26>|| ফলের প্রাপ্তি=জপ-ধ্যান করে
অমৃতকথা কথামৃত থেকে।
অমৃতকথা স্বামী ভূতেশানন্দ
প্রশ্নঃ জপ-ধ্যান করে যদি তার ফল আমরা ভগবানকে অর্পণ করি , তাহলে আমাদের সেই ফলের প্রাপ্তি কি করে হবে মহারাজ ?
উত্তরঃ হবে না । বিশ্বাস রাখতে হবে । ঠাকুরের গল্প -- লঙ্কা থেকে একজন সমুদ্রের উপর হেঁটে আসছে , বিভীষণ কাগজে কি লিখে দিয়েছেন--- তাই নিয়ে । বেশ আসছে , হঠাৎ মনে হলো এর ভিতরে কি লেখা আছে দেখি তো ! খুলে দেখে তাতে কেবল ' রাম ' নাম লেখা আছে । তার মনে হলো --- এই ! মনে একটু সন্দেহ হতেই ডুবে গেল ; যতক্ষণ বিশ্বাস ছিল সমুদ্রের উপর দিয়ে সে বেশ হেঁটে আসছিল ।
====================
যাত্রাওয়ালা ও সংসারে সাধনা — ঈশ্বরদর্শনের (আত্মদর্শনের) উপায়
শ্রীরামকৃষ্ণ (বিদ্যা অভিনেতার প্রতি) — আত্মদর্শনের উপায় ব্যাকুলতা। কায়মনোবাক্যে তাঁকে পাবার চেষ্টা। যখন অনেক পিত্ত জমে তখন ন্যাবা লাগে; সকল জিনিস হলদে দেখায়। হলদে ছাড়া কোন রঙ দেখা যায় না।
“তোমাদের যাত্রাওয়ালাদের ভিতর যারা কেবল মেয়ে সাজে তাদের প্রকৃতি ভাব হয়ে যায়। মেয়েকে চিন্তা করে মেয়ের মতো হাবভাব সব হয়। সেইরূপ ঈশ্বরকে রাতদিন চিন্তা করলে তাঁরই সত্তা পেয়ে যায়।"
“মনকে যে রঙে ছোপাবে সেই রঙ হয়ে যায়। মন ধোপাঘরের কাপড়।”
বিদ্যা — তবে একবার ধোপাবাড়ি দিতে হবে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — হ্যাঁ, আগে চিত্তশুদ্ধি; তারপর মনকে যদি ঈশ্বরচিন্তাতে পেলে রাখ তবে সেই রঙই হবে। আবার যদি সংসার করা, যাত্রাওয়ালার কাজ করা — এতে ফেলে রাখো, তাহলে সেই রকমই হয়ে যাবে।
—ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত থেকে।
==========================
শ্রীমাসারদা দেবী র আহার প্রসঙ্গে মা আম বেশি মিষ্ট অপেক্ষা অম্লমধুর --- টক টক, মিষ্টি মিষ্টি----আমই বেশি ভালোবাসিতেন।
তিনি বোম্বাইয়ের আলফানসো, পেয়ারাফুলি ও ছোট ল্যাংড়া আম ভালোবাসিতেন, তবে ভক্তির সহিত কেউ খুব টক আম দিলে পরম প্রিয় বোধে আহার করিতেন ।
শাকের মধ্যে ছোলা শাক, মূলোশাক, আমরুল শাক ভালোবাসিতেন।
ফুটকড়াই, মুড়ি, বেগুনি, ফুলুরি, ঝালবড়া, আলুরচপ এই সব তেলেভাজা জিনিস খুব পছন্দ করিতেন।
মুগের নাড়ু, ঝুরিভাজা ইত্যাদিও তাঁহার প্রিয় ছিল।
রাতাবি সন্দেশ এবং রাঙা আলুর রসপুলি পিঠও ভালোবাসিতেন।
কলাইএর পাতলা ডাল ও পোস্ত বড়াও মায়ের খুব প্রিয় ছিল।
পান খাইতেন ও গুল মা দাঁতে দিতেন ।
সূত্র শ্রীশ্রীমায়ের কথা
অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে ।
জ্ঞানবৈরাগ্যাসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি চ পার্বতী ।।
জয় মা...
