বামীজি বলতেন ----"খালি পেটে কখনো ধর্ম হয় না।"


" জনৈকা ভক্তমহিলা --- একাদশীতে ভাত খান শুনে মা তাঁকে বলছেন, "বৌমা তুমি সধবা মানুষ, একাদশীর দিন ভাত খাবে। উপবাস করবে না। মাছের তেলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে, খাবে। খাওয়ার মধ্যে কিছু নেই মা। জিহ্বাকে কষ্ট দেবে না। যা খাওয়ার ইচ্ছে হয় তাঁকে নিবেদন করে খাবে।


 অনিবেদিত বস্তু খাবে না। প্রসাদ আর হরিতে কোন বিভেদ নেই জানবে। খেয়ে-দেয়ে ঠাণ্ডা হয়ে ভগবানের নাম করবে। মায়ের কথা শুনে ভক্তমহিলাটি মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "সকালে উঠে আগে জপ করে নিয়ে তিনি তারপর কিছু খান।" মা তার উত্তরে বলছেন, "সকালে আগে কিছু খেয়ে জপ করা যায়, তাতে কোন দোষ নেই।


 সন্ধ্যেবেলাতেও সারাদিনের কাজের পরে মুখে কিছু দিয়ে জল খেয়ে জপ-ধ্যানে বসলে শরীরটা বেশ শীতল হয়ে যায়। " 


      জয় মা, জয় ঠাকুর, জয় স্বামীজি🙏

24>|| ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য ||

 

  24>|| ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য ||

আজকের বিষয়, কিছু বিস্ময়কর তথ্য,
যেখানে ধর্ম আর বিজ্ঞান পরস্পরের মেলবন্ধনে মিলেমিশে একাকার।

নিচের মন্দিরগুলির বিষয়ে একটু জানুন।

১। কেদারনাথ,--উত্তরাখন্ড।79.0669°
২। কালহস্তী,--অন্ধ্রপ্রদেশ।79.7037°
৩। একাম্বরনাথ,--কাঞ্চি।79.7036°
৪। থিরুবনমালী।--তামিলনাড়ু।79.0747°
৫। থিরুবনইকবাল- তামিল,,  78.7108°
৬। চিদাম্বরম নটরাজ--তামিল,,79.6954°
৭। রামেশ্বরম--তামিলনাড়ু। 79.3129°
৮। কালেশ্বরম,--তেলেঙ্গানা 79.9067°

কোন সম্পর্ক খুঁজে পেলেন কি ? কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে আদৌ আছে কিনা, ধারনা করতে পারেন ? একটা সম্পর্ক হল এগুলো সবই শিব মন্দির। আর কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে নেই ?

তাহলে আসুন দেখা যাক এসব মন্দিরের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক আছে কিনা ! আশ্চর্যজনক ভাবে সত্যি এটাই যে, এই মন্দিরগুলি সবই একই ৭৯° দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত।

বিস্ময়কর হল, কোন প্রকার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, জিএসপি বা অনুরূপ কৌশল ছাড়াই তখনকার স্থপতিরা শত শত কিলোমিটার দূরবর্তী এতগুলো মন্দিরকে একই দ্রাঘিমারেখায় কিভাবে স্থাপন করেছিলেন !

প্রত্যেকটি মন্দিরের পৃথক দ্রাঘিমাংশের দিকে খেয়াল করুন -
১। কেদারনাথ: ৭৯.০৬৬৯°।
২। কলহস্তী: ৭৯.৭০৩৭°।
৩। একাম্বরনাথ: ৭৯.৭০৩৬°।
৪। তিরুবনমালী: ৭৯.০৭৪৭°।
৫। থিরুবনইকবাল: ৭৮.৭১০৮
৬। চিদাম্বরম নটরাজ: ৭৯.৬৯৫৪°।
৭। রামেশ্বরম: ৭৯.৩১২৯°।
৮। কালেশ্বরম: ৭৯.৯০৬৭°।

