Monday, September 12, 2022

38> || ক্ষণ-চর ||(সংগ্রহীত)

     38> || ক্ষণ-চর  ||


অতি চঞ্চল ও দেখতে সুন্দর এমন এক মানুষ এক  ট্রেন থেকে নামলো, কিন্তু তাকে আবার আরেক ট্রেনে উঠতে হবে একটু পরে, বোধ হয় 20 মিনিট পরেই আসবে পরবর্তী ট্রেন । সেই কারণে মাঝখানে সে অপেক্ষা করার জন্য ওয়েটিং রুমে ঢুকলো। 

ওয়েটিং রুমে ঢুকেই তার চোখ পড়ল রুমের লাইট টি নষ্ট। তাই সে একটি এনার্জি বাল্ব কিনে লাগালো। তারপর খেয়াল করলো রুমের ফ্লোরে ময়লা, তাই একটি ঝাড়ু কিনলো, এবং সে রুমটি ঝাড়ু দিলো। তারপর সে খেয়াল করলো রুমের বসার চেয়ারগুলো বেশি একটা আরাম দায়ক নয়, তাই সে একটি আরাম দায়ক চেয়ার কিনলো। এখন সে রুমটি সাজানোর জন্য কিছু জিনিস কিনে রুমটি সাজালো।

এখন সে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেল, তাই একটু বিশ্রাম দরকার  এবং তার  আরাম দায়ক চেয়ারে বসতে যাচ্ছে এই মূহুর্তে হঠাৎ করেই ট্রেনের হর্ন শুনতে পেল এবং সে ট্রেনে উঠার জন্য রুম থেকে চলে গেল এবং ট্রেনে বসে তার গন্তব্য স্থানে চলে গেল.......আপনি ভাবছেন এই লোকের চেয়ে বোকা লোক আর পৃথিবীতে নেই।  

কিন্ত আপনি কি জানেন এই লোকটি কে?

এই লোক টি আর কেউ নয়  

আপনি - আমি!!!

অবাক হলে ও এটাই সত্য আমরাও পৃথিবীতে এসেছি সামান্য সময়ের জন্য। 

এখানে,,

১ম ট্রেন আমাদের জন্ম....

২য় ট্রেন  আমাদের মৃত্যু এবং আমাদের গন্তব্য  ( স্বর্গ  অথবা নরক )।। 

আর জগতের  জীবন  হচ্ছে ওয়েটিং রুম।।

যেখানে আমরা মাত্র  কিছু সময়  থাকবো। 

অথচ এই পৃথিবীর  জীবনকেই এমন ভাবে সাজাচ্ছি। 

যে আমরা ভুলেই গেছি আমাদের মৃত্যু খুব সন্নিকটে এবং আমাদের এই সাজানো গোছানো  দুনিয়ার সব কিছু ছেড়ে মৃত্যু নামক ট্রেনে চড়ে চলে যেতে হবে।

আমরা এই ওয়েটিং রুমটি সাজিয়ে কয় মিনিট ভোগ করতে পারবো.........!!! 

ঈশ্বর  আমাদের সবাইকে জগতের মোহ কাটিয়ে স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার  খোরাক যোগাড় করার মনমানসিকতা দান করুন ..

       "সংগ্রহীত"

    <---আদ্যনাথ রায় চৌধুরী--->

==========================


Saturday, September 3, 2022

37>|| ভগবান ভালবাসার কাঙাল ||(সংগ্রহীত)

   37>|| ভগবান ভালবাসার কাঙাল ||


"দ্বাপর যুগের শেষ লগ্ন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হবে। চারিদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময়ে দেবর্ষি নারদ শ্রীকৃষ্ণের কাছে এসে বললেন, "প্রভু সবাই বলছে, আপনি পান্ডবদের পক্ষ গ্রহন করে, কৌরবদের সাথে পক্ষপাতীত্ব করছেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হাসলেন, কিছু বললেন না। তিনটি মালা নিয়ে দেবর্ষি নারদের হাতে দিলেন। বললেন, "দুই পক্ষে যাবে এই মালা তিন জনকে পরাবে। কাকে পরাবে? একটা পরাবে উত্তম জনকে, একটা মধ্যম জনকে আর একটা অধম জনকে।"

দেবর্ষি নারদ মালা তিনটি নিয়ে কৌরবদের কাছে আসলেন ও মালার কথা বললেন। দুর্যোধন সভায় বললেন, "আমি উত্তম, আমার ভাই দুঃশাসন মধ্যম। আর অধম সভায় যে কেউ হতে পারে।"

