35>|| ঈশ্বর চাইলে কী না হয় ||..
ভক্ত প্রিয় ভগবান,
নাকি ভগবান প্রিয় ভক্ত ------
এই কথা টুকু বোঝাতেই এই গল্প কথা।
মনে হয় গল্প কথা,
কিন্তু প্রকৃত সত্য কথা।
- ভক্ত যেমন ভগবানকে ছাড়া থাকতে পারে না,ভগবানও তেমনি ভক্ত ছাড়া থাকিতে পারে না -"যে যথা মাম প্রপদ্যে,তাংস্তথৈব ভজামি অহম্"-গীতা।
গোরক্ষপুর গীতাভবনের এক সাধুর কাছে শুনেছিলাম একটি দিব্য ঘটনা -
" একবার এক ব্রজের সন্তদের দিব্যমন্ডলী ট্রেনে করে প্রয়াগ তীর্থে যাত্রা করে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন। তার মধ্যে এক সন্তজী গিরিরাজশীলা গোপাল বিগ্রহ সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
অনেক সন্তদের সাথেই ঠাকুরজীর শীলা বিগ্রহ সবসময়ই থাকে।
সন্তজী সেই শীলা বিগ্রহের খুব প্রেম ভক্তিতে সেবা করতেন - নিত্য স্নান করিয়ে পূজা করে কীর্তন করিতেন,ভাগবত পড়িতেন।
আজ রেলে যাত্রা করছেন সেই সন্ত। সকলে মথুরা স্টেশনে নামবেন। যেতে যেতে রেলে সৎসঙ্গে কৃষ্ণ কথা ভাগবত প্রসঙ্গ শুরু হল সকলে তা নিয়ে ভাবুক আলোচনা করছেন।ওই কামরার অনেক যাত্রী ভাগবত কথা শুনছেন।
সন্তমন্ডলী মথুরাতে নামবেন।ট্রেন মথুরার কাছে এসে গেছে ।কিন্তু এমন ভাগবত কথা চলছে তাদের খেয়াল নেই কখন মথুরা এসে গেছেন।
মথুরা থেকে ট্রেন ছেড়েই যাবে এমন সময় এক যাত্রী সেই সন্তদের বলল "আপনারা নামবেন না? এই তো মথুরা স্টেশন!"
সকল সন্তরা তাড়াতাড়ি করে মথুরাতে নামলেন। তাড়াতাড়ি করলেন সাধুরা। এত তাড়া ছিল যে সাধুর কাছে গিরিরাজ শীলা বিগ্রহ ছিল,ট্রেনে উপরের বার্থে কাপড়ের উপর বসানো ছিল,সেটা ভুলে ফেলে রেখেই মথুরা স্টেশনে অন্য সাধুদের সাথে সেই ভাগবত প্রসঙ্গের মধুর কথা বলতে বলতে নেমে গেলেন। এমন ভাগবত আলোচনা হচ্ছিল যা একবারে ঘরে গিয়ে শেষ হল।
সাধুজী কুটিয়ায় ফিরে স্নান করে তিলক করে রন্ধন সেরে বিগ্রহ সেবার জন্য আসলেন। দেখলেন শীলা বিগ্রহ নাই। "আমার ঠাকুরজী কোথায় ?"
সাধুজী খুঁজতে লাগলেন। কাঁদতে লাগলেন। অন্য সব সাধু আজ সেই সাধুজীর বিগ্রহ ব্যাকুল হয়ে খুঁজেছেন।পাচ্ছেন না। সেই সাধু পাগলের মত প্রাণপ্রিয় গিরিরাজ গোপাল শীলা বিগ্রহ খুঁজছেন সব জায়গায় ।
তখন কেউ একজন বললেন, "নতুন শীলা বিগ্রহ এনে দেব আপনাকে।"
সাধুজী বললেন, " এমন হয় নাকি। আমি তো ওনার সাথে বড় হলাম। উনি আমাকে এত দিন সামলালেন। কি করে তাঁকে পরিত্যাগ করি।উনিই আমার প্রাণ।আমার তো ওকেই চাই " -বলে কেঁদে চলেছেন।
তখন এক সাধুজী এ সাধুকে বললেন, "এমন না তো যে ট্রেনেই আছেন ঠাকুরজী। ওখানে আপনি নিশ্চয়ই ফেলে এসেছেন ঠাকুরজিকে।"
সাধুজী বললেন; "হ্যাঁ এটা হতে পারে আমি তাড়াতাড়িতে ফেলে আসলাম আমার প্রানের গিরিরাজ গোপাল বিগ্রহ কে।
কিন্তু এখন তো পাঁচ ছয় ঘন্টা হল। ট্রেন কোথা থেকে কোথায় চলে গেল। আর কি পাব শীলা বিগ্রহকে।"
তবুও প্রাণের টানে সেই সাধু দৌড়ে স্টেশন পৌঁছালেন। স্টেশন মাস্টারকে বললেন, "আপনি আমাকে সাহায্য করুন। ট্রেনে আমার এক গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়ে গেছে" স্টেশন মাস্টার বললেন, "কি হল আমাকে বলুন। কি রয়ে গেছে ট্রেনে?"