নিচের ছবিটি দেখুন। সবগুলো মন্দিরই একটি সরলরেখায় অবস্থিত। আশ্চর্যজনক হল, তখনকার স্থপতিরা কত উন্নত মানের প্রযুক্তির অনুশীলন করতেন, যা এই যুগেও আমাদের কাছে সহজবোধ্য নয়।

আরো আশ্চর্যজনক হল, এই সবগুলো মন্দিরই প্রকৃতির ৫টি চিরন্তনী বিষয়কে উপস্থাপন করে, যাদের একত্রে " পঞ্চতত্ব" বা "পঞ্চভূত" বলা হয়। এগুলো হল ভূ বা পৃথিবী, বারি বা জল, পাবক বা আগুন, পবন বা বায়ূ এবং ভূত বা স্থান বা মহাশূন্য। এই পাঁচটি বিষয় দ্বারা উপরের আটটির মধ্যে পাঁচটি শিব মন্দিরকে এইভাবে  উপস্থাপন করা হয়েছে যে -

১। তিরুবনমালী মন্দিরকে জল দ্বারা,
২। থিরুবনইকবাল মন্দিরকে অগ্নি দ্বারা,
৩। কলহস্তী মন্দিরকে বায়ূ দ্বারা,
৪। একাম্বরনাথ মন্দিরকে পৃথিবী দ্বারা এবং
৫। চিদাম্বরম মন্দিরকে মহাশূন্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই পাঁচটি মন্দির একত্রে বাস্তু, বিজ্ঞান এবং বেদ এর মহামিলনকে উপস্থাপন করে।

এই মন্দিরগুলোর মধ্যে আরো কিছু ভূতাত্ত্বিক বিশেষত্ব আছে। এই পাঁচটি মন্দির আসলে যোগ বিজ্ঞানের সাহায্যে পরস্পরের প্রতি এক বিশেষ ভৌগলিক অবস্থানে নির্মিত, যার সাথে বিজ্ঞান এবং মানবশরীরবৃত্তীয় বিষয়াদির সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

এই মন্দিরগুলো আজ থেকে অন্তত চার হাজার বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময় এসব স্থানের অক্ষাংশ বা দ্রাঘিমাংশ মাপার মত কোন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বা জিপিএস ছিলনা। সেই সময়ে এতগুলি মন্দির এত নির্ভুলভাবে একটি সরলরেখায় কিভাবে স্থাপন করা হয়েছিল তা ঈশ্বরই জানেন।

এই সরলরেখাটিকে বলা হচ্ছে "শিবশক্তি অক্ষ রেখা"। এই রেখাটির ৮১.৩১১৯° পূর্ব অক্ষাংশে রেখে কৈলাশের সবগুলো শিব মন্দির নির্মিত হয়েছে। কেন তা ঈশ্বর জানেন।

মহাকালের সাথে শিবজ্যোতির্লিঙ্গম এর আরো বিশেষ কিছু সম্পর্ক রয়েছে ! সনাতন ধর্মে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য উজ্জয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই উজ্জয়ন থেকে বিভিন্ন জ্যোতির্লিঙ্গম সমূহের মধ্যবর্তী দূরত্বওগুলি দেখুন কতটা চমকপ্রদ -

উজ্জয়ন থেকে সোমনাথ ৭৭৭ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে ওঙ্কারেশ্বর ১১১ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে ভীমাশঙ্কর ৬৬৬ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে কাশী বিশ্বনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে মল্লিকার্জুন ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে কেদারনাথ ৮৮৮ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে ত্র্যম্বকেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে বৈজুনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে রামেশ্বরম ১৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ন থেকে নৌশেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।