"কিন্তু কেউ অধম হতে চাইলো না। তখন রাস্তা থেকে এক জেলেকে ডাকা হলো, অধম স্বীকার করে মালা নিতে। জেলে বলল, "ছোট আছি ছোট থাকবো কিন্তু হীন হতে পারবো না।"

"তিন জনকে না পাওয়ায় দুর্যোধন মালা পেল না। এবার দেবর্ষি নারদ যুধিষ্ঠিরের সভায় গেলেন। মালার কথা ও তিন জনের কথা বলতেই যুধিষ্ঠির বললেন, "দেবর্ষি, পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঐ আসনে বসেন। উত্তম মালা ওখানে থাকুক। মধ্যম মালাটা আপনার। কারণ আপনি ভক্তশ্রেষ্ঠ। আর অধম তো আপনার সমানে আমি যুধিষ্ঠির অধম।"

"দেবর্ষি নারদ ভগবানের কাছে ফিরে এলেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, "ওখানে দুর্যোধন প্রধান। আমার স্থান নেই। যুধিষ্ঠিরের ওখানে আমার স্থান পাতা আছে। আমি আর কোথায় যাবো, এবার তুমিই বলো? তাই পান্ডবের সাথে আছি। ওরা আমাকে বড় ভালবাসে।"


"ভগবান ভালবাসার কাঙ্গাল। ভালবাসা ছাড়া আর কিছু চাই না ভগবানের। ভালবাসাতে মা যশোদার কাছে বাঁধা। ভালবাসাতে গোপীদের কাছে  ঘুরে ফিরে বার বার যান। ভালবাসাতে চিরদিন বাঁধা ভগবান। আর এই  একনিষ্ঠ ভালবাসাই হলো শুদ্ধ ভগবদ্ ভক্তি"।

          ( সংগ্রহীত)

    <-----আদ্যনাথ রায় চৌধুরী---->

============================


Friday, September 2, 2022

36>|| ভগিনী ঋণ=জগদীশচন্দ্র বসু ও নিবেদিতা || ||

  36>||  ভগিনী ঋণ=জগদীশচন্দ্র বসু ও নিবেদিতা ||


এক অজানা কাহিনী৷   

"ভগিনী ঋণ" ও একজন বিজ্ঞানীর চোখে জল! 

 ১৯০০ এর শেষের দিকে  প্যারিসে জগদীশ চন্দ্র বসুর  বিজ্ঞান কংগ্রেসে পেপার পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার চরম বিরোধিতা করেছিল।

 একমাত্র  নিবেদিতার চেষ্টায় জগদীশ  বোস গেলেন সেই বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগদান করতে।

এ কাজে নিবেদিতাকে  সহায়তা করেছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত মানুষ  প্যাট্রিক গেডেস। 

 এই সেই প্যাট্রিক গেডেস যিনি জগদীশ চন্দ্র  বসুর  জীবনী লিখেছিলেন।


প্যারিসের বিজ্ঞান কংগ্রেস ছিল জগদীশ বসুর জীবনে একটা  টার্নিং পয়েন্ট। 

এখান থেকেই  সারা বিশ্বে তাঁর নাম ছড়িয়ে গেল।

সেই সম্মেলনে ভাষণ শুনতে স্বামী বিবেকানন্দ  ও নিবেদিতা দুজনেই সেদিন উপস্থিত ছিলেন। 


স্বামী বিবেকানন্দ সেই ভাষণের  বিবরণ দিয়েছেন তাঁর লেখায়,

"... এক যুবা যশস্বী বীর আমাদের মাতৃভূমির নাম ঘোষণা করলেন, সে - জগৎ প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক

জে সি বোস...ভারতবাসী,বঙ্গবাসী, ধন্য বীর!" 

 (তথ্য সূত্র,   স্বামীজির বাণী ও রচনা, ৬ষ্ঠ খন্ড, উদ্বোধন কার্যালয়, পৃ: ৯৭)


১৯০২ সালে অক্টোবর মাসে   একটি বই প্রকাশ হওয়া মাত্রই বিশ্বে আলোড়ন পড়ে গেল।

বইটির নাম হল, "রেসপন্স ইন দ্য লিভিং এ্যান্ড নন লিভিং।"

এই সেই গবেষণামূলক বই যার মাধ্যমে জে সি বোস দেখিয়েছিলেন উদ্ভিদের প্রাণ আছে।

আরো দুটি বই, " প্ল্যান্ট রেসপন্স এবং "কম্পারেটিভ ইলেকট্রোফিজিওলজি।"