সাধুজী বললেন, "আমার প্রাণ প্রিয় ঠাকুরজি গিরিরাজ গোপাল রয়ে গেছে গাড়িতে।আমি কিভাবে ফিরে পাবো?"
স্টেশন মাস্টার বললেন, "ট্রেনের নম্বর বলুন?"
তখন সন্তজী তখন নিজের টিকিট দিলেন। টিকিট দেখে স্টেশন মাস্টার অবাক,চোখ ছলছল করে উঠলো। সাধুজীকে দণ্ডবত প্রণাম করলেন আর আনন্দে ভক্তিতে কাঁদতে লাগলেন। সাধুজী কিছু বুঝতে না পেরে বললেন, "কি হল আপনি কাঁদছেন কেন?"
স্টেশন মাস্টার বিস্ময়ের সাথে বললেন, "সাধুজী এই ট্রেন প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে।বাঁশি বাজিয়ে ছাড়ার সময় কি জানি কি হল, আর ট্রেন যাচ্ছে না। ড্রাইভার আর কর্মকর্তা সকলে অনেক পরীক্ষা করলেন। কোন অসুবিধা ধরা পড়েনি ট্রেনে। তবুও ট্রেন চলছে না।প্রতিটি ইলেক্ট্রিক তার,ইঞ্জিন সব পরীক্ষা হল। তবুও কোন অসুবিধা খুঁজে পেলেন না। কেন যে ট্রেন যাচ্ছে না বুঝতে পারল না।এখন বুঝছি ভক্তের জন্য ভগবান আজ ট্রেন দাঁড় করিয়ে রেখে এই কাজ করলেন"।
সাধুজী কাঁদতে লাগলেন আর বললেন,- " বা !! আমার প্রিতম গিরিরাজগোপাল আজ আমার জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছে ট্রেন আটকে দিয়ে।"
প্রেম ভক্তিতে আজ সাধুর কান্না যেন আর থামেনা।সেই সাধু ছুটে ট্রেনে উঠিলেন।উপরের সিটে ঠাকুরজিকে তেমনিই বসে থাকতে দেখলেন।যেন তিনি তাঁর প্রিয় ভক্তকে হারিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছেন। আর অপেক্ষা করছেন যেমন করে ভিড় মেলায় ছোট্ট বাচ্চা তার মাকে হারিয়ে ব্যাকুল হয়ে কাঁদে,আজ তেমনি ভগবানও শীলা বিগ্রহ রূপে বসে ভক্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।
শীলাবিগ্রহ বুকে জড়িয়ে নিয়ে ট্রেন থেকে সাধুজী নামলেন। ড্রাইভার ট্রেন চালাতে লাগলেন -ট্রেন চলতে লাগল।সত্যিই সকলে অবাক!!! "
দুনিয়ার মানুষ বলে এই দুনিয়াকে ভালবাসতে।কিন্তু সাধুরা বলেন ভগবানকে ভালবাসতে।কেন বলে সেটা ভক্তগণই বোঝেন!!!
জয় ভক্তপ্রিয় ভগবান।
জয় ভক্ত সাধুসন্তগণ।
জয় জয় শ্রীরাধে।
" সংগ্রহীত"
<---আদ্যনাথ রায় চৌধুরী--->
========================
No comments:
Post a Comment