সনাতন ধর্মতত্বে কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় ছিল না এবং বিনা কারনে কোন কিছুই করা হয়নি। অতীতে সনাতন ধর্মে উজ্জয়নকে বিবেচনা করা হত বিশ্বের (ভূ-গোলকের) কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। সেই হিসেবে এখানে প্রায় ২০৫০ বছর পূর্বে ভূ-তত্ব, সূর্য এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পরিমাপের জন্য হস্তচালিত কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, আনুমানিক ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা যখন ভূ-গোলকের মাঝামাঝি একটি কাল্পনিক রেখা টানেন, তখনও এর কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল ঐ উজ্জয়ন। বর্তমান সময়েও বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানী সূর্য ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণার কাজ করতে উজ্জয়নেই আসেন।
             (সংগ্রহীত)
      <----- আদ্যনাথ----->
=========================

Monday, October 25, 2021

23>|| শিব কে?;--++ইষ্টের ধ‍্যান

 23>শিব কে?;--+ইষ্টের ধ‍্যান ||

==================

1>শিব কে?;--

প্রথমে জানবো শিব শব্দের অর্থ , শিব শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে  কল্যাণকারী  বা  মঙ্গল।  ভগবান শিবের পাঁচটি মুখ রয়েছে , এই পাঁচ মুখ দিয়ে তিনি জগতের মঙ্গল করে থাকেন , তাই তিনি কল্যাণকারী বা শিব নামে পরিচিত। 


 পাঁচ মুখ যথাক্রমে বামদেব , কালাগ্নি , দক্ষিনেশ্বর , ঈশান এবং কল্যাণ সুন্দরম্। আবার কোথাও একে ঈশান , তৎপুরুষ , অঘোর , বামদেব এবং সদ্যোজাত নামেও উল্লেখিত হয়েছে। শিবের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে  চিত্তিশক্তি  যা সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত। শিবের তৃতীয় অর্থ  সদাশিব। 


 ব্রহ্মের সাকার এবং সগুণ রুপকে বলা হয় সদাশিব । তিনি আনুমানিক সাত হাজার বছর পূর্বে অবতরিত হয়েছেন । পরব্রহ্মের নানা শক্তির নানা অভিব্যাক্তিকে বলা হয়েছে দেবতা কিন্তু শিব এইসব দেবতাদেরও দেবতা । তাই তার এক নাম  মহাদেব । যাকে পরব্রহ্ম বলা হয়েছে যিনি নিরাকার এবং নির্গুণ তিনিই ' শিব ' নামে বিখ্যাত । যা সৃষ্টির মূলতত্ত্ব তাই শিবতত্ত্ব । বিভিন্ন শাস্ত্রে একমাত্র শিবকেই ' ঈশ্বর ' রূপে মানা হয়েছে । ভগবান শিবই এই সম্পূর্ণ সৃষ্টির অনাদি দেব । যার মহিমা বেদ , পুরাণ , দর্শন , যোগ , তন্ত্র ইত্যাদি সাহিত্যে সর্বত্র বর্ণিত হয়েছে। 


 ভারতের জন মানস যতটুকু বৈষ্ণব ধর্মে প্রভাবিত তার থেকে অনেক বেশি প্রভাবিত শৈবধর্মে। ভগবান শিব যোগী , ভক্ত , তান্ত্রিক , বেদান্তি , কর্মকাণ্ডী , উপাসক এবং দার্শনিক সকলের কাছে পূজনীয়। তিনিই জ্ঞান , কর্ম এবং ভক্তির আদি দেবতা । তিনিই পরমপুরুষ পরমব্রহ্ম । শিব এবং শক্তি মিলেই ব্রহ্ম তাই শিবকে ' অর্দ্ধনারীশ্বর ' বলা হয় । 


 তার দক্ষিণ অঙ্গ শিব স্বরূপ এবং বাম অঙ্গ শক্তিরূপ । মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করেছেন । মহাভারতের অনুশাসন পর্বে ( 15/11 ) লিখিত হয়েছে --- শিবের সমান দেব নেই , শিবের সমান গতি নেই , শিবের সমান দাতা নেই , শিবের সমান বীর নেই। 

আসলে শিব কে ? শিবের পরিচয় কি ? এর যথার্থ বর্ণনার শেষ নেই , এর আদি অন্ত নেই। 

 