আমাদের মা ই স্বয়ং অন্নপূর্ণা
“এক জেলে রাত্রে এক বাগানে জাল ফেলে মাছ চুরি করছিল। গৃহস্থ জানতে পেরে, তাকে লোকজন দিয়ে ঘিরে ফেললে। মশাল-টশাল নিয়ে চোরকে খুঁজতে এল। এদিকে জেলেটা খানিকটা ছাই মেখে, একটা গাছতলায় সাধু হয়ে বসে আছে। ওরা অনেক খুঁজে দেখে, জেলে-টেলে কেউ নেই, কেবল গাছতলায় একটি সাধু ভস্মমাখা ধ্যানস্থ। পরদিন পাড়ায় খবর হল, একজন ভারী সাধু ওদের বাগানে এসেছে। এই যত লোক ফল ফুল সন্দেশ মিষ্টান্ন দিয়ে সাধুকে প্রণাম করতে এল। অনেক টাকা-পয়সাও সাধুর সামনে পড়তে লাগল। জেলেটা ভাবল কি অশ্চর্য! আমি সত্যকার সাধু নই, তবু আমার উপর লোকের এত ভক্তি। তবে সত্যকার সাধু হলে নিশ্চয়ই ভগবানকে পাব, সন্দেহ নাই।"
“কপট সাধনাতেই এতদূর চৈতন্য হল। সত্য সাধন হলে তো কথাই নাই। কোন্টা সৎ কোন্টা অসৎ বুঝতে পারবে। ঈশ্বরই সত্য, সংসার অনিত্য।”
একজন ভক্ত ভাবিতেছেন, সংসার অনিত্য? জেলেটা তো সংসারত্যাগ করে গেল। তবে যারা সংসারে আছে, তাদের কি হবে? তাদের কি ত্যাগ করতে হবে? শ্রীরামকৃষ্ণ অহেতুক কৃপাসিন্ধু — অমনি বলিতেছেন, “যদি কেরানিকে জেলে দেয়, সে জেল খাটে বটে, কিন্তু যখন জেল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়, তখন সে কি রাস্তায় এসে ধেই ধেই করে নেচে বেড়াবে? সে আবার কেরানিগিরি জুটিয়ে লেয়, সেই আগেকার কাজই করে। গুরুর কৃপায় জ্ঞানলাভের পরেও সংসারে জীবনন্মুক্ত হয়ে থাকা যায়।”
এই বলিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সংসারী লোকদের অভয় দিলেন।
প্রকৃত ভক্ত হলে ভগবান তাঁর আচার রীতি দেখেন না। তিনি দেখেন ভক্ত তাঁর জন্য কতটা ভাবেন! মনের ভক্তি, ব্যাকুলতাই হলো আসল-------
দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার ঠাকুরকে খুব ভক্তি করতেন। তাই প্রায়শ দক্ষিনেশ্বর আসতেন। একবার দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার আদালতের নথিপত্র, দলিল ইত্যাদি সমেত দক্ষিনেশ্বরে ঠাকুরের সাথে দেখা করতে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কারন এই বিষয় সম্পত্তির কালিমা লিপ্ত কাগজ তিনি ঠাকুরের সামনে আনতে চান নি। ঠাকুর কিন্তু তাঁকে দেখতে পেয়ে ভেতরে ডেকে পাঠালেন। তিনি প্রবল আপত্তি জানলে বললেন----" তোমাদের ওতে দোষ হবে না, তুমি ভেতরে এস।"
আবার তিনি একদিন অশুচি বস্ত্রে হঠাত দক্ষিনেশ্বর আসেন। সেদিন তিনি ঠিক করেন ঠাকুরকে স্পর্শ করবেন না। সেদিনও কিন্তু তাঁকে দেখে ঠাকুর বললেন ------"এস, আমার কাছে এসে বসো।"
আবার একদিন তিনি ঠাকুরের জন্য পরম যত্ন করে গরম মিহিদানা নিয়ে আসছিলেন। এদিকে আসার সময় তাঁর পাশে অন্য ধর্মের , বড়ো বড়ো দাড়ি ওয়ালা এক ব্যক্তি বসেছিলেন। তিনি দেবেন্দ্রর সাথে খুব গল্প করতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে দেবেন্দ্র লক্ষ্য করলেন তাঁর মুখ থেকে সমানে থু থু নির্গত হয়ে মিহিদানার প্যাকেটে পড়ছে। খুব মনটা খারাপ হয়ে গেল তাঁর। ঠাকুরের জন্য হাতে করে নিয়ে এলেন, আর তা অপবিত্র হয়ে গেল! কি আর করবেন! এইসব সাত পাঁচ ভাবতে লাগলেন।
দক্ষিনেশ্বর পৌঁছে তিনি প্যাকেটটি এক কোণে রেখে দিলেন। এদিকে অবাক কান্ড! কিছুক্ষণ পরেই ঠাকুরের খুব খিদে পেয়ে উঠল। খাবারের খোঁজে তিনি নিজের ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে আসতেই সেই প্যাকেটটি ঠাকুর দেখতে পেলেন। দেখেই প্যাকেট খুলে একেবারে বালকের মত সেই গরম মিহিদানা পরম তৃপ্তি করে খেতে শুরু করলেন ।
ধন্য ভক্তি দেবেন্দ্র বাবুর। তিনি কৃপা পেয়েছিলেন ঠাকুরের। তাই তো ঠাকুর কোনো দোষ ধরেন নি। প্রণাম নাও ঠাকুর। কৃপা কর সকলকে
==========================