এই বইগুলির পান্ডুলিপি পরিমার্জন, সম্পাদনা প্রভৃতি যাবতীয় কাজ নিবেদিতা একা করেছিলেন।

বইগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর  জগদীশ বসুর গবেষণার বিষয় ছড়িয়ে গেল।

অবশ্যই বিজ্ঞানের মূল বিষয়টা ছিল  জে সি বোসের। 

কিন্তু বাকি কাজগুলো সব নিবেদিতা একা করেছিলেন।


জগদীশ বসুকে বিশ্বমাঝারে পরিচিত করার ক্ষেত্রে নিবেদিতা একটি স্মরণীয় অবদান রেখে গেলেন। 

 এ কাজ তিনি করেছিলেন  ভারতবর্ষকে  ভালবেসে। 


নিবেদিতা আর একটি অসাধারণ কাজ করেছিলেন।

নিবেদিতা জগদীশ বসুর "বোস ইন্সটিটিউট" গড়ে তুলতে  অর্থের  ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

নিবেদিতাই  সারা বুলকে রাজী করিয়েছিলেন অর্থ দেওয়ার বিষয়ে।

বোস ইনস্টিটিউট এখন ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানকেন্দ্র।

এই বিশাল কাজটি করে গেলেন নিবেদিতা। 

যা খুব কমজন মানুষ এই খবর রাখেন।


বোস ইনস্টিটিউট নিবেদিতা দেখে যেতে পারেননি।

১৯১১ সালের সূচনায় জগদীশ বসু ও লেডি অবলা বসুর আমন্ত্রণে নিবেদিতা বিশ্রামের জন্য দার্জিলিং গেলেন।

সেখানে তিনি কঠিন আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাগ্রহণ করলেন।

ডাক্তার নীলরতন সরকার ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের চিকিৎসা সত্বেও রোগের কোন উপশম লক্ষিত হল না 

বসু দম্পতি দিনরাত পরিচর্যায় নিযুক্ত রইলেন।

আপ্রান চেষ্টা করেছিলেন জগদীশ বসু, নিবেদিতাকে বাঁচানোর জন্যে।

পারলেন না বাঁচাতে।

মাত্র ৪৪ বছরে নিবেদিতা চলে গেলেন!

নিবেদিতা চলে যাচ্ছেন। 

আর একজন বিজ্ঞানীর চোখে তখন জলে  ভরে উঠছে।

আজ তাঁর জীবনের একটি পরম সম্পদ হারিয়ে গেল!

 এ জীবনে তিনি কোনদিন "ভগিনী ঋণ" শোধ করতে পারবেন না।


তাই বোস ইন্সটিটিউট উদ্বোধন হওয়ার একমাস আগে জগদীশ বসু নিবেদিতার বোন, 

মে উইলসনকে এক চিঠিতে লিখছেন,

" বসু বিজ্ঞান মন্দিরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটি ফোয়ারা ও জলধারা।

আর তার পাশেই থাকবে প্রদীপ হাতে প্রার্থনারত এক নারীর রিলিফ মূর্তি।

এখানেই বেদির নীচে রাখা থাকবে নিবেদিতার চিতাভস্ম।

আর এই  বেদির পাশে রোপন করা হবে একটি শেফালি গাছের চারা।

সেই গাছ থেকে রোজ ফুল

 ঝরে পড়বে বেদীর ওপর।

এই শেফালি গাছটির বীজ নিবেদিতা নিয়ে এসেছিলেন অজন্তা থেকে।"

(তথ্য/নিবেদিতা লোকমাতা/ ডক্টর  শঙ্করীপ্রসাদ বসু, ১ম খন্ড, ২য় পর্ব,পৃ: ৩৮০)


 দার্জিলিং- এ  নিবেদিতার সমাধি মন্দিরে লেখা আছে এই কথাগুলি,

" HERE LIES SISTER NIVEDITA WHO GAVE HER ALL TO INDIA. "


এমন " ভগিনী ঋণ"  কি কখনও শোধ করা যায়?

@ পীযূষ দত্ত। 


তথ্যসূত্রঃ

" ভারত চেতনায় ভগিনী নিবেদিতা।"/ উদ্বোধন কার্যালয়। 

শঙ্করীপ্রসাদ বসু/ "নিবেদিতা লোকমাতা".

ভগিনী নিবেদিতা/ স্বামী তেজসানন্দ/ উদ্বোধন 

স্বামীজির রচনাবলী /

 নিবেদিতার লেখা চিঠি মিস ম্যাকলাউড, সারা বুলকে।

       ( সংগ্রহীত )

     <----আদ্যনাথ রায় চৌধুরী-->

============================