ওঁ নমঃ শিবায়।

           আদ্যনাথ রায় চোধুরী।

========================


2>ইষ্টের ধ‍্যান করার নিয়ম::--   

                       স্বামী বলভদ্রানন্দ।


গুরুদেবের দেওয়া মহামন্ত্র জপ করার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে ইষ্টমূর্তির ধ‍্যান করুন।আমাদের ধ‍্যান করার পদ্ধতি যেটা রামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ মিশনে শেখানো হয় সর্বত্রই---সেই পদ্ধতিতে।


*পদ্ধতিটি হচ্ছে "আপনি যেদিকে মুখ করে বসে আছেন, ভাববেন আপনার গুরু ও ইষ্ট সেই দিকেই চেয়ে আছেন।"*


পকেটে ঠাকুরের ছবি রাখেন তো? সেই ছবিটি যদি হৃদয়ে রাখেন তাহলে দেখা যাচ্ছে আপনি যেদিকে মুখ করে বসে আছেন আপনারা হৃদয়ে ইষ্টের ছবিটির মুখও একই দিকে।

*"ঠাকুর বলেছেন হৃদয় ডঙ্কমারা জায়গা।* অতত্রব হৃদয়েই ধ‍্যান করতে হবে।


ইষ্ঠের ছবি আমরা সামনাসামনিই দেখতে অভ‍্যস্থ।

*ইষ্টের মুখ ও সাধকের মুখ একই দিকে---এই পদ্ধতিতে যেহেতু দেখতে আমরা অভ‍্যস্থ নই সেহেতু প্রথম প্রথম অসুবিধা হবে।নিত‍্য অভ‍্যাসের ফলে এই পদ্ধতিটি আয়ত্ব করা সম্ভব।*


কথা হচ্ছে আমরা এভাবে ভাববো কেন?আপনি যদি চোখ বন্ধ করে এই পদ্ধতিতে ইষ্টকে হৃদয়ে দেখার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনাকে automatically শরীরের বাইরে গিয়ে দেখতে হবে।


*এই বাইরে গিয়ে ইষ্টকে ধ‍্যানে হৃদয়ে দেখার চেষ্টাটিতে যদি আপনি নিত‍্য অভ‍্যাসের ফলে প্রতিষ্ঠিত হন,তাহলে আপনার ধীরে ধীরে শরীর্ত বোধটি কেটে যাবে*।


*প্রকৃত পক্ষে আমি যে ব্রহ্ম এটা বুঝতে হবে ,অনুভব করতে হবে। কাজেই শরীরের বাইরে এ বোধটাকে নিয়ে যেতেই হবে।*

               ( সংগ্রহ)

        আদ্যনাথ রায় চৌধুরী।

=======================




Monday, October 18, 2021

22>||★★ঐতিহাসিক নিলাম* -

  


22>||★★ঐতিহাসিক নিলাম* - 

       -( সংগ্রহ )

১৯৪৪ সালের ২৬ শে জানুয়ারী, 

রেঙ্গুনের মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং প্রাঙ্গনে নেতাজীর সম্মানে আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ সভা বর্মায় এটি প্রথম জনসভা, গন্যমান্য ব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষের মিলনে সভা তখন জনসমুদ্র।  

নেতাজী নামের এমন জাদু !

সভার প্রথমে বর্মার অধিবাসীদের তরফ থেকে নেতাজীকে একটি মালা পরানো হয়। তারপর নেতাজী প্রায় দু ঘণ্টা বলে গেলেন  ..... ...কখন যে এতটা সময় কেটে গেছে কেউ টের পায়নি -- শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ।

এবার নেতাজী মালাখানি নিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বল্লেন -- এই মালাখানি সমস্ত বর্মাবাসী মানুষের শুভেচ্ছার প্রতীক। এই হিসাবে এটি অমূল্য। কালে এটি শুকিয়ে হয়ে যাবে মূল্যহীন। তাই এই মুহূর্তে এর যথার্থ মূল্যায়নের জন্যে আমি এটি নিলাম করতে চাই। যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে রেঙ্গুনে খোলা হবে আজাদ হিন্দ সংগ্রহশালা।

সর্বপ্রথম আকুল কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল এক শিখ যুবক, হরগোবিন্দ সিং -- 'নেতাজী, ঐ মালা আমি কিনতে চাই, এক লাখ ডলার মূল্য দেব'।

স্থানীয় বিখ্যাত ব্যবসায়ী ব্রিজলাল হরগোবিন্দকে পিছনে ফেলে বলেন -- 'আমি চাই ঐ মালা,দাম দু লাখ ডলার' আর একজন হেঁকে ওঠেন -- আড়াই লাখ। ব্রিজলাল গলা চড়ান -- তিন লাখ ডলার --- 'তিন লাখ দশ হাজার ..... ....... ।

মালার মূল্য ক্রমশই উর্ধমুখী, হরগোবিন্দ  নাছোড়বান্দা চিৎকার করেন -- চার লাখ।

সভার জনতা হরগোবিন্দকে সমর্থন করে। ... ব্রিজলাল এসেছেন ব্যবসায়ী ও অহংকারী মন নিয়ে, তিনি এটাকে পরাজয় মনে করে বলেন --'তবে পাঁচলাখ এক হাজার ....

হরগোবিন্দ বুঝলেন তাঁর আশা পূর্ণ হবার নয়, প্রায় সর্বস্ব পণ করেও পারলেন না ঐ পরম সম্পদের মালিক হতে ..... ।


নিলাম চলতে থাকে দুই ধনকুবেরের মধ্যে, শেষে দাম উঠলো সাত লক্ষ ডলার .... দিয়েছেন ব্রিজলাল ...

ব্রিজলাল এগিয়ে চলেছেন সম্পদটি নিতে, নেতাজী আসছেন সমর্পন করতে ... ঠিক সেই মুহূর্তে আর্তকন্ঠে চিৎকার করে উঠলেন হরগোবিন্দ ----- 'নে---তা---জী' ......

জনতা বললে - নেতাজীকে ডেকে কি হবে..? ক্ষমতা থাকে তো দাম বাড়াও ...

হরগোবিন্দ বল্লে - তোমার সঙ্গে আমার কথা নেই, যা বলার নেতাজীকে বলব ...

নেতাজী বললেন -- বলো, কি বলতে চাও।

হরগোবিন্দর চোখে তখন জল আর আগুন --- 'ভিক্ষা করার ভঙ্গীতে বললেন ---- ------  "নেতাজী, সিঙ্গাপুরে আমার ক'খানা বাড়ী আছে, গ্যারাজে আটখানা ট্রাক আছে, তিনচার লক্ষ ডলার আছে, আরও হয়ত কিছু আছে --জানি না সব যোগ করলে সাত লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে যাবে কিনা !!! তবে এই নিলামে আমার শেষ ডাক -- যেখানে আমার যা কিছু আছে,শেষ কপর্দক পর্যন্ত -- সব আমি আজাদ হিন্দ ফান্ডে লিখে দিচ্ছি,--- বিনিময়ে ঐ মালাখানি আমার চাই ----

হরগোবিন্দর দুচোখে বর্ষার ধারা .... দেহ কাঁপছে ....

নেতাজীর চোখে আনন্দ ... মঞ্চ থেকে নেমে এলেন, বুকে জড়িয়ে ধরলেন হরগোবিন্দকে .... মালাখানি পরিয়ে দিতে গেলে হরগোবিন্দ বললেন ...... "আপনার গলার মালা কি আমি গলায় পরতে পারি নেতাজী .... আমার মাথায় রাখুন" !!!

ব্রিজলাল ছাড়তে চান না তার অধিকার ... তাকে নেতাজী শান্ত করেন ,বলেন --- বহ তো নঙ্গা ফকির বন চুকা,ওর সঙ্গে তোমার আর লড়াই চলে না ভাই,টাকা দিয়ে ভিখিরিকে ডিঙোনো যায় না"

এবার হরগোবিন্দ একটি আর্জি পেশ করল --নেতাজী, আর একটি ভিক্ষা।  'বলো হরগোবিন্দ', আশ্বাস দিলেন নেতাজী....

হরগোবিন্দ বললেন -- "এখন গাছতলা ছাড়া আমার তো আর দাঁড়াবার স্থান রইল না , দিনে দু মুঠো গমও তো চাই জীবন ধারনের জন্য, তাই আপনি আমাকে আশ্রয় দিন, আজাদ হিন্দ ফৌজে ভর্তি করে নিন দয়া করে"।

অভিভূত নেতাজী বুকে টেনে নিলেন এই  সর্বস্ব ত্যাগী যুবককে।।

--- --- এমন দৃশ্য, এমন ইতিহাস আর কেউ কি কোন ও দিন গড়তে পারবে ?

-------জয় হিন্দ----- 🇮🇳

==========================

Sunday, October 17, 2021

21>||★★ 'মা'এর কোনো জাত ধর্মে নেই, থাকে না।

 


★★21>মা'এর কোনো জাত ধর্মে নেই, থাকে না।

                   স্বামী বিবেকানন্দ।

১৮৯৮ সাল!!

চিকাগো থেকে ফেরার পর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। স্বামীজী বসে আছেন বেলুড় মঠের গঙ্গার তীরে। শীতের বিকালের শেষ রোদ গঙ্গার ঢেউয়ের বিভঙ্গে লুকোচুরি খেলছে তখন। 

স্বামীজীর পাশেই বসে আছেন, তাঁর বিদেশীনী শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা। 

নৈস্বর্গীক নিস্তব্ধতা ভেঙে, জলদগম্ভীর কন্ঠে স্বামীজী বলে উঠলেনঃ - 

নাঃ সিস্টার!! এই ভাবে বসে বসে সময় নষ্ট করা ঠিক হচ্ছেনা!!


সিস্টারঃ - বলুন স্বামীজী কি করতে হবে??

স্বামীজীঃ - সারা পৃথিবী কে আমি ভারতীয় দর্শন তো বোঝালাম। কিন্তু আমি নিজে কি আজও ভারত মা কে জানা চেনার চেষ্টা করেছি?? ভাবছি পায়ে হেঁটে আমি ভারত মা কে দর্শন করবো। তুমি কি পারবে আমার সঙ্গে যেতে??

সিস্টারঃ - এ তো আমার পরম সৌভাগ্য স্বামীজী!! এই দেশটাকে আমি আমার নিজের দেশ ভেবে সব ছেড়ে চলে এসেছি। এই দেশকে চেনা জানার সৌভাগ্য আমি অর্জন করতে চাই। যত কষ্টই হোক, আমি আপনার সঙ্গে যাব স্বামীজী!!

যেমন ভাবনা, তেমন কাজ!!

দক্ষিণের কন্যাকুমারী থেকে শুরু হলো পায়ে হেঁটে ভারত দর্শন। গন্তব্য উত্তরের কাশ্মীর উপত্যকা। 

টানা প্রায় ৬ মাস পথ চলে, অক্টোবরে স্বামীজী পৌঁছালেন কাশ্মীর। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর তখন প্রায় চলছেনা, একটু বিশ্রাম চাইছে। উপত্যকার একটা ফাঁকা মাঠের পাশে একটা পাথরের খন্ডের উপর বসে ক্ষণিক বিশ্রাম নিচ্ছেন স্বামীজী। সামনের মাঠে খেলা করছে কয়েকটি স্থানীয় শিশু কিশোর। 

একটি বছর পাঁচেকের শিশুকন্যাও তাদের মধ্যে রয়েছে। ঐ কন্যাটির দিকে একদৃষ্টে দেখছেন স্বামীজী। 

কন্যাটির মা, তাঁর মেয়েকে ডেকে, একটি পাত্র করে কিছু খাবার দিয়ে গেলেন। মেয়েটিও খাবারটি সবে মুখে তুলতে যাবে!!এমন সময়ে, আরও দূর থেকে, আরও ছোট একটি ছেলে চিৎকার করে নিজেদের ভাষায় কিছু একটা বলতে বলতে মেয়েটির কাছে ছুটে এলো। মেয়েটি নিজের মুখের খাবারটা রেখে দিলো আবার পাত্রের মধ্যে। খাবার সমেত পাত্রটি এগিয়ে দিলো ঐ ছেলেটির দিকে। 

স্বামীজীও উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন!! চিৎকার করে বললেন - সিস্টার আমি পেয়ে গেছি!!

সিস্টারঃ - কি পেলেন স্বামীজী??

স্বামীজীঃ - মা দূর্গাকে পেয়ে গেছি!! ভারত মা কে খুঁজে পেয়েছি!!

স্বামীজীঃ - ঐ দ্যাখো সিস্টার!! যে মেয়েটা নিজের মুখের খাবার, হাসতে হাসতে ভাইয়ের মুখে তুলে দিতে পারে, যুগ যুগ ধরে সেই তো আমার মা দূর্গা!! সেই তো আমার ভারত মাতা!!

স্বামীজীঃ - সিস্টার!! তুমি পূজার উপকরণ সাজিয়ে ফেল। আগামীকাল দূর্গাপূজার অষ্টমীতে এই মেয়েটিকেই আমি ক্ষির ভবানী মন্দিরে, দূর্গার আসনে বসিয়ে কুমারীপূজা করবো। আমি যাচ্ছি মেয়েটির বাবার সঙ্গে কথা বলতে। 

হঠাৎ স্বামীজীর রাস্তা আটকে দাঁড়ালেন কিছু কুসংষ্কারাচ্ছন্ন কাশ্মীরী পন্ডিত!!

স্বামীজী!! আপনি দাঁড়ান!!

পন্ডিতরাঃ - স্বামীজী!! আপনি না জেনে বুঝেই ভুল করতে যাচ্ছেন!! ঐ মেয়েটিকে আপনি কখনোই দূর্গা রূপে পূজা করতে পারেন না!! ওর জন্ম মুসলমান ঘরে!! ওর বাবা একজন মুসলমান শীকারা চালক!! ও মুসলমানের মেয়ে!!

স্বামীজীর কান দুটো লাল হয়ে গেছে!!

চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠেছে!!

গম্ভীর গলায় স্বামীজী বললেনঃ -

আপনারা আপনাদের মা দূর্গাকে হিন্দু আর মুসলমানের পোষাক দিয়ে চেনেন!! 

আমি আমার মা দূর্গাকে অন্তরাত্মা দিয়ে চিনি!!

ঐ মেয়েটির শরীরে হিন্দুর পোষাক থাক বা মুসলমানের পোষাক, ওই আমার মা দূর্গা!!

আগামীকাল ওকেই আমি দূর্গার আসনে বসিয়ে পূজা করবো!!


পরেরদিন সকাল!!

দূর্গাপূজার অষ্টমী!!

ক্ষির ভবানী মন্দিরে ঘন্টা বাজছে, শাঁখ বাজছে!!

মুসলমানের মেয়ে, বসে আছে দূর্গা সেজে!!

পূজা করছেন, হিন্দুর সন্তান স্বামী বিবেকানন্দ!!

পূজার উপকরণ সাজিয়ে দিচ্ছেন, খ্রীষ্টান ঘরে জন্ম নেওয়া ভগিনী নিবেদিতা!!


এই হলো মহামানবের দূর্গা পূজা। এই হলো মানবিকতার দূর্গা পূজা।

মা আমাদের সবার। জাত ধর্মে নির্বিশেষে সবার। মা র কোনো জাত ধর্মে নেই, থাকে না।

      ( সংগ্রহ)

